Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কোমল পানীয় (ইংরেজি: Soft drink) হচ্ছে এক প্রকার মাদকবিহীন তরল পানীয়বিশেষ। এতে সচরাচর দ্রবীভূত অবস্থায় কার্বনসমৃদ্ধ পানি, মিষ্টিজাতীয় পদার্থসহ সুগন্ধযুক্ত পদার্থের উপাদান সন্নিবেশিত থাকে। এছাড়াও, ক্যাফেইন, ফলের রস কিংবা উভয়ই কোমল পানীয়ে দ্রবীভূত অবস্থা থাকে। কোমল পানীয়কে অনেকে সোডা, পপ, কোক,[1] সোডা পপ, ফিজি ড্রিঙ্ক, টনিক বা কার্বনেটেড বেভারেজ নামে ডেকে থাকেন।
বিশুদ্ধ ফলের রস, উচ্চ তাপে প্রস্তুতকৃত হট চকোলেট, চা, কফি, দুধ এবং দুগ্ধজাত পানীয় কোমল পানীয় হিসেবে বিবেচিত হয় না। তরল পানীয় গ্যাটোরেড এবং পাওয়ারেড কোমল পানীয়ের সংজ্ঞায় পড়লেও তা খেলাধূলায় ব্যবহৃত আদর্শ পানীয়রূপে বিবেচ্য। রেড বুলও এ সংজ্ঞায় পড়ে; কিন্তু তা সাধারণতঃ এনার্জি ড্রিঙ্ক নামে পরিচিত।
হার্ড ড্রিঙ্ক হিসেবে পরিচিত ও নেশাযুক্ত পানীয়ের বিপরীতে কোমল পানীয় সংক্ষেপে সফট্ নামে পরিচিত। এতে স্বল্প পরিমাণে ইথানল অ্যালকোহলের উপস্থিতি বর্তমানকালে লক্ষ্য করা যায় কিংবা থাকতে পারে। কিন্তু মাদকমুক্ত পানীয়রূপে পরিচিতির জন্য অ্যালকোহলের মাত্রা অবশ্যই পানীয়ে ব্যবহৃত সর্বমোট উপাদানের ০.৫% শতাংশের কম হতে হবে।[2][3][4]
বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে বিক্রীত এবং জনপ্রিয় সুগন্ধযুক্ত পানীয় হিসেবে - কোলা, পেপসি, চেরী, লেমন-লাইম, রুট বিয়ার, অরেঞ্জ, গ্রেপ, ভ্যানিলা, জিঞ্জার এল, ফ্রুট পাঞ্চ এবং স্পার্কলিং লেমোন্যাড অন্যতম।
অল্প ঠাণ্ডা কিংবা কক্ষের উপযোগী তাপমাত্রায় কোমল পানীয় পরিবেশন করা হয়। অনেকক্ষেত্রে গরম করেও পরিবেশন করা হয়ে থাকে। 'কুমিস' শব্দটি লিও তলস্তয়ের 'ইলিয়াস' গল্পে পাওয়া যায়। এটি একটি ঠাণ্ডা পাণীয়। ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি হওয়া এই পাণীয় স্বাস্থ্যকর।
১৭শ শতকে পশ্চিমা বিশ্বে কোমল পানীয়ের প্রথম বাজারজাতকরণ লক্ষ্য করা যায়। তখন, জল এবং লেবুর শরবতে মধুর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কোমল পানীয় তৈরী করা হতো। ১৬৭৬ সালে প্যারিসের কম্প্যাগনি দেস লিমোনাডিয়ার্স কোমল পানীয়ের একচেটিয়া ব্যবসার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। বিক্রেতারা পিঠে লেবুর শরবতের পাত্র বহন করে তৃষ্ণার্ত প্যারীসবাসীদেরকে কাপের মাধ্যমে পরিবেশন করে তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করতো।
শুষ্ক এবং/অথবা তাজা উপাদান হিসেবে লেবু, কমলা ইত্যাদিকে পানির সাথে মিশিয়ে কোমল পানীয় তৈরী করা হয়। কল-কারখানার পাশাপাশি বাড়ীতেও কোমল পানীয় তৈরী করা সম্ভবপর। বাড়ীতে পানির সাথে চিনিমিশ্রিত ঘন দ্রবণ বা সিরাপ অথবা শুকনো উপাদান হিমায়িত পানি কিংবা বরফমিশ্রিত পানিতে মেশানোর মাধ্যমে কোমল পানীয় তৈরী করা যায়। সোডা-ক্লাবে বাণিজ্যিকভাবে সিরাপ বিক্রয় করা হয়। জিঞ্জার এলে এবং রুট বিয়ারজাতীয় পানীয়গুলো হিমায়িত পানিতে মিশিয়ে ফেনার মতো করা হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে বৃহদাকার কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তন্মধ্যে উত্তর আমেরিকার পেপসি এবং কোকা-কোলা কোম্পানী দু'টো বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান | অঞ্চল | উৎপাদিত পণ্য |
পেপসিকো | উত্তর আমেরিকা | পেপসি-কোলা, ক্যাফেইন-ফ্রি পেপসি, ক্রিস্টাল পেপসি, পেপসি র, পেপসি থ্রোব্যাক, পেপসি টুইস্ট, পেপসি ওয়াইল্ড চেরী, ডায়েট পেপসি, জাজ ডায়েট পেপসি, পেপসি ম্যাক্স, পেপসি ওয়ান, পেপসি ক্যাফে, পেপসি কনা |
