শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

উত্তর-পূর্ব ভারত

উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর সমষ্টি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

উত্তর-পূর্ব ভারতmap
Remove ads

উত্তর-পূর্ব ভারত ভারতের এক ভৌগোলিক অঞ্চল ও প্রশাসনিক বিভাগ[] এটি অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়সিকিম—এই আট রাজ্য নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে প্রথম সাত রাজ্য সেভেন সিস্টার্স এবং সিকিম "ব্রাদার" হিসাবে পরিচিত।[]

দ্রুত তথ্য উত্তর-পূর্ব ভারত, দেশ ...

ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ৫,১৮২ কিমি (৩,২২০ মাইল) দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে এবং এটি তার মোট ভৌগোলিক সীমান্তের প্রায় ৯৯%। উত্তরে চীনের সাথে ১,৩৯৫ কিমি (৮৬৭ মাইল) দীর্ঘ, পূর্বদিকে মিয়ানমারের সাথে ১,৬৪০ কিমি (১,০২০ মাইল) দীর্ঘ, দক্ষিণপশ্চিমে বাংলাদেশের সাথে ১,৫৯৬ কিমি (৯৯২ মাইল) দীর্ঘ, পশ্চিমে নেপালের সাথে ৯৭ কিমি (৬০ মাইল) দীর্ঘ এবং উত্তরপশ্চিমে ভুটানের সাথে ৪৫৫ কিমি (২৮৩ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।[] অঞ্চলটির আয়তন ২,৬২,১৮৪ বর্গকিলোমিটার (১,০১,২৩০ বর্গমাইল), যা ভারতের মোট আয়তনের প্রায় ৮%। সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত করে।

উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো উত্তর-পূর্ব পরিষদের (এনইসি) সদস্য।[] ১৯৭১ সালে উত্তর-পূর্বের রাজ্যের উন্নয়নের জন্য এই পরিষদ গড়ে তোলা হয়েছিল। ২০০২ সালে সিকিম উত্তর-পূর্ব পরিষদের অষ্টম সদস্য রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।[] ভারতের "লুক ইস্ট" সংযোগ প্রকল্প উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে পূর্ব এশিয়াআসিয়ানের সাথে সংযুক্ত করে। আসামের গুয়াহাটি শহর[] ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহর[১০] উভয় "উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার" নামে পরিচিত এবং গুয়াহাটি উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বৃহত্তম শহর।

Remove ads

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্তি, ১৮৩৮
Thumb
পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ, ১৯০৭

সম্ভবত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অস্ট্রো-এশীয় ভাষাভাষী জনগণ উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদিমতম বাসিন্দা। পরে চীন থেকে তিব্বতি-বর্মীয় ভাষাভাষী জনগণ, ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি থেকে ইন্দো-আর্য ভাষাভাষী জনগণ এবং চীনের দক্ষিণ ইউন্নান প্রদেশ ও মিয়ানমারের শান রাজ্য থেকে তাই-কাদাই জনগণ সেখানে স্থায়ীভাবে বাস করতে লাগল।[১১] এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও শস্য বৈচিত্র্যের জন্য পুরাতাত্ত্বিক গবেষকদের বিশ্বাস যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের আদি বাসিন্দারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদগুলোকে গৃহপালিত করেছিল।[১২] লেখকদের অনুমান, চীনা ভ্রমণকারী চুয়াং ছিয়ানের ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের লেখায় উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে এক আদি বাণিজ্যপথের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।[১৩]

প্রাথমিক ঐতিহাসিক পর্বে (প্রথম সহস্রাব্দের বেশিরভাগ) কামরূপ রাজ্য উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। চীনা বৌদ্ধ পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতাব্দীতে কামরূপ রাজ্যে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানকার জনগণকে বেঁটে ও কৃষ্ণবর্ণের বলে বর্ণনা করেছিলেন। হিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ী, তাদের ভাষা মধ্য ভারতের তুলনায় সামান্য আলাদা এবং তাদের স্বভাব সরল অথচ হিংস্র। তিনি লিখেছিলেন যে কামরূপের জনগণ সিছুয়ান সম্পর্কে জানত, যা কামরূপ রাজ্যের পূর্বের এক ভয়ঙ্কর পর্বতের অন্যপারে অবস্থিত।[১৪]

ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ব্রিটিশ আমলে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বর্তমান রাজ্যগুলো গড়ে উঠেছিল। তখন তারা ভুটানমিয়ানমারের মতো বাণিজ্যিক সঙ্গী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।[১৫] ব্রিটিশ (ওয়েলশ) মিশনারিদের প্রভাবে বর্তমান নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়ের অনেক ব্যক্তিদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছিল।[১৬]

বিদ্রোহ

উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্রোহ বলতে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা সংঘটিত বিদ্রোহকে বোঝায়। উত্তর-পূর্ব ভারত অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়সিকিম এই আট রাজ্য নিয়ে গঠিত। এই আট রাজ্যের বিদ্রোহী সংগঠন ও কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেখানকার আদিবাসী জনগণ, ভারতের অন্যপ্রান্তের অভিবাসী ও বেআইনি অভিবাসীদের মধ্যে সংঘাত বিদ্যমান। সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্বকে ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত করে এবং এর প্রস্থ ২৩.০০ কিমি (১৪.২৯ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে।

বিগত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে বিদ্রোহ দ্রুত কমে এসেছে এবং ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বিদ্রোহ ঘটনা ৭০% এবং অসামরিক মৃত্যু ৮০% কমে গিয়েছিল।[১৭]

২০১৪ সালের ভারতের সাধারণ নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের সমস্ত রাজ্যে ভোটদানের হার ৮০%, যা ভারত সরকার অনুযায়ী ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সর্বোচ্চ। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি যে এটি ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি উত্তর-পূর্বের জনগণের আস্থাকে প্রকাশ করছে।[১৮] ভারতের তৎকালীন পূর্ব সেনা কমান্ডার জেনারেল অনিল চৌহানের মতে ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী, সমগ্র উত্তর-পূর্বের হিংসার এলাকা মূলত অরুণাচল, আসাম ও উত্তর নাগাল্যান্ডের সীমান্তে সীমিত হয়ে গেছে।[১৯]
Remove ads

ভূগোল

Thumb
উত্তর-পূর্ব ভারতের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাপূর্ব হিমালয়

প্রাকৃতিকভাবে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে পূর্ব হিমালয়, পূর্বাঞ্চল পর্বতমালা, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাবরাক উপত্যকায় ভাগ করা যায়।

জনপরিসংখ্যান

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৬০ লাখ এবং এর মধ্যে ৬৮% মানুষ আসামে বাস করে। আসামের জনঘনত্ব ৩৯৭ জন প্রতি কিমি যা জাতীয় গড় জনঘনত্ব ৩৮২ জন প্রতি কিমি-এর তুলনায় বেশি। অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম বাদে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের রাজ্যে সাক্ষরতার হার জাতীয় গড় ৭৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, মেঘালয়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ২৭.৮ শতাংশ, যা এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং জাতীয় গড় ১৭.৬৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। নাগাল্যান্ডের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঋণাত্মক ০.৫ শতাংশ, যা সমগ্র দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন।[২০]

ভাষা

Thumb
ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তালিকাভুক্ত যেসব ভাষা উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থানীয় ভাষা (বাংলা ব্যতীত)। উপর থেকে নিচে: অসমীয়া, মৈতৈ মণিপুরী ও বোড়ো।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান ভাষাসমূহ[২১][২২]
  1. অসমীয়া (৩৩.২৪%)
  2. বাংলা (২৬.২%)
  3. হিন্দি (৫.৪৫%)
  4. মৈতৈ মণিপুরী (৩.৭৯%)
  5. বোড়ো (৩.১৪%)
  6. খাসি (৩.১২%)
  7. নেপালি (২.৭৩%)
  8. গারো (২.৪৯%)
  9. ককবরক (২.২১%)
  10. মিজো (১.৮%)
  11. মিশিং (১.৩৮%)
  12. কার্বি (১.১৫%)
  13. অন্যান্য (১৩.৩%)

