ভাইরাস
এক প্রকার অতিক্ষুদ্র জৈব অণুজীব / From Wikipedia, the free encyclopedia
ভাইরাস (Virus) হলো অতিক্ষুদ্র সংক্রামক কারক যা শুধুমাত্র একটি জীবন্ত কোষের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ভাইরাস উদ্ভিদ, প্রাণী থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়া, আর্কিয়া সহ সকল জীবজগতকে আক্রান্ত করে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি বাস্তুতন্ত্রেই ভাইরাস পাওয়া যায় এবং এরা হলো সবচেয়ে বহুল সংখ্যক জৈবিক সত্ত্বা। ১৮৯২ সালে দিমিত্রি ইভানভস্কি তামাক গাছের একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত নয় এমন রোগের বর্ণনা করার পর এবং ১৮৯৮ সালে মার্টিনাস বেইজেরিংক তামাকের মোজাইক ভাইরাস আবিষ্কারের পর থেকে, লক্ষাধিক ভাইরাস প্রজাতির মধ্যে ১১,০০০ এরও বেশি প্রজাতিকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ভাইরোলজি নামে পরিচিত যা মাইক্রোবায়োলজির একটি উপশাখা।
ভাইরাস | |
---|---|
SARS-CoV-2, করোনাভাইরিনে (Coronavirinae) উপপরিবারের একজন সদস্য | |
ভাইরাসের শ্রেণীবিন্যাস | |
অপরিচিত শ্রেণী (ঠিক করুন): | ভাইরাস |
ভাইরাস জগৎ | |
|
ভাইরাস আক্রান্ত হলে, একটি হোস্ট কোষ প্রায়শই আসল ভাইরাসের হাজার হাজার কপি দ্রুত তৈরি করতে বাধ্য হয়। যখন সেলের অভ্যন্তরে সংক্রমিত হয় না, তখন ভাইরাসরা স্বতন্ত্র ভাইরাল কণা বা ভিরিয়ন হিসেবে থাকে। এই ভিরিয়নে থাকে: (i) জিনগত উপাদান অর্থাৎ DNA বা RNA এর দীর্ঘ অণু যা ভাইরাসটির কার্যপ্রণালীর প্রোটিনগুলির গঠনকে এনকোড করে; (ii) একটি প্রোটিন আবরণ, ক্যাপসিড, যা জিনগত উপাদানকে ঘিরে রাখে এবং সুরক্ষিত করে; এবং কিছু ক্ষেত্রে (iii) লিপিডের একটি বাইরের খাম। এই ভাইরাস কণার আকারগুলি সরল হেলিক্যাল এবং আইকোসাহেড্রাল ফর্ম থেকে আরও জটিল কাঠামো পর্যন্ত হতে পারে। বেশিরভাগ ভাইরাস প্রজাতির ভিরিয়ন এত ছোট হয় যে অপটিক্যাল মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখা যায় না এবং এটি বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়ার আকারের এক-শততমাংশ।
জীবনের বিবর্তনীয় ইতিহাসে ভাইরাসের উৎপত্তি এখনও স্পষ্ট নয়। কিছু ভাইরাস প্লাজমিড থেকে বিবর্তিত হতে পারে (প্লাজমিড হলো DNA এর টুকরা যা কোষের মধ্যে চলাচল করতে পারে)। অন্যান্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে বিবর্তিত হতে পারে। বিবর্তনে, ভাইরাস হলো আনুভূমিক জিন স্থানান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যা যৌন প্রজননের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ উপায়ে জিনগত বৈচিত্র্য বাড়ায়। ভাইরাসকে কিছু জীববিজ্ঞানী জীবন রূপ হিসাবে বিবেচনা করেন, কারণ তারা জিনগত উপাদান বহন করে, বংশবৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়। যদিও তাদের কিছু গুণাবলী রয়েছে যেগুলিকে সাধারণত জীবন সংজ্ঞায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় মূল বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেমন কোষের গঠন অভাব ইত্যাদি। যেহেতু তাদের কিছু গুণ আছে কিন্তু সব নেই, তাই ভাইরাসকে "জীবনের প্রান্তে থাকা জীব" (organisms at the edge of life) এবং রেপ্লিকেটর হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ভাইরাস অনেকভাবে ছড়ায়। একটি সংক্রমণের পথ হলো রোগ-বাহী জীবের মাধ্যমে যেগুলো ভেক্টর নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ভাইরাসগুলি প্রায়শই পোকামাকড় দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে যেগুলো গাছের রস খায়, যেমন এফিডস; এবং প্রাণীর ভাইরাস রক্ত-চোষা পোকামাকড় দ্বারা বহন করা যেতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, SARS-CoV-2, চিকেনপক্স, গুটিবসন্ত এবং হামসহ অনেক ভাইরাস কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। নরোভাইরাস এবং রোটাভাইরাস, ভাইরাল গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসের সাধারণ কারণ, মল-মুখের পথে সংক্রমিত হয়। অর্থাৎ হাত থেকে মুখের সংস্পর্শে বা খাবার বা পানিতে ছড়িয়ে যেতে পারে। মানুষের মধ্যে সংক্রমণ তৈরি করতে প্রয়োজনীয় নরোভাইরাসের সংক্রামক ডোজ ১০০ কণারও কম। HIV হলো বেশ কিছু ভাইরাসের মধ্যে একটি যা যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এবং সংক্রমিত রক্তের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। ভাইরাসের একটি হোস্ট সেলের সংস্থানের পরিসরকে তার হোস্ট রেঞ্জ বলে: এটি ভাইরাসের জন্য সংকীর্ণ, যা শুধুমাত্র কয়েকটি প্রজাতিকে সংক্রমিত করতে পারে অথবা বহু প্রজাতিকে আক্রান্ত করতে সক্ষম এমন ভাইরাসগুলির জন্য বিস্তৃত হতে পারে।
প্রাণীদের মধ্যে ভাইরাল সংক্রমণ একটি অনাক্রম্য (Immunity) প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যা সাধারণত সংক্রামিত ভাইরাসকে নির্মূল করে। টিকা দিয়েও অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া তৈরি করা যেতে পারে, যা নির্দিষ্ট ভাইরাল সংক্রমণের বিরুদ্ধে একটি কৃত্রিমভাবে অর্জিত অনাক্রম্যতা দেয়। কিছু ভাইরাস, যার মধ্যে রয়েছে HIV/AIDS, HPV সংক্রমণ এবং ভাইরাল হেপাটাইটিস, এই অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়াগুলি এড়িয়ে যায় এবং এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ হয়। বেশ কয়েকটি শ্রেণীর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ তৈরি করা হয়েছে।