Loading AI tools
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উত্তরাখণ্ড, ভারত, আক্ষরিকভাবে সংস্কৃতে এর অর্থ উত্তর ভূমি বা বিভাগ। উত্তরাখণ্ড নামটি প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে কেদারখণ্ড ও মানসখণ্ডের সম্মিলিত অঞ্চল হিসাবে উল্লেখিত হয়েছে।
উত্তরাখণ্ড उत्तराखण्ड उत्तराखण्डराज्यम् | |
---|---|
রাজ্য | |
উত্তরাখণ্ড চিত্রাবলি: হিমালয়ের কালিন্দী পর্বতে সূর্যোদয় জিম করবেট জাতীয় উদ্যানে বেঙ্গল টাইগার হরিদ্বারের হর কি পৌরিতে গঙ্গা নদী। | |
ডাকনাম: দেবভূমি देवभूमि |
উত্তরাখণ্ড হ'ল ভারতীয় হিমালয় অঞ্চলের মধ্যভাগের জন্য প্রাচীন পৌরাণিক শব্দ। এর শিখর এবং উপত্যকাগুলি প্রাচীন যুগে দেবদেবীদের বাসস্থান এবং গঙ্গা নদীর উৎস হিসাবে সুপরিচিত ছিল। প্রায় ২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে খস আর্য জনজাতির লোকেরা ককেশাস পর্বতমালা থেকে হিমালয় সীমার মধ্যে প্রবেশ করেছিল। যেখানে বৈদিক আর্যরা দক্ষিণ, পশ্চিম এবং পূর্বের রাস্তায় এসেছিল, খস আর্যরা ইউরোপের ককেশাস পর্বতমালা থেকে সম্পূর্ণ নতুন পায়ে চলা পথে হিমালয়ের উত্তরের পথ ধরে উত্তর-পশ্চিম হিমালয় পর্যন্ত এসেছিল। বিপুল সংখ্যায় হিন্দু তীর্থস্থানগুলির উপস্থিতির কারণে এটিকে প্রায়শই "দেবতাদের ভূমি" (দেবভূমি) বলা হয়। উত্তরাখণ্ড প্রাচীনকাল থেকেই দেবভূমি নামে পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে পৌরব, কুষাণ, কুনিন্দ, গুপ্তবংশ, কাত্যুরি, পাল বংশ, চাঁদরাজারা, এবং পারমার বা পানওয়ার, শাহ এবং ব্রিটিশ উত্তরাখণ্ডকে ঘুরে ফিরে শাসন করেছে।[1]
অঞ্চলটি স্থাপন করেছিল কোল জনজাতি, তারা মুন্ডা ভাষা পরিবারের অন্তর্গত একটি ভাষায় কথা বলা জনগোষ্ঠী। পরে কোল সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে বৈদিক যুগে উত্তর দিক থেকে আগত ইন্দো-আর্য (খস) উপজাতি যোগ দিয়েছিল। সেই যুগে, আজকের উত্তরাখণ্ড, ঋষি এবং সাধুদের বিচরণস্থান হিসাবেও কাজ করেছে। এটি বিশ্বাস করা হয় যে মহর্ষি ব্যাসদেব এখানে মহাভারত রচনা করেছিলেন, এবং আরো বিশ্বাস করা হয় পাণ্ডবেরা এই অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিলেন এবং শিবির স্থাপন করেছিলেন। গাড়োয়াল এবং কুমায়ুন অঞ্চলের শাসক হিসেবে প্রধান রাজবংশগুলির মধ্যে প্রথম ছিলেন খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে কুনিন্দ বংশ। তাঁরা শৈবধর্ম পালন করতেন। তাঁরা পশ্চিম তিব্বতের সাথে লবণের বাণিজ্য করতেন। পশ্চিম গাড়োয়ালের দেরাদুনের কাছে কলসিতে পাওয়া অশোকের আদেশ থেকে এটি স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে যে বৌদ্ধ ধর্ম এই অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল। কোল সম্প্রদায় শামানিক (ওঝা) ধর্ম অনুশীলন করত এবং হিন্দু ঐতিহ্য হিসাবে লোক হিন্দুধর্ম আবির্ভূত হয়েছিল, যেটি হিন্দু গোঁড়ামি থেকে একেবারেই আলাদা ছিল। তবে, শঙ্করাচার্যের প্রচুর পরিশ্রম এবং সমতল থেকে আগত অভিবাসীদের কারণে গাড়োয়াল এবং কুমায়ুনে সামান্য হলেও ব্রাহ্মণ্য শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল। চতুর্থ শতাব্দীতে, কুনিন্দরা নাগ বংশের