Loading AI tools
লাল ফল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্লুবেরি একটি বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ যাতে নীল বা বেগুনী– রঙের বেরি জন্মায়। এরা ভ্যাকসিনিয়াম গণের সায়ানোকক্কাস বিভাগের অন্তর্গত। ভ্যাকসিনিয়াম গণের মধ্যে ক্র্যানবেরি, বিলবেরি, হ্যাকলবেরি এবং ম্যাডেইরা ব্লুবেরি রয়েছে।[1] বন্য ('লোবুশ') এবং চাষ করা ('হাইবুশ') ব্লুবেরি সহ সমস্ত বাণিজ্যিক "ব্লুবেরি" উত্তর আমেরিকার স্থানীয় প্রজাতি। ১৯৩০-এর দশকে ইউরোপে হাইবুশ ব্লুবেরির প্রচলন ঘটে।[2]
ব্লুবেরি | |
---|---|
Vaccinium corymbosum | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
(শ্রেণিবিহীন): | আর্কিপ্লাস্টিড |
জগৎ/রাজ্য: | প্লান্টি (Plante) ভ্যাকসিনিয়াম সেক্ট. সায়ানোকক্কাস রিডবার্গ |
প্রজাতি | |
তালিকা
|
ব্লুবেরি মাটিতে জন্মানো গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যার উচ্চতা সাধারণত ১০ সেন্টিমিটার (৩.৯ ইঞ্চি) থেকে ৪ মিটার (১৩ ফু) পর্যন্ত হতে পারে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে ছোট, মটর আকৃতির ও নিচু ঝোপে বেড়ে ওঠা ব্লুবেরিকে "লোবুশ" ব্লুবেরি ("বুনো" বা wild-এর সমার্থক) আর বড় আকারের, লম্বা চাষকৃত ঝোপে জন্মানো প্রজাতিকে "হাইবুশ ব্লুবেরি" বলা হয়।
ব্লুবেরি উদ্ভিদ চিরহরিৎ অথবা পর্ণমোচী হতে পারে। পাতা ডিম্বাকার অথবা ভল্লাকার, দৈর্ঘ্যে ১–৮ সেমি (০.৩৯–৩.১৫ ইঞ্চি) লম্বা ও প্রস্থে ০.৫–৩.৫ সেমি (০.২০–১.৩৮ ইঞ্চি) চওড়া হয়ে থাকে। ফুল ঘণ্টাকৃতির এবং সাদা, ফ্যাকাশে গোলাপি অথবা লাল এবং কখনও কখনও সবুজাভ বর্ণের হয়। ফল বেরি জাতীয়, ব্যাস ৫–১৬ মিলিমিটার (০.২০–০.৬৩ ইঞ্চি) এবং শেষে মুকুটের মত অংশ থাকে। কাঁচা অবস্থায় ফলের রং ফ্যাকাশে সবুজ হলেও পরে লালচে-বেগুনি ও পাকার পর গাঢ় বেগুনি বর্ণ ধারণ করে। ফলের গায়ে পাতলা মোমের আস্তরণ থাকে যেটিকে কথ্যভাষায় "ব্লুম" বলা হয়।[3] পাকার পরে ফলের স্বাদ মিষ্টি হয়, তবে অম্লত্বের পার্থক্য থাকতে পারে। ব্লুবেরি গাছে মৌসুমের মাঝামাঝি ফল ধরে, ফল পাড়ার সময়কাল স্থানীয় অবস্থা যেমন, উচ্চতা ও অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে। উত্তর গোলার্ধে মে থেকে আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
ভ্যাকসিনিয়াম গণের বেশিরভাগ প্রজাতি সার্কামপোলার অঞ্চলে বিস্তৃত, যা প্রধানত উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ায় অবস্থিত।
ব্লুবেরির অনেকগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিক্রিত প্রজাতি উত্তর আমেরিকা থেকে আসে। উত্তর আমেরিকার স্থানীয় প্রজাতির অনেকগুলো দক্ষিণ গোলার্ধে যেমন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ নিউজিল্যান্ডে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়।