কোকা-কোলা | উত্তর আমেরিকা | কোকা-কোলা, নিউ কোক, ক্যাফেইন-ফ্রি কোকা-কোলা, কোকা-কোলা চেরী, কোকা-কোলা উইদ লাইম, কোকা-কোলা ভ্যানিলা, কোকা-কোলা সিত্রা, কোকা-কোলা ব্ল্যাক চেরী ভ্যানিলা, কোকা-কোলা ব্ল্যাক, কোকা-কোলা উইদ লেমন, কোকা-কোলা রেস্পবেরী, ডায়েট কোক/কোক লাইট, কোকা-কোলা সি২, কোকা-কোলা জিরো, কোকা-কোলা চেরী জিরো, কোকা-কোলা লাইট স্যাঙ্গো, ডায়েট কোকা-কোলা চেরী, ডায়েট কোক প্লাস, কোকা-কোলা অরেঞ্জ |
ডক্টর পিপার স্ন্যাপল গ্রুপ | উত্তর আমেরিকা | ৭আপ, এ এন্ড ডব্লিউ রুট বিয়ার, বিফ্যামেটো, ক্যাকটাস কুলার, কানাডা ড্রাই, ক্ল্যামেটো, কান্ট্রি টাইম, ক্রাশ, দেজা ব্লু, ডায়েট রাইট, ড. পিপার, গিনি, হাওয়াইন পাঞ্চ, হায়ার্স রুট বিয়ার, আইবিসি রুট বিয়ার, মার্গারিটাভিল, মিস্টিক, মোট'স, মি. এন্ড মিসেস টি, ন্যানটাকেট নেক্টার্স, নেহি, অরেঞ্জিনা, পেনাফিয়েল, আরসি কোলা, রিয়ালেমন, রোজে'স লাইম জুস, সুয়েপ্পস্, স্ন্যাপল, স্কুইর্ট ফাউন্টেন ক্লাসিক্স, সান ড্রপ, সানকিস্ট, তাহিটিয়ান ট্রিট, ভেনম এনার্জি ড্রিঙ্ক, ভার্নর্স, ওয়েলচ'স, ইয়ো-হু |
এজিগ্রুপ,[5] মেক্সিকো | দক্ষিণ আমেরিকা | বিগ কোলা, সাইলো, সাইফ্রুট, ফ্রী টি, ফ্রী ওয়ার্ল্ড লাইট (ফ্রী লাইট), কোলা রিয়্যাল, অরো, পাল্প, স্পোরেড, ভোল্ট |
এমবেভ, ব্রাজিল | দক্ষিণ আমেরিকা | পেপসি কোলা, গুয়ারানা এন্টার্কটিকা, সোডা লিমোনাডা, সুকিতা, এইচ২ওএইচ!, গুয়ারা |
কর্পোরেশিয়ন জোস আর. লিন্ডলে এস.এ,[6] পেরু | দক্ষিণ আমেরিকা | একুয়ারিয়াস, বার্ন, কোকা-কোলা, ক্রাশ, ফান্টা, ফ্রুগোস, ইনকা কোলা, কোলা ইংলেসা, পাওয়ারেড, স্যান লুইস, স্প্রাইট |
ইম্বোতেলাদোরা ডন জর্জ এস.এ.সি,[7] পেরু | দক্ষিণ আমেরিকা | আগুয়া ভিদা, ক্লিক, আইজ্যাক কোলা, পেরু কোলা |
ইম্বোতেলাদোরা ডন জর্জ এস.এ (ইএলএসএ),[8] কলম্বিয়া | দক্ষিণ আমেরিকা | সাইরো, লিভ, আরসি কোলা, শীপ |
পেপসিকো ইঙ্ক সুকার্সাল দেল পেরু,[9] পেরু | দক্ষিণ আমেরিকা | পেপসি কোলা, সেভেন আপ, ট্রিপল কোলা, কনকোর্ডিয়া, স্যান কার্লোস, ইভারভেস, গেটোরেড, আর্দ্রেনালিনা রাশ |
পেরিয়ার[10] | ইউরোপ | পেরিয়ার |
ড্রিঙ্কো[11] | মধ্যপ্রাচ্য | ড্রিঙ্কো |
রামুন | পূর্ব এশিয়া | রামুন |
বুন্দাবার্গ, কির্ক্স | অস্ট্রেলিয়া | বুন্দাবার্গ, কির্ক্স |
চিনিযুক্ত কোমল পানীয় গ্রহণের ফলে অতিস্থূলতাজনিত রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে।[12][13] এছাড়াও, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, দাঁতের গর্তজনিত ক্ষত এবং অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হবারও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।[13] গবেষণাগারে প্রাপ্ত ফলাফলে এ ধরনের অসুস্থতায় চিনিযুক্ত উপাদানের ব্যবহার ও প্রয়োগকেই দায়ী করা হয়েছে।[12][13] কিন্তু অন্যান্য গবেষকগণ এ ফলাফলের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।[14][15]
কোমল পানীয়তে ফসফরিক এসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কৃত্রিম চিনিসহ নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ থাকে। খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয়ের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়, কিন্তু কৃত্রিম পানীয় সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য নষ্ট করে। তাছাড়া এই ধরনের পানীয় শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা সৃষ্টি করার পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অম্লতা বা অ্যাসিডিটি, দাঁতের ক্ষয় বা মেদবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।[16]
অনেক কোমল পানীয়ের মধ্যে আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে ক্যাফেইন রয়েছে। এ উপাদানটি দুঃশ্চিন্তা এবং অনিদ্রাজনিত রোগে আক্রান্ত হবার প্রধান কারণ বলে স্বীকৃত।[17] পাশাপাশি অনেক সমালোচক প্রশ্ন করেছেন যে চিনির পাশাপাশি কৃত্রিম চিনি প্রয়োগও সমীচীন নয়। এই কৃত্রিম চিনি শরীরের ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পানীয়ে সোডিয়াম বেনজোয়েট পদার্থের অস্তিত্বও শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ আবিষ্কার করেছেন যা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মক্ষমতা হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।[18] অন্যান্য উপাদানও শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে তবে তা খুবই স্বল্পমাত্রায় রয়েছে যা সহজে দৃশ্যমানতা প্রকাশ ঘটাতে পারে না।
অপরদিকে কৃত্রিম পানীয় যাতে সহজে জমে যেতে না পারে কিংবা বরফে রূপান্তরিত না হতে পারে সেজন্য কৃত্রিম পানীয়তে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নি উপাদানটি শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে যার অন্যতম হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া।[16]
১৯৯৮ সালে লিকুয়িড ক্যান্ডি শিরোনাম একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে কোমল পানীয় গ্রহণের ফলে ক্ষয়সংক্রান্ত শারীরিক সমস্যায় সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনে কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ পদ্ধতিরও ব্যাপক সমালোচনা করা হয়।[19]
২০০৩ সালে দিল্লীর একটি অলাভজনক সংস্থা 'সেন্টার ফর সায়েন্স এন্ড এনভায়রনমেন্ট' (সিএসই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।[20][21] প্রতিবেদনে ভারতে বিক্রিত কোক এবং পেপসি কোমল পানীয়ে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক কমিশনের নিরাপদ ও নির্ধারিত মাত্রার চেয়েও ৩০ গুণ বেশি ক্ষতিকর উপাদানের অস্তিত্বের কথা তুলে ধরা হয়।[22][23] কিন্তু তৎকালীন ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী সিএসই সংস্থার পরীক্ষাটি সঠিক নয় বলে জানান। সরকার কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষায় প্রাপ্ত ক্ষতিকারক মাত্রা ভারতের নির্ধারিত মানদণ্ডের মধ্যেই আছে কিন্তু ইউরোপীয় মানদণ্ডের উপরে আছে বলে জানানো হয়।[24][25]
একই ধরনের আরেকটি সিএসই প্রতিবেদনে আগস্ট, ২০০৬ সালে প্রকাশ করা হয় যে, অনেক রাজ্য সরকার বিদ্যালয়ে কোমল পানীয় বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে তৎপর রয়েছেন। কেরালায় তা সম্পূর্ণরূপে বিক্রয় অথবা উৎপাদনে নিষেধ করে। পরবর্তীতে আদালত কর্তৃক এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। এর পরিবর্তে কোমল পানীয় কোম্পানী - কোকা-কোলা এবং পেপসি প্রচার মাধ্যমের বিজ্ঞাপন চিত্রে তাদের পানীয় গ্রহণের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়াদি তুলে ধরে।[26]
২০০৬ সালে কোক কর্তৃক নির্বাচিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগারে তাদের পানীয়ে ইইউ মানদণ্ডের কথা তুলে ধরে।[27] কোক এবং মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে তাদের বোতলজাত কারখানায় পরীক্ষা চালায়। ২০০৮ সালে তারা জানায় যে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় কোন ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায়নি।[28]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.