কাছে পরাজয় স্বীকার করেছিলেন। সপ্তম থেকে চতুর্দশ শতকের মধ্যে, খস বংশোদ্ভূত কাত্যুরি রাজারা কুমায়ুনের কাত্যুর (বর্তমান কালের বৈজনাথ) উপত্যকার বিস্তৃত অঞ্চলে বিভিন্ন পরিমাণে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তিব্বতী-বর্মী গোষ্ঠীর অন্যান্য ব্যক্তি যারা কিরাত নামে পরিচিত ছিল, মনে করা হয় যে তারা উত্তর পার্বত্য অঞ্চলের পাশাপাশি পুরো অঞ্চল জুড়ে ছোটো ছোটো অংশে বসবাস করত। মনে করা হয় তারা আধুনিক যুগের ভোটিয়া, রাজী, বুক্সা এবং থারু জাতির পূর্বপুরুষ।[2]
জওনসার-বাওয়ার ছিল গাড়োয়াল রাজত্বের একটি অংশ। এটি গাড়োয়ালের সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় কিছু সময় এটিকে সিরমৌর শাসকরা দখল করেছিলেন। তবে গাড়োয়াল রাজারা সিরমৌর শাসককে পরাজিত করেন এবং আবার জওনসার-বাওয়ার গাড়োয়ালের অংশে পরিণত হয়। আমরা এখনও জওনসারি ভাষাতে সিরমৌর ভাষার শব্দের অনুপ্রবেশ বুঝতে পারি এবং জওনসারে গাড়োয়ালি উপাধি। ১৮২৯ সালে, জওনসার-বাওয়ারকে চকরাতা তহশিলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১৮১৪ সালের গোর্খাদের সাথে যুদ্ধের পরে ব্রিটিশরা দেরাদুনের সাথে এটি জয় না করা অবধি এটি সিরমুরের পাঞ্জাব রাজ্যের একটি অংশ ছিল।[3]
১৮৬৬ সালে, ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার আগে, পুরো অঞ্চলটি জওনসার-বাওয়ার নামে পরিচিত ছিল, এবং বিশ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত এই নামটি অঞ্চলটির জন্য জনপ্রিয় ভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। [4] যদিও পশ্চিমী হিন্দি পার্শ্ববর্তী বেশিরভাগ পার্বত্য অঞ্চলে জনপ্রিয়, মধ্য পাহাড়ি গোষ্ঠীর কথিত একটি ভাষা হল জওনসারি, যা এই অঞ্চলের বেশিরভাগ লোক বলে।[5]
মধ্যযুগীয় সময়কালে, অঞ্চলটি পশ্চিমে গাড়োয়াল রাজত্ব এবং পূর্বে কুমায়ুন রাজত্বের অধীনে একীভূত হ'য়ে ছিল। ১৩শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে, চাঁদ রাজাদের অধীনে কুমায়ুন সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। চাঁদ রাজারা ভারতের সমভূমি থেকে এসেছিলেন। এই সময়কালে, শিক্ষা এবং চিত্রকলার নতুন দিকগুলি (পাহাড়ি শিল্প বিদ্যালয়) বিকশিত হয়েছিল।[6] আধুনিক যুগের গাড়োয়াল একইভাবে পারমার/পানওয়ার রাজাদের শাসনে একত্রিত হয়েছিল। এই রাজবংশের পূর্বপুরুষেরাও ব্রাহ্মণ এবং রাজপুতদের সাথে গণ-অভিবাসন করে সমভূমি থেকে এসেছিলেন।[7] ১৭৯১ সালে, নেপালের বিস্তারশীল গোর্খা সাম্রাজ্য, কুমায়ুন রাজত্বের আলমোড়ায় ঢুকে পড়ে। ১৮০৩ সালে, গাড়োয়াল রাজত্বও গোর্খাদের দখলে চলে যায়। ১৮১৬ সালে ইঙ্গ-নেপালি যুদ্ধের সমাপ্তির সাথে, তেহরি থেকে গাড়োয়াল রাজত্বের একটি অংশকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল, এবং পূর্ব ব্রিটিশ গাড়োয়াল এবং কুমায়ুন সুগৌলির সন্ধির অংশ হিসাবে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে তেহরি রাজত্বকে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে একীভূত করা হয়, যেখানে গাড়োয়াল এবং কুমায়ুন বিভাগ নিয়ে উত্তরাখণ্ড রচনা করা হয়েছিল।