ভ্যাকসিনিয়াম গণের আরও কয়েকটি বুনো গুল্ম জাতীয় ব্লুবেরি প্রচলিতভাবে খাওয়া হয়। যেমন, ইউরোপীয় ভ্যাকসিনিয়াম মারটিলাস এবং অন্যান্য "বিলবেরি" যা অন্যান্য ভাষায় আসলে ইংরেজি ব্লুবেরিকে বোঝায়। আরও তথ্যের জন্য সনাক্তকরণ অংশ দেখুন।
টীকা: আবাস এবং ব্যাপ্তির তথ্য ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হ্যারল্ড আর. হিন্ডসের ফ্লোরা অব নিউ ব্রুনসউইক (Flora of New Brunswick) এবং ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত পোজার ও ম্যাককিননের প্ল্যান্টস অব দ্য প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট কোস্ট থেকে নেয়া হয়েছে।
ভ্যাকসিনিয়াম-এর আরও কয়েকটি নীল ফলের প্রজাতি হল:
বাণিজ্যিক ব্লুবেরি সাধারণত পূর্ব এবং উত্তর-মধ্য উত্তর আমেরিকার প্রজাতিগুলির থেকে আসে। এই গণের অন্যান্য বিভাগগুলো বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত যেমন প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং দক্ষিণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,[4] দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ায় স্থানীয় প্রজাতি। এদের মধ্যে বন্য ঝোপঝাড়ে জন্মানো, প্রায় একই রকম দেখতে অন্যান্য ভোজ্য বেরি যেমন, হ্যাকলবেরি, হোর্টলবেরি (উত্তর আমেরিকা) এবং বিলবেরি (ইউরোপ) অন্তর্গত। এই প্রজাতিগুলোকেও কখনও কখনও "ব্লুবেরি" বলা হয় এবং ব্লুবেরি জ্যাম বা অন্যান্য পণ্য হিসাবে বিক্রি করা হয়।
ইংরেজি ছাড়া ব্লুবেরির অন্যান্য ভাষার নাম গুলো প্রায়ই এর কাছাকাছি হয়, যেমন, স্কট্স ভাষায় ব্ল্যাবেরি (blaeberry), নরওয়েজিয়ান ভাষায় ব্ল্যাবার (blåbær)। ব্ল্যাবেরি, ব্ল্যাবার এবং ফরাসি মারটাইলস সাধারণত ইউরোপিয়ার স্থানীয় বিলবেরি (ভি. মারটিলাস )-কে বোঝায়, আর ব্লিউইয়েটস বলতে উত্তর আমেরিকান ব্লুবেরিকে নির্দেশ করে। রাশিয়ান রোওনিকা (голубика) রাশিয়ার স্থানীয় নয়। এগুলো সাধারণত ব্লুবেরি না বুঝিয়ে, এদের নিকটাত্মীয় বোগ বিলবেরি (ভি. উলিগোনোসাম)-কে বোঝায়।
সায়ানোকক্কাস বিভাগের ব্লুবেরিকে দ্বিখণ্ডিত করে ভেতরের রঙ দেখে এদেরকে প্রায় সদৃশ বিলবেরি থেকে আলাদা করা যায়। পাকা ব্লুবেরির ভেতরের মাংসের রঙ হয় হালকা সবুজ, যেখানে পাকা বিলবেরি, হোর্টলবেরি ও হ্যাকলবেরির রঙ সম্পূর্ণ লাল অথবা বেগুনী হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ২৪০ কিজু (৫৭ kcal) |
১৪.৪৯ গ্রাম | |
চিনি | ৯.৯৬ গ্রাম |
খাদ্য আঁশ | ২.৪ গ্রাম |
০.৩৩ g | |
০.৭৪ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
ভিটামিন এ সমতুল্য লুটিন জিয়াক্সানথিন | ০% ৩২ μg৮০ μg |
ভিটামিন এ | ৫৪ IU |
থায়ামিন (বি১) | ৩% ০.০৩৭ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৩% ০.০৪১ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ৩% ০.৪১৮ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ২% ০.১২৪ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ৪% ০.০৫২ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ২% ৬ μg |
