ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ
অন্তঃকরোটির এক প্রকার রক্তক্ষরণ যা মস্তিষ্কের টিস্যুর ভেতরে সংঘটিত হয় / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ (ইংরেজি: Intracerebral hemorrhage) যা সেরিব্রাল রক্তক্ষরণ নামেও পরিচিত হচ্ছে এক ধরনের ইন্ট্রাক্রেনিয়াল রক্তক্ষরণ যা মস্তিষ্কের টিস্যু বা প্রকোষ্ঠে সংঘটিত হয়।[3] এ ধরনের রক্তক্ষরণের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, একপার্শ্বীয় দূর্বলতা (শরীরের কোনো এক পাশের সৃষ্ট দুর্বলতা), বমি করা, খিঁচুনি, চেতনার মাত্রা হ্রাস পাওয়া, এবং ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া।[2] প্রায়শই সময়ের সাথে সাথে উপসর্গের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।[4] কিছু ক্ষেত্রে সাধারণত শরীরে জ্বরও থাকে।[4] এই রক্তক্ষরণ অনেক সময় মস্তিষ্কের টিস্যু ও প্রকোষ্ঠ উভয় অংশেই সংগঠিত হয়।
ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণ | |
---|---|
প্রতিশব্দ | Cerebral haemorrhage, cerebral hemorrhage, intra-axial hemorrhage, cerebral hematoma, cerebral bleed |
হঠাৎ সৃষ্ট ইন্ট্রাসেরিব্রাল রক্তক্ষরণের সিটি স্ক্যান চিত্র, রক্তক্ষরণে পর রক্ত পার্শ্বীয় প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করেছে | |
বিশেষত্ব | নিউরোসার্জারি |
লক্ষণ | মাথাব্যথা, এক-পার্শ্বীয় দুর্বলতা, বমি হওয়া, খিঁচুনি, চেতনার মাত্রা হ্রাস পাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, জ্বর[1][2] |
কারণ | মস্তিষ্কের জখম, অ্যানিউরিজমs, আর্টেরিওভেনাস বিকলাঙ্গতা, মস্তিষ্কের টিউমার[1] |
ঝুঁকির কারণ | উচ্চ রক্তচাপ, অ্যামিলয়ডোসিস, মদ্যাসক্তি, নিম্ন কোলেস্টেরল, রক্ত পাতলাকারক, কোকেইন সেবন[2] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | সিটি স্ক্যান[1] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | ইশ্চেমিক স্ট্রোক[1] |
চিকিৎসা | রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শল্যচিকিৎসা, ভেন্ট্রিকুলার ড্রেইন[1] |
আরোগ্যসম্ভাবনা | ২০% ভালো ফলাফল[2] |
সংঘটনের হার | প্রতি বছর ১০,০০০ জনে ২.৫ জন[2] |
মৃতের সংখ্যা | ৪৪% এক মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন[2] |
এ ধরনের রক্তক্ষরণের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কের জখম বা ট্রমা, অ্যানিউরিজম, আর্টেরিওভেনাস বিকলাঙ্গতা, এবং মস্তিষ্কের টিউমার।[4] তবে হঠাৎ বা স্ততঃস্ফূর্তভাবে এ ধরনের রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে উচ্চ রক্তচাপ এবং অ্যামিলয়ডোসিসের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রয়েছে।[2] ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে আছে মদ্যাসক্তি, রক্তে অস্বাভাবিক কম পরিমাণ চর্বি থাকা বা হাইপোকোলেস্টেরলেমিয়া, রক্তের গাঢ়ত্ব হ্রাসকারী ওষুধের ব্যবহার, এবং কোকেইন সেবন।[2] রোগনির্ণয় সাধারণত সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে করা হয়।[4] এ ধরনের অবস্থা অনেক সময় স্ট্রোকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারে।[1]
সাধারণত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ/আইটিইউ) এ ধরনের জটিলতার চিকিৎসা প্রদান করা হয়।[4] চিকিৎসা সংক্রান্ত নির্দেশাবলীগুলো এ ধরনের জটিলতায় সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ এমএমএইচজি-এ কমিয়ে আনার সুপারিশ করে।[4][5] সম্ভব হলে রক্ত পাতলাকারকের ব্যবহার পাল্টে দেওয়া এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।[4] হাইড্রোসেফ্যালাসের সৃষ্টি হলে তা নিরাময়ে ভেন্ট্রিকুলার ড্রেইন স্থাপনের উদ্দেশ্যে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত নয়।[4] এছাড়াও সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে জমে থাকা রক্ত অপসারণের জন্যও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতি বছর ১০,০০০ লোকের প্রতি ২.৫ জন সেরিব্রাল রক্তক্ষরণের স্বীকার হয়। প্রায় সময়ই পুরুষ ও বয়স্কদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্তের হার বেশি।[2] আক্রান্তদের মাঝে ৪৪% রোগী এক মাসের মধ্যে মারা যান।[2] আর ২০%-এর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল দেখা যায়।[2] এটি এক ধরনের স্ট্রোক এবং ১৮২৩ সালে সর্বপ্রথম স্ট্রোককে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয় যার একটি হচ্ছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে সৃষ্ট স্ট্রোক, এবং আরেকটি হচ্ছে অপর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের কারণে সৃষ্ট স্ট্রোক।[6]