[8] ১৯৯৮ সাল অবধি উত্তরাখণ্ড নামটি এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হত, কারণ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিশেষত উল্লেখযোগ্যভাবে উত্তরাখণ্ড ক্রান্তি দল (উত্তরাখন্ড বিপ্লবী দল, স্থাপিত ১৯৭৯) এর পতাকাতলায় পৃথক রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। যদিও আগেকার গাড়োয়াল এবং কুমায়ুনের পূর্ব পার্বত্য রাজ্যগুলি ছিল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, কারণ বিভিন্ন প্রতিবেশী নৃগোষ্ঠীর সান্নিধ্যের কারণে তাদের ওপর ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব ছিল বিভিন্ন, কিন্তু তাদের ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য এবং পরিপূরক প্রকৃতি দুটি অঞ্চলের মধ্যে দৃঢ় বন্ধন তৈরি করেছিল।[9] এই দৃঢ় বন্ধন উত্তরাখণ্ডের নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তি তৈরি করেছিল। ১৯৯৪ সালে এটি উল্লেখযোগ্য গতি অর্জন করেছিল, যখন পৃথক রাজ্যের দাবি (ভারত সরকারের অধীনে) স্থানীয় জনসাধারণের পাশাপাশি জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রায় সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল।[10] এই সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ছিল ১৯৯৪ সালের ১ অক্টোবর রাতে রামপুর তিরাহা গুলি কাণ্ড, এর ফলে গণ বিক্ষোভ শুরু হয় এবং অবশেষে ২০০০ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যটি বিভাজিত হয়ে যায়।[11]
তবে উত্তরাঞ্চল শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল যখন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার ১৯৯৮ সালে রাজ্য পুনর্গঠনের একটি নতুন পর্ব শুরু করেছিল এবং এই নামটি চালু করেছিল। বলা হয়, কম বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারণার জন্য এই নামটি বেছে নেওয়া হয়। ভিন্ন ভিন্ন সক্রিয় রাজনীতিক কর্মিবৃন্দের মধ্যে এই নাম পরিবর্তন প্রবল বিতর্কের সৃষ্টি করে, যাঁরা এটিকে রাজনৈতিক কাজ হিসাবে দেখেছিলেন,[12] তবে তাঁরা ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মতো সফল হতে পারেন নি। ঝাড়খণ্ড রাজ্যটি বনাঞ্চল নাম চাপিয়ে দেওয়ার জন্য একই ধরনের পদক্ষেপকে সফলভাবে ব্যর্থ করেছিল। তবুও উত্তরাখণ্ড নামটি এই অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ছিল, যদিও সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য উত্তরাঞ্চল নামটি প্রচারিত করা হত।
২০০৬ সালের আগস্টে, ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা উত্তরাঞ্চল রাজ্য বিধানসভা এবং উত্তরাখণ্ড আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় সদস্যদের উত্তরাঞ্চল রাজ্যের নাম পুনরায় উত্তরাখণ্ড করার চার বছরের পুরানো দাবিতে সম্মতি জানায়। ২০০৬ সালে অক্টোবরে রাজ্য বিধানসভা দ্বারা এই বিষয়ে আইন পাস করা হয়েছিল,[13] এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি এনেছিল। বিলটি সংসদে পাস হয় এবং ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আইনে স্বাক্ষরিত হয়। সেই থেকে উত্তরাখণ্ড ভারতের একটি রাজ্যকে বোঝায়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.