ভিটামিন সি | ১২% ৯.৭ মিগ্রা |
ভিটামিন ই | ৪% ০.৫৭ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ১৮% ১৯.৩ μg |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ১% ৬ মিগ্রা |
লৌহ | ২% ০.২৮ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ২% ৬ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ১৬% ০.৩৩৬ মিগ্রা |
ফসফরাস | ২% ১২ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ২% ৭৭ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ০% ১ মিগ্রা |
জিংক | ২% ০.১৬৫ মিগ্রা |
অন্যান্য উপাদান | পরিমাণ |
পানি | ৮৪ গ্রাম |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
ব্লুবেরি তাজা ফল অথবা স্বতন্ত্রভাবে হিমায়িত (IQF) ফল, পিউরি, জুস অথবা শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করা হয়। তারপর এগুলো বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য যেমন, জেলি, জ্যাম, ব্লুবেরি পাই, মাফিন, হালকা জলখাবার অথবা ব্রেকাফাস্ট সিরিয়ালের সংযোজন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ব্লুবেরি জ্যাম তৈরি হয় ব্লুবেরি, চিনি, পানি এবং ফলের পেক্টিন। ব্লুবেরি থেকে একধরনের মিষ্টি সস্ বা ব্লুবেরি সস্ও তৈরি করা হয়।
ব্লুবেরির ফল ও খোসা থেকে ব্লুবেরি ওয়াইন তৈরি হয়। এগুলো প্রথমে গাঁজানো হয় তারপর পরিপক্ব হওয়ার জন্য রেখে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে, প্রধানত লোবুশ ব্লুবেরি ব্যবহৃত হয়।
ব্লুবেরির উপাদান হল ১৪% শর্করা, ০.৭% প্রোটিন, ০.৩% চর্বি ও ৮৪% পানি (তালিকা দেখুন)। এতে সামান্য পরিমাণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে, এবং মাঝারি পরিমাণে (দৈনিক পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী) (DV) অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ যেমন, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, খাদ্যআঁশ ইত্যাদি (তালিকা দেখুন) রয়েছে।[5] সাধারণত, ব্লুবেরির পুষ্টি উপাদানগুলো দৈনিক পুষ্টি চাহিদার তুলনায় কম (তালিকা দেখুন)। প্রতি ১০০ গ্রাম ব্লুবেরি থেকে ৫৭ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়, এবং এর দৈনিক গ্লাইসেমিক চাপের মান ১০০ এর মানদণ্ডে ৬।[5]
ব্লুবেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন, অন্যান্য পলিফেনল এবং বিভিন্ন ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যাদের মানবদেহের উপর প্রভাব এখনও প্রাথমিক গবেষণার পর্যায়ে আছে। পলিফেনল সংক্রান্ত বেশিরভাগ গবেষণা হাইবুশ ব্লুবেরির উপর করা হয়েছে (ভি. করিম্বোসাম), যদিও বুনো লো-বুশ প্রজাতিতে (ভি. অ্যাঙ্গাস্টিফোলিয়াম) পলিফেনল ও অ্যান্থোসায়ানিনের পরিমাণ হাইবুশ প্রজাতির থেকে বেশি।[6]
