বরোবুদুর
ইন্দোনেশিয়া স্থিত নবম শতাব্দীর বৌদ্ধ মন্দির / From Wikipedia, the free encyclopedia
বরোবুদুর বা বরবুদুর হল ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রের মধ্য জাভার মাগেলাঙে অবস্থিত একটি ৯ম শতাব্দীর মহাযান বৌদ্ধ মন্দির। এই স্মারকস্থলে নয়টি সারিবদ্ধ মঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বর্গাকার ও তিনটি গোলাকার। এগুলির উপরে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ রয়েছে। বরোবুদুর মন্দিরে ২,৬৭২টি খোদাইচিত্রের প্যানেল ও ৫০৪টি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। কেন্দ্রীয় গম্বুজটির চারদিকে ৭২টি বুদ্ধমূর্তি রয়েছে। প্রত্যেকটি মূর্তি একটি স্তুপের গায়ে ছিদ্রাকার গর্তে উপবিষ্ট অবস্থায় স্থাপিত।[1] বরোবুদুর বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির,[2][3] তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ স্মারক।[4]
বরোবুদুর | |
---|---|
স্থানীয় নাম জাভানীয়: ꦧꦫꦧꦸꦝꦸꦂ | |
অবস্থান | মাগেলাংর , মধ্য জাভা |
স্থানাঙ্ক | ৭.৬০৮° দক্ষিণ ১১০.২০৪° পূর্ব / -7.608; 110.204 |
নির্মিত | Originally built in the 9th century during the reign of the Sailendra Dynasty |
পুনরুদ্ধার | ১৯১১ |
পুনরুদ্ধারকারী | Theodoor van Erp [nl] |
স্থপতি | Gunadharma |
ধরন | সাংস্কৃতিক |
নির্ণায়ক | i, ii, vi |
মনোনীত | ১৯৯১ (১৫শ সভা) |
যার অংশ | বোরোবুদুর মন্দির যৌগিক |
সূত্র নং | ৫৯২ |
স্টেট পার্টি | ইন্দোনেশিয়া |
অঞ্চল | দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া |
শৈলেন্দ্র রাজবংশের শাসনকালে খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে বরোবুদুর নির্মিত হয়। মন্দিরটি জাভা বৌদ্ধ স্থাপত্যশৈলী অনুসারে নির্মিত। এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বপুরুষ পূজার আদিবাসী সংস্কৃতি ও নির্বাণ লাভের বৌদ্ধ ধারণার একটি মিশ্রণ লক্ষিত হয়।[4] এই মন্দিরে গুপ্ত শিল্পকলারও একটি প্রভাব লক্ষিত হয়। এটি এই অঞ্চলে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবের প্রতিফলন। তবে এই মন্দিরে যথেষ্ট পরিমাণে স্থানীয় দৃশ্যাবলি ও উপাদান সংযোজিত হয়েছে। তার ফলে বরোবুদুর স্বতন্ত্রভাবে ইন্দোনেশীয় স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।[5][6] বরোবুদুরের স্মারকস্থলে গৌতম বুদ্ধের একটি পূজাবেদী ও একটি বৌদ্ধ তীর্থস্থান রয়েছে। তীর্থযাত্রার পথটি শুরু হয়েছে স্মারকস্থলের পাদদেশ থেকে। এরপর পথটি তিনটি ধাপে সমগ্র স্মারকস্থলটিকে ঘিরে ঘিরে শীর্ষদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই তিনটি ধাপ বৌদ্ধ বিশ্বতত্ত্বের তিনটি ‘ধাতু’ বা জগতের প্রতীক। জগত তিনটি হল: কামধাতু (কামনার জগত), রূপধাতু (সাকারের জগত) ও অরূপধাতু (নিরাকারের জগত)। এই স্মারকস্থলে তীর্থযাত্রীরা প্রসারিত সিঁড়ি ও অলিন্দের মাধ্যমে শীর্ষদেশে পৌঁছান। অলিন্দগুলির দেওয়ালে ও সূক্ষ্মাগ্র ক্ষুদ্র স্তম্ভশ্রেণির গায়ে ১,৪৬০টি খোদাইচিত্রের প্যানেলে বিভিন্ন কাহিনি প্রদর্শিত হয়েছে। বরোবুদুর বিশ্বের বৃহত্তম ও সামগ্রিক বৌদ্ধ খোদাইচিত্রের সমাহার।[4]
প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে জানা যায়, বরোবুদুর নির্মিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ৯ম শতাব্দীতে। খ্রিস্টীয় ১৪শ শতাব্দীতে জাভা জাতি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে জাভার হিন্দু রাজ্যগুলির পতন ঘটে। এই সময় বরোবুদুর পরিত্যক্ত হয়।[7] ১৮১৪ সালে জাভার তৎকালীন ব্রিটিশ শাসক স্যার টমাস স্ট্যামফোর্ড র্যাoফলস স্থানীয় ইন্দোনেশীয়দের কাছ থেকে এই মন্দিরের অবস্থানের কথা জানতে পারলে সারা বিশ্বে এই মন্দিরের অস্তিত্বের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে বেশ কয়েকবার সংস্কারের মাধ্যমে বরোবুদুর সংরক্ষিত হয়েছে। বৃহত্তম সংস্কার প্রকল্পটি চালানো হয় ১৯৭৫ ও ১৯৮২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে। এই সংস্কার প্রকল্পটি পরিচালনা করেছিল ইন্দোনেশিয়া সরকার ও ইউনেস্কো। এরপর বরোবুদুর মন্দির চত্বর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকাভুক্ত হয়।[4]
বরোবুদুর এখনও একটি তীর্থস্থল হিসেবে পরিগণিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার বৌদ্ধরা বছরে একবার এখানে বেশাখ উৎসব উদ্যাপন করেন। বরোবুদুর ইন্দোনেশিয়ার একক সর্বাধিক পরিদর্শিত পর্যটন কেন্দ্র।[8][9][10]