অবস্থা (হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র)
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অবস্থা হচ্ছে বেদান্ত দর্শনের একটি প্রত্যয়। একটি সংস্কৃত শব্দ হলেও বাংলা ভাষাতে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উপনিষদের শাখা গ্রন্থ মান্ডূক্যোপনিষদে অবস্থার চারটি স্তর সংজ্ঞায়িত হয়েছে। সেগুলো হলো : জাগ্রৎ, স্বপ্ন, সুষুপ্তি (গভীর নিদ্রা) এবং তুরীয় (সম্পূর্ণ অচেতন অবস্থা)। যোগের মাধ্যমে তুরীয় অবস্থা লাভ করতে হয়। এটি সমাধি বা মোক্ষ নামেও পরিচিত। অবস্থার চারটি স্তর দ্বারা মানব জীবনের চারটি স্তর কেও বোঝানো হয়ে থাকে: বাল্য, যৌবন, প্রৌঢ় এবং বার্ধক্য।[1] হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে কোনও নির্দিষ্ট সময়ে গ্রহ দ্বারা অর্জিত অবস্থা নির্ধারণের জন্য এই পদ্ধতিগুলি বিকশিত করেছে। পরাশর তাঁর ‘বৃহৎ পরাশর হোর শাস্ত্র’ গ্রন্থে ছয় ধরনের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন।
অবস্থা মূলত শক্তির গৌণ উৎস। একটি গ্রহ যখন মৃত অবস্থায় নিজস্ব উজ্জ্বলতার চিহ্নে থাকে তখন সেই অবস্থাটি ঐ গ্রহটি বিকল হওয়ার চেয়ে ভাল।[2] পরাশর তার ‘বৃহৎ পরাশর হোর শাস্ত্র’ বইটিতে গ্রহের অবস্থার উল্লেখযোগ্য রূপভেদ সমূহ উল্লেখ করেছেন:
সমস্ত মানক হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের বইগুলোতে পূর্বে উল্লিখিত অবস্থাগুলো শনাক্ত করার পদ্ধতি এবং সেইসাথে সেই অবস্থাগুলোতে প্রাপ্ত গ্রহগুলির ফলাফল বর্ণিত রয়েছে।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে কোন একটি গ্রহ তার যেকোনো অবস্থা ০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে। একই অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন ডিগ্রিতে থাকার ফলে সেই গ্রহের প্রভাব বিভিন্নভাবে প্রতিফলিত হবে। আবার কোন রাশিতে কোন ডিগ্রী তে অবস্থান করে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ কারণ একই ডিগ্রিতে অবস্থান করার পরেও ভিন্ন রাশিতে থাকায় সেই ডিগ্রিতে গ্রহের রূপ ভিন্ন থাকে।
এই নিয়ম অনুসারে কোন গ্রহ কত ডিগ্রীতে আছে তা নিরূপণ করে বলা যায় গ্রহটিকে বাল্য, কুমার, যুবা, বৃদ্ধ নাকি মৃত অবস্থায় আছে।
গ্রহটি যদি বিষম রাশিতে (বেজোড় সংখ্যক অর্থাৎ, ১,৩,৫,৭,৯ ও ১১ রাশিতে) থাকে তাহলে:
আর যদি গ্রহটি সম রাশিতে(জোড় সংখ্যক, অর্থাৎ, ২,৪,৬,৮,১০,১২ রাশিতে অবস্থান করে) তাহলে:
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী কারও রাশিচক্রে গ্রহ যদি পারো অবস্থায় থাকে তাহলে সে ব্যক্তির অপরিপক্কতার প্রমাণ দেয়। তবে তা তার ক্রমান্বয়ে উন্নতি পূর্বাভাস দেয়। অন্যদিকে কুমার অবস্থায় তারপরিপক্কতার ঘোষণা করে তবে তার আরও উন্নতি পূর্বাভাস দেয়। আর যুবা অবস্থায় যেহেতু কোন গ্রহ সর্বোচ্চ শক্তিতে থাকে তাই কারো ক্ষেত্রে যদি গ্রহটির যুবা অবস্থায় থাকে তাহলে তার জন্য খুবই সুসংবাদ। কারণ এই অবস্থায় সবকিছুই তার অনুকূলে থাকে। সর্বক্ষেত্রেই তার উন্নতি লাভের সুযোগ বিদ্যমান থাকে। আর বৃদ্ধাবস্থা ও মৃত অবস্থান তুলনামূলক কম শক্তিহীন হয়ে পড়ে। আসলে মৃত অবস্থায় গ্রহ প্রায় একেবারেই শক্তিহীন হয়ে যায়। তাই কারও ক্ষেত্রে যদি গ্রহ বৃদ্ধাবস্থায় থাকে তাহলে তার অনেক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর যদি মৃত অবস্থায় থাকে তাহলে তার অমঙ্গলের আশঙ্কা থাকে।[4][5]
হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রে আরও এগারোটি অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছে। যথা:
অর্থাৎ এই অবস্থাগুলোর প্রভাব তাদের অবস্থা বা রূপের অনুরূপ।[6]
দক্ষ জ্যোতিষীরা কোন দশা ব্যবহার না করে শুধুমাত্র গ্রহস্থ অবস্থার ভিত্তিতে সফলভাবেই অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। 'অবস্থা'র কিছু গোপন ও লুকায়িত অর্থ রয়েছে যা একজন জ্যোতিষ অগত্যা ব্যাখ্যা করেছেন।[7] মোগল সম্রাট আকবরের রাজজ্যোতিষী নীলকন্ঠ তাঁর প্রশ্ন তন্ত্র গ্রন্থে বলেছেন যদি দশটি গ্রহীয় অবস্থা পরীক্ষা করে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, তাহলে সেই ভবিষ্যদ্বাণী কখনোই ভুল হবেনা। [8]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.