ব্লুবেরি চাষ করা অথবা, বুনো বা অর্ধবুনো ঝোপ থেকে সংগ্রহ করা হতে পারে। উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি চাষ করা প্রজাতি হচ্ছে ভি. করিম্বোসাম বা নর্দার্ন হাইবুশ ব্লুবেরি। এই প্রজাতির অন্যান্য যে সকল সঙ্কর প্রজাতি দক্ষিণ যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুতে অভিযোজিত হয়েছে, তারা সাউদার্ন হাইবুশ ব্লুবেরি নামে পরিচিত।[8]
তথাকথিত "বুনো" (লো-বুুশ) ব্লুবেরি, চাষ করা (হাই-বুশ) ব্লুবেরির চেয়ে আকারে ছোট ও গাঢ় বর্ণের হয়। কেবেকের পশ্চিমে এবং মিশিগান ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার দক্ষিণে আটলান্টিক প্রদেশে লো-বুশ ব্লুবেরি (ভি.অ্যাঙ্গাস্টিফোলিয়াম ) পাওয়া যায়। কয়েকটি এলাকায়, প্রাকৃতিক "ব্লুবেরি বনভুমি" থাকে, যেখানে বিশাল এলাকা জুড়ে একটি আধিপত্য বিস্তারকারী প্রজাতি জন্মায়। অন্টারিওতে কয়েকটি ফার্স্ট ন্যাশনস সম্প্রদায় বুনো ব্লুবেরি সংগ্রহের সাথে জড়িত।
"বুনো" বা ওয়াইল্ড শব্দটি নিয়ন্ত্রিতভাবে উৎপন্ন লোবুশ ব্লুবেরির ফলনের বিপণনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এই ব্লুবেরি ঝোপগুলো রোপণ করা বা জিনগতভাবে প্রভাবিত করা হয় না। তবে এগুলোকে নিয়মিত ছেঁটে দেয়া এবং প্রতি দুই বছর অন্তর পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়।[9]
হাইবুশ ব্লুবেরির অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও গুণাগুণ রয়েছে। ইউএসডিএ-এআরএস মেরিল্যান্ডের বেল্টসভিল ও নিউ জার্সির চ্যাটসওর্থে একটি ব্লুবেরি প্রজনন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচীর সূচনা হয় যখন ইউএসডিএ-এআরএস এর ফ্রেডেরিখ ভারনন কোভিল নিউ জার্সির এলিজাবেথ কোলম্যান হোয়াইট এর সাথে একত্রে কাজ করা শুরু করেন।[10] বিংশ শতকের শুরুর দিকে, হোয়াইট পাইনল্যান্ডের বাসিন্দাদের লক্ষণীয় বড় আকারের ফলের বুনো ব্লুবেরি গাছের বিনিময়ে অর্থপ্রদানের প্রস্তাব করেন।[11] ১৯১০ সালে পর কোভিল ব্লুবেরি নিয়ে কাজ করতে আরম্ভ করেন। তিনি ব্লুবেরি উৎপাদনে মাটির অম্লত্বের ভূমিকা (ব্লুবেরির ফলনে অধিক অম্লত্বের মাটি প্রয়োজন) এবং ব্লুবেরি ও অন্যান্য উদ্ভিদের উপর শৈত্যের প্রভাব আবিষ্কার করেন। তিনি এও আবিষ্কার করেন যে ব্লুবেরির স্বপরাগায়ন ঘটে না।[12] ১৯১১ সালে, তিনি নিউ জার্সি পাইন ভূমির হোয়াইটসবোগে বিশাল ক্র্যানবেরি বোগের মালিকের কন্যা হোয়াইটের সাথে একত্রে একটি গবেষণার কাজ শুরু করেন। তার এই গবেষণার ফলে কয়েকটি প্রজাতির ফলের আকার দ্বিগুণ হয়ে যায়, এবং ১৯১৬ সালের মধ্যে তিনি ব্লুবেরি চাষে সফল হন, যা এটিকে উত্তরপূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসলে পরিণত করে।[13][14] তার এই অবদানের জন্য তাকে ম্যাসাচুসেটস হর্টিকালচার সোসাইটির পক্ষ থেকে জর্জ রবার্টস হোয়াইট মেডাল অফ অনার প্রদান করা হয়।