ভারতীয় জাতীয় প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল একক ভাষা অঞ্চল গঠন করে এবং সেখানে প্রচলিত ২২০টি ভাষা বিভিন্ন ভাষা পরিবারের অন্তর্গত (যেমন ইন্দো-ইউরোপীয়, চীনা-তিব্বতি, তাই-কাদাই, অস্ট্রো-এশীয় ইত্যাদি)। এই ভাষাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এদের উপমহাদেশের বাকি অংশ থেকে আলাদা করে (যেমন দন্ত্য/মূর্ধন্য ভেদাভেদের পরিবর্তে দন্তমূলীয় ব্যঞ্জনধ্বনি)।[২৩][২৪] মূলত ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় প্রচলিত অসমীয়া ভাষা বিভিন্ন ভাষা সম্প্রদায়ের মধ্যে সংযোগকারী ভাষা হিসাবে বিবর্তিত হয়েছে এবং অরুণাচল ও নাগাল্যান্ডে অসমীয়া-ভিত্তিক নেফামিজনাগামিজ ভাষা প্রচলিত,[২৫] অবশ্য হিন্দি ভাষা সাম্প্রতিককালে নেফামিজকে প্রতিস্থাপিত করছে। বরাক উপত্যকাত্রিপুরায় বাংলা ভাষা প্রচলিত, যা ঐ দুই অঞ্চলের সরকারি ভাষা। মেঘালয় রাজ্যে খাসি, জৈন্তিয়াওয়ার, এই তিন অস্ট্রো-এশীয় ভাষা প্রচলিত। এই অঞ্চলে প্রচলিত একাধিক চীনা-তিব্বতি ভাষা নিজেদের মধ্যে অনেকটাই আলাদা,[২৬] যার মধ্যে বোড়ো, মৈতৈ মণিপুরী, রাভা, কার্বি, মিশিং, গারো, অঙ্গামী, মিজো, ককবরক ইত্যাদি অন্তর্গত। ত্রিপুরার আদিবাসী জনগণের মধ্যে ককবরক প্রধান ভাষা এবং এটি রাজ্যের অন্যতম সরকারি ভাষা। মৈতৈ মণিপুরী মণিপুরের সরকারি ভাষা এবং ইম্ফল উপত্যকার প্রধান ভাষা। এছাড়া, চীনা-তিব্বতি ভাষাসমূহের নাগা ও কুকিচিন শাখা মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচলিত।[২৭]

Remove ads

সমাজ ও সংস্কৃতি

সপ্তভগিনী ও ক্ষুদ্র ভ্রাতা

Thumb
উত্তর-পূর্ব ভারতের সপ্তভগিনী রাজ্যসমূহ

উত্তর-পূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরামমেঘালয় এই সাত পার্শ্ববর্তী রাজ্য একত্রে সপ্তভগিনী রাজ্য, সাত বোন রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্স নামেও পরিচিত। এই সাত রাজ্যের মধ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও[২৮] অনেক আগে থেকেই এরা রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সদৃশ।[২৯]

জানুয়ারি ১৯৭২-এ ত্রিপুরার সংবাদদাতা জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া এক বেতার টক শো চলাকালীন নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় "সপ্তভগিনীর এলাকা" (Land of the Seven Sisters) কথাটি ব্যবহার করেছিলেন।[৩০] পরে তিনি সপ্তভগিনী রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সাধারণত্বের উপর একটি বইয়ের সংকলন করেছিলেন। মূলত এই প্রকাশনার জন্যই এই ডাকনাম প্রচলিত হয়ে গেছে।[৩১]

২০০৩ সালে সিকিমকে উত্তর-পূর্ব পরিষদের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। সিকিম এই সপ্তভগিনী রাজ্যগুলোর থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও সাংস্কৃতিকভাবে সদৃশ এবং সপ্তভগিনী রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রদত্ত বিশেষ সুযোগসুবিধার প্রত্যাশী ছিল। তবে সিকিমকে অষ্টম ভগিনী না বলে তাকে "ক্ষুদ্র ভ্রাতা" ডাকনাম দেওয়া হয়েছে।[৩২]

Remove ads

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads