দ্বি-চিড় পরীক্ষণ
পদার্থবিদ্যা পরীক্ষা, তরঙ্গ এবং কণা উভয় দ্বারা আলো দেখানো মডেল করা যেতে পারে / From Wikipedia, the free encyclopedia
দ্বি-চিড় পরীক্ষণ হলো কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের একটি পরীক্ষণ। এই পরীক্ষণটি দেখায় যে আলো এবং পদার্থ, তরঙ্গ ও কণা উভয়ের বৈশিষ্ট্যই দেখাতে পারে। আলোর তরঙ্গ বৈশিষ্ঠের প্রদর্শন হিসেবে, ১৮০১ সালে থমাস ইয়ং আলো ব্যবহার করে প্রথম এই ধরনের পরীক্ষা করেন। সেই সময় ভাবা হতো, আলো হয় তরঙ্গ নয়তো কণা দ্বারা গঠিত। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের শুরুর সাথে, প্রায় একশো বছর পর, এটি বোঝা যায় যে আলো তরঙ্গ ও কণা উভয়েরই বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।[1][2] ১৯২৭ সালে, ডেভিসন ও জার্মার দেখান যে ইলেক্ট্রনও একই ব্যবহার করে, যা পরবর্তীতে পরমাণু ও অণুর জন্যেও সম্প্রসারিত হয়। চিরায়ত পদার্থবিদ্যার অংশ হিসেবে আলো নিয়ে করা থমাস ইয়ংএর পরীক্ষাটি ছিলো কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ও তরঙ্গ-কণা দ্বৈততার ধারণাও বেশ আগে। ইয়ং বিশ্বাস করেছিলেন যে ইহা তৎকালীন আলোর তরঙ্গ তত্ত্বের প্রমাণ। তার সেই পরীক্ষণকে কখনো কখনো ইয়ংএর পরীক্ষণ বা ইয়ংএর চিড়ও বলা হয়।[3]
পরীক্ষণটি "দ্বি পথ" পরীক্ষণের একটি সাধারণ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, যেখানে একটি তরঙ্গকে দুইটি পৃথক তরঙ্গে ভাগ করে আবার সংযুক্ত করে একটি তরঙ্গে পরিণত করা হয়। উভয় তরঙ্গের পথের দৈর্ঘ্য একটি দশান্তর সৃষ্টি করে যা একটি ব্যতিচার প্যাটার্ন সৃষ্টি করে। এর অন্য একটি সংস্করণ হলো মাক-ঝেন্ডার ব্যাতিচার যেখানে মরীচিটিকে চিড়তে আয়না ব্যবহার করা হয়।
পরীক্ষণটির মৌলিক সংস্করণে, লেজারের মত কোনো সংসক্ত আলোক উৎস একটি পাতকে আলোকিত করে দুইটি সমান্তরাল চিড়ের মধ্যদিয়ে অনুপ্রবিষ্ট হয় এবং পাতের পেছনের একটি পর্দায় চিড়ের মধ্যদিয়ে অনুপ্রবিষ্ট আলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।[4][5] আলোর তরঙ্গের মত ব্যবহার সেই দুইটি চিড়ের মধ্যদিয়ে আলোক তরঙ্গকে প্রবেশ করায় এবং ব্যতিচার ঘটায় যা পর্দার উপর উজ্জল এবং অন্ধকার আলোক রেখা (ব্যান্ড) তৈরী করে - একটি ফলাফল যা চিরায়ত কণা দ্বারা আলো গঠিত হলে আশা করা যেতো না।[4][6] যাইহোক, সেই আলোকে সবসময়েই পর্দার কিছু পৃথক অংশে শোষিত দেখা যেত, স্বতন্ত্র কণার মত (তরঙ্গ নয়); পর্দায় আঘাত করা কণা সমূহের ঘনত্বের কারণে এমন ব্যাতিচার প্যাটার্নের আবির্ভাব হতো।[7] অধিকন্তু, পরীক্ষণটির অন্যান্য সংস্করণ, যেগুলিতে চিড়ে শনাক্তকারী (ডিটেক্টর) যোগ করা হয়, থেকে পাওয়া যায়, প্রত্যেক শনাক্তকৃত ফোটন একটি চিড় দিয়ে যায় (চিরায়ত কণার মত) কিন্তু উভয় চিড় দিয়ে (তরঙ্গের মত) নয়।[8][9][10][11][12] যাইহোক, এমন পরীক্ষণ দেখায় যে যদি সেই চিড়, যেটি দিয়ে কণা গমণ করে তা শনাক্ত করা হয় তাহলে কণাগুলির এমন ব্যাতিচার প্যাটার্ন তৈরী করার কথা নয়। এই ফলাফল তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা নীতির প্রদর্শন করে।[13][14]
অন্যান্য পারমাণবিক-স্কেলের সত্তাকেও, যেমন ইলেক্ট্রন, দ্বি-চিড়ের দিকে ছোড়ার সময় এমন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করতে দেখা যায়।[5] ইলেক্ট্রন বা ফোটনের চেয়ে বড় সত্তা দিয়েও এই পরীক্ষণটি করা যায় যোদিও আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে ইহা কঠিনতর হয়ে পরে। অণু হলো সবচেয়ে বড় সত্তা যার দ্বারা দ্বি-চিড় পরীক্ষণ করা হয়েছে। এদের একেকটি ৮১০ টি পরমাণু অন্তর্ভুক্ত করে (মোট ভর ১০,০০০ পারমাণবিক ভর একক)।[1][2]
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার কেন্দ্রীয় ধাঁদা সমূহ সুস্পষ্টভাবে প্রকাশের জন্য, দ্বি-চিড় পরীক্ষণ (এবং এর সংস্করণ সমূহ) একটি চিরায়ত চিন্তার পরীক্ষণে পরিণত হয়েছে। যেহেতু এটি পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকের মৌলিক সীমাবদ্ধতা দেখায় তাই, রিচার্ড ফাইনম্যান এসম্পর্কে বলেন, "একটি ঘটনা [...] যা যেকোনো চিরায়ত বলবিদ্যা চিরায়ত পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব, এবং এর অভ্যন্তরে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার হৃদয় অবস্থিত। প্রকৃত পক্ষে, ইহাই একমাত্র রহস্য [কোয়ান্টাম বলবিদ্যার] বহন করে।[5]