র্যাবিটআই ব্লুবেরি (ভ্যাকসিনিয়াম ভারগাটাম বৈজ্ঞানিক নাম ভি. আশেই) একটি সাউদারন ব্লুবেরি যা ক্যারোলিনা থেকে গালফ কোস্টের প্রদেশগুলোতে উৎপন্ন হয়। একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে টেক্সাসে র্যাবিটআই ব্লুবেরির উৎপাদনের উপর জোর দেয়া হয়েছিল।[15] উত্তর আমেরিকার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলোর মধ্যে একটি হল ভ্যাকসিনিয়াম প্যালিডাম যা হিলসাইড বা ড্রাইল্যান্ড ব্লুবেরি নামেও পরিচিত। এটি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের অ্যাপালেশিয়া ও পিডমন্টেও এদের পাওয়া যায়। স্পারকলবেরি (ভি. আর্বরিয়াম) দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বেলেমাটিতে জন্মানো একটি বুনো প্রজাতি।
ব্লুবেরির সফল উৎপাদনের জন্য মাটির পিএইচ (অম্লত্ব) সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।[16][17][18]
ব্লুবেরি ঝোপে প্রায়ই সম্পুরক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয়,[17] কিন্তু অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগের ফলে পাতায় বাদামি ছোপ দেখা দিতে পারে যা গাছের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করে।[16][17]
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, মেরিল্যান্ড, পশ্চিম অরিগন, মিশিগান, নিউ জার্সি, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং ওয়াশিংটনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হাইবুশ ব্লুবেরির উৎপাদন হয়। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়, কানেটিকাট, নিউ হ্যাম্প্শায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং মেইন থেকে উদ্ভূত সাউদার্ন হাইবুশ ব্লুবেরির বিভিন্ন প্রজাতি ক্যালিফোর্নিয়ায় চাষ করা হয়। মেক্সিকো, পেরু, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, এবং স্পেনেও উল্লেখযোগ্য উৎপাদন করা হয়।[19][20]
২০১৮ সালে, অরিগনে সবথেকে বেশি পরিমাণ ব্লুবেরি চাষ হয়, যার রেকর্ড ছিল ১৩১ মিলিয়ন পাউন্ড (৬০ মিলিয়ন কেজি)। এটি ওয়াশিংটনে উৎপাদিত পরিমাণের থেকে সামান্য বেশি ছিল।[21] ২০১৭ সালে উৎপাদিত পরিমাণের অধঃক্রম অনুসারে অন্যান্য প্রধান উৎপাদনকারী প্রদেশগুলো ছিল জর্জিয়া, মিশিগান, নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া এবং নর্থ ক্যারোলাইনা।[22]
নিউ জার্সির হ্যামনটন শহরকে "বিশ্বের ব্লুবেরি রাজধানী" বলা হয়,[23] যেখানে নিউ জার্সির চাষকৃত ব্লুবেরির ৮০% এরও বেশি উৎপাদিত হয়। [24] প্রতি বছর এই শহরে ফলটিকে উদযাপন করে একটি বিশাল উৎসবের আয়োজন করা হয় যাতে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। [25]
লোবুশ (বুনো) ও হাইবুশ দুরকম ব্লুবেরিই উৎপাদন হওয়ার ফলে, মেইনে সমগ্র উত্তর আমেরিকার মোট ব্লুবেরির ১০% উৎপন্ন হয়। এখানে ৪৪,০০০ হেক্টর (১,১০,০০০ একর) জমিতে চাষ হলেও, ছাটাইয়ের পদ্ধতির পার্থক্যের জন্য এর মাত্র অর্ধেক জমির ফসল তোলা হয়।[26] বুনো ব্লুবেরি ম্যাইনের সরকারী ফল [27]
