মিশরীয় সভ্যতা
উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা / From Wikipedia, the free encyclopedia
মিশরীয় সভ্যতা উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা। নীল নদের নিম্নভূমি অঞ্চলে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। বর্তমানে অঞ্চলটি মিশর রাষ্ট্রের অধিগত। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ[1] প্রথম ফারাওয়ের অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে এই সভ্যতা এক সুসংহত রূপ লাভ করে। এরপর তিন সহস্রাব্দ কাল ধরে চলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশপর্ব।[2] প্রাচীন মিশরের ইতিহাস একাধিক স্থায়ী রাজ্য-এর ইতিহাসের একটি সুশৃঙ্খলিত ধারা। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর্ব দেখা দিয়েছিল। এই পর্বগুলি অন্তর্বর্তী পর্ব নামে পরিচিত। নতুন রাজ্যের সময়কাল এই সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশপর্ব। এর পরই ধীরে ধীরে মিশরীয় সভ্যতার পতন আরম্ভ হয়। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের শেষ পর্বে একাধিক বৈদেশিক শক্তি মিশর অধিকার করে নেয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে আদি রোমান সাম্রাজ্য মিশর অধিকার করে এই দেশকে একটি রোমান প্রদেশে পরিণত করলে ফারাওদের শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।[3]
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সাফল্যের আংশিক উৎস নিহিত রয়েছে নীল নদ উপত্যকার পরিস্থিতির সঙ্গে এই সভ্যতার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার মধ্যে। সুপরিচিত বন্যা ও উর্বর উপত্যকার নিয়ন্ত্রিত সেচব্যবস্থার ফলস্রুতি ছিল উদ্বৃত্ত ফসল। যা থেকে এই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এই সম্পদের সাহায্যেই প্রশাসনের সহায়তায় উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী মরু অঞ্চলে খনিজ পদার্থের উত্তোলন শুরু হয়, একটি স্বাধীন লিখন পদ্ধতির আদি বিকাশ সম্ভব হয়, স্থাপনা ও কৃষিজ পণ্যের সুসংহত ব্যবহার শুরু হয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং সামরিক বাহিনী বহিঃশত্রুদের পরাজিত করে মিশরীয় প্রাধান্য স্থাপন করে। এই সকল কার্যে প্রেরণা জোগানো ও একে সুসংহতরূপে সাধন করা ছিল উচ্চবিত্ত লিপিকার, ধর্মনেতা ও ফারাওদের অধীনস্থ প্রশাসকবৃন্দের আমলাতন্ত্রের নিদর্শন। এঁরা সমগ্র মিশরের জনগণকে একটি বহুব্যাপী ধর্মবিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের সহযোগিতা ও একতাকে সুনিশ্চিত করেছিলেন।[4][5]
প্রাচীন মিশরীয়দের নানান কৃতিত্বগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য খনি থেকে অট্টালিকাদি নির্মাণের জন্য পাথর খনন, সমীক্ষণ ও নির্মাণ কৌশলের দক্ষতা। এরই ফলস্রুতি ঐতিহাসিক মিশরীয় পিরামিডসমূহ, মন্দির, ওবেলিস্কসমূহ, মিশরীয় গণিত ব্যবস্থা, একটি ব্যবহারিক ও কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেচব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন কৌশল, প্রথম জাহাজ নির্মাণ,[6] মিশরীয় চীনামাটি ও কাঁচশিল্পবিদ্যা, একটি নতুন ধারার সাহিত্য এবং বিশ্বের ইতিহাসের প্রাচীনতম শান্তিচুক্তি ( হিট্টাইটদের সাথে)।[7] প্রাচীন মিশর এক দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারকে পিছনে ফেলে যায়। প্রাচীন মিশরের শিল্পকলা ও সাহিত্যের ব্যাপক অনুকৃতি লক্ষিত হয়। বিশ্বের দূরতম প্রান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এর পুরাকীর্তিগুলি। শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রাচীন মিশরের পুরাকীর্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ পর্যটক ও লেখকদের কল্পনাশক্তিকে অনুপ্রাণীত করেছে। আধুনিক যুগের প্রথম ভাগে পুরাকীর্তি ও খননকার্যের প্রতি নতুন করে মানুষের আগ্রহ জেগে উঠলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মিশরের সভ্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু হয়। এর ফলে মিশরীয় সভ্যতার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলি মিশর ও বিশ্ববাসীর সম্মুখে নতুন রূপে উপস্থাপিত হয়।[8]