কার্বন সিঙ্ক
প্রাকৃতিক আধার যা একটি অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমে থাকা কার্বনঘটিত রাসায়নিক যৌগ সংরক্ষণ করে। / From Wikipedia, the free encyclopedia
কার্বন সিঙ্ক হলো এমন কোনো প্রাকৃতিক স্থান বা অন্য পদার্থকে বোঝায় যা অনির্দিষ্টকালের জন্য কোনো কার্বনযুক্ত রাসায়নিক যৌগ জমা করে এবং সঞ্চয় করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সরিয়ে দেওয়া যায়।[2] এই সিঙ্কগুলি প্রাকৃতিক কার্বন চক্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠন করে। কার্বন পুল হলো এমন সমস্ত স্থান যেখানে কার্বন থাকতে পারে। কার্বন পুলকে বলা হয় কার্বনের একটি আধার। এটি একটি সিস্টেম অর্থাৎ ব্যবস্থা যা কার্বন জমা বা ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। বায়ুমন্ডল, মহাসাগর, মাটি, গাছপালা প্রভৃতি কার্বন পুলের উদাহরণ। তাই বলা যায় একটি কার্বন সিঙ্ক হলো এক ধরনের কার্বন পুল যা বায়ুমণ্ডলে যতটা পরিমাণ কার্বন ছাড়ে তার থেকে বেশি কার্বন গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে।
বিশ্বের সবচেয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সিঙ্ক হলো গাছপালা এবং মহাসাগর।[3] মাটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্বন সঞ্চয়ের মাধ্যম। খুব বেশি চাষাবাদের কারণে কৃষি এলাকার মাটিতে ধরে রাখা জৈব কার্বনের বেশিরভাগই ক্ষয় হয়ে গেছে। " ব্লু কার্বন " বা নীল কার্বন হলো উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে সঞ্চিত কার্বন। উপকূলীয় নীল কার্বনের মধ্যে রয়েছে ম্যানগ্রোভ, লবণাক্ত জলাভূমি এবং সমুদ্রিক ঘাস যা সমুদ্রের উদ্ভিদের জীবনের বেশিরভাগ অংশ তৈরি করে। এগুলি প্রচুর পরিমাণে কার্বন সঞ্চয় করে। গভীর নীল কার্বন উচ্চ সাগরেগুলিতে অবস্থিত। গভীর-সমুদ্রের জল এবং তার নিচে সমুদ্রের তলদেশে থাকা কার্বন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মহাসাগর একটি প্রধান কার্বন সিঙ্ক হিসাবে কাজ করে। তাই মহাসাগর অতিরিক্ত গ্রীনহাউস গ্যাসের তাপ ও শক্তি সরিয়ে দেয়।[4]
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার জন্য প্রাকৃতিক কার্বন সিঙ্কগুলি যেমন মৃত্তিকা, বনাঞ্চল প্রভৃতির উন্নয়ন ঘটিয়ে কার্বন সিঙ্ক উন্নয়ন করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অরণ্যবিনাশ এবং অতিরিক্ত শিল্প-কৃষির প্রবণতা কার্বন সিঙ্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টাগুলিকে প্রতিরোধ করে। এই সব কারণে আবার প্রাকৃতিক কার্বন সিঙ্কের ভাণ্ডার কমে আসে। ঐতিহাসিকভাবে ভূমি ব্যবহার, ভূমি-ব্যবহারে পরিবর্তন, বনায়ন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডগুলি জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ মানব অবদান। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বাড়ানোর পাশাপাশি কৃত্রিমভাবে নির্মাণ সামগ্রী বা গভীর ভূগর্ভে কার্বন সংরক্ষণের প্রচেষ্টা চলছে। এইসব উদ্যোগে বিনিয়োগও করা হচ্ছে।[5][6]