২০১৫ সালে কানাডায় ১৬৬,০০০ টন বুনো এবং চাষ করা ব্লুবেরির উৎপাদন হয়। এর অর্থমূল্য ছিল ২৬২ মিলিয়ন ডলার, যা দেশটিতে উৎপন্ন ফলের মূল্যের মধ্যে সবথেকে বেশি (২৯%)।[28]
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কানাডার সবথেকে বেশি ব্লুবেরি উৎপন্ন হয়, ২০১৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭০,০০০ টন। অঞ্চল ভিত্তিতে এখানেই বিশ্বের সবথেকে বেশি ব্লুবেরি উৎপাদন হয়।[29]
আটলান্টিক কানাডায় উত্তর আমেরিকার বুনো/লোবুশ ব্লুবেরির মোট বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক উৎপন্ন হয়। ২০১৫ সালে নিউ ব্রান্সউইকে এর মধ্যে সবথেকে বেশি উৎপাদন হয়, যা ২০১৬ সালে আরও বৃদ্ধি পায়।[30] নোভা স্কশিয়া, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ ও কেবেকেও প্রধান উৎপাদনকারী অঞ্চল।[31] নোভা স্কশিয়া ব্লুবেরিকে এদের আনুষ্ঠানিক প্রাদেশিক বেরির স্বীকৃতি দিয়েছে,[32] এবং নোভা স্কশিয়ার অক্সফোর্ড, কানাডার বুনো ব্লুবেরির রাজধানী নামে পরিচিত।[33]
কিউবেক বুনো ব্লুবেরির একটি প্রধান উৎপাদন অঞ্চল, বিশেষ করে সাগুনায়-ল্যাক-সেন্ট-জিন (এ এলাকার বাসিন্দাদের একটি প্রচলিত নাম ব্লেওয়েট অর্থাৎ "ব্লুবেরি") এবং কোট-নর্ড অঞ্চল যেখানে মিলিতভাবে কুবেকের মোট প্রাদেশিক উৎপাদনের ৪০% উৎপন্ন হয়। প্রদেশের ছোট অঞ্চলগুলোতে বুনো ব্লুবেরির বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, হিমায়িত সংরক্ষণ, বিপণন ও পরিবহন আনুভূমিক সংযুক্তিকরণের ফলে লাভজনক হয়।[34] গড়ে কিউবেকের ৮০% বুনো ব্লুবেরি (২১ মিলিয়ন কেজি) খামারে, এবং বাকি ২০% উন্মুক্ত বনজঙ্গলে উৎপন্ন হয়। [34] কিউবেকের প্রায় ৯৫% বুনো ব্লুবেরি ফসল প্রদেশের বাইরে রপ্তানির জন্য হিমায়িত করা হয়।[34]
ইউরোপে হাই-বুশ ব্লুবেরির প্রথম প্রচলন ঘটে ১৯৩০-এর দশকে জার্মানি, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডসে। এরপর তা ধীরে ধীরে লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তনিয়া, রোমানিয়া, পোল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে।[2] পোল্যান্ড, জার্মানি এবং ফ্রান্স ২০১৪ সালে ইউরোপের বৃহত্তম উৎপাদনকারী ছিল (তালিকা দেখুন)।
দক্ষিণ গোলার্ধে, পেরু, চিলি, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ও অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে ব্লুবেরি চাষ হয়।
১৯৫০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ায় সর্বপ্রথম ব্লুবেরির প্রবর্তন হয়, তবে সেই চেষ্টা তখন সফল হয়নি। ১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে ভিক্টোরিয়ার কৃষি অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বীজ আমদানি করে এবং একটি পরীক্ষামূলক চাষ শুরু হয়। এই প্রকল্পটি ৭০-এর দশকের মাঝামাঝি অস্ট্রেলিয়ান ব্লুবেরি গ্রোয়ারস আসোসিয়েশন গঠন হওয়ার আগ পর্যন্ত চলে।[35]
একবিংশ শতাব্দীতে, আর্জেন্টিনায় ব্লুবেরি শিল্প তৈরি হয়। ২০০৫ সালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়: "বিগত তিন বছরে আর্জেন্টাইন ব্লুবেরির উৎপাদন বেড়েছে এবং চাষের জমির পরিমাণ ৪০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে"।[36] সেখানে আরও বলা হয়, "আর্জেন্টাইন ব্লুবেরির উৎপাদন চারটি ভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে: উত্তরপূর্ব আর্জেন্টিনার এন্ত্রে রিওস প্রদেশ, তুকুমান প্রদেশ, বুয়েনস এয়ার্স প্রদেশ ও দক্ষিণ পাতাগোনিয়ান উপত্যকা"। [37] ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল লেবার অ্যাফেয়ারস-এর ২০১৪ সালের শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনায় এই ধরনের পরিবেশে উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ব্লুবেরিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[38]
চিলিতে ব্লুবেরি উৎপাদন উত্তরে কোপিয়াপো থেকে দক্ষিণে পুয়ের্তো মন্ট পর্যন্ত বিস্তৃত, যার ফলে এখানে অক্টোবর থেকে মার্চ মাসের শেষ পর্যন্ত ব্লুবেরি উৎপন্ন হয়। এ কারণে রপ্তানি মূল্যমানের দিক থেকে ব্লুবেরি সেখানকার চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ফল। এখানে উৎপন্ন ব্লুবেরি প্রধানত উত্তর আমেরিকাতে (৭৯%) রপ্তানি হয়, এছাড়া ইউরোপ (১৭%) এবং এশিয়াতেও (দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপান) পাঠানো হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ব্লুবেরি উৎপাদন – ২০১৭ | |
---|---|
দেশ | (টন) |
২০১৭ সালে, সারা বিশ্বব্যাপী ব্লুবেরির উৎপাদন হয় (হাই-বুশ ও লো-বুশ মিলিয়ে) ৫৯৬,৮১৩ টন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র মোট উৎপাদনের ৪০% আর কানাডা ২৭% উৎপন্ন করে।[20] ২০১৬ সালে, কানাডা বুনো ব্লুবেরির বৃহত্তম উৎপাদনকারী ছিল, যা প্রধানত কেবেক ও আটলান্টিক অঙ্গরাজ্য থেকে আসত।[39] কিন্তু ২০১৭ সালে হাইবুশ ব্লুবেরির উৎপাদন লাভজনক হওয়ায়, বুনো ব্লুবেরির উৎপাদন প্রচেষ্টায় পরিবর্তন আসা শুরু হয়।[40]
ব্লুবেরির মান নির্ণয় করতে কানাডায় ব্যবহৃত একমাত্র মানদণ্ডটি হচ্ছে "কানাডা নং ১"। এদের সবকয়টিকে আকার, আকৃতি, ওজন ও বর্ণে একই রকম হতে হবে, এবং একইসাথে মোট পরিমাণের ৩% এর বেশি ত্রুটিপূর্ণ ব্লুবেরি থাকতে পারবে না। ৯০% বেরির রঙ পরিপক্ব ব্লুবেরির মত হতে হবে। এছাড়াও কানাডা নং ১ ব্লুবেরি শুষ্ক ও ভালো অবস্থায় সংরক্ষিত হতে হবে এবং কোন রকম কাঁচা ফল, পাতা, বোঁটা, ময়লা, পোকামাকড়, পোকার লার্ভা, রোগজীবাণু অথবা অন্য কোন বাহ্যিক উপাদান থাকতে পারবে না।[41][42]
"বুনো" কথাটি সাধারণত সমস্ত লো-বুশ ব্লুবেরির বিপণনের জন্য ব্যবহৃত হলেও, এর দ্বারা এটি ইঙ্গিত করে না যে এই ধরনের ব্লুবেরি কীটনাশক থেকে মুক্ত।[43]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.