শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
ভীমবেটকা প্রস্তরক্ষেত্র
ভীমবেটকা গুহা। মধ্যপ্রদেশ। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
ভীমবেটকা প্রস্তরক্ষেত্র মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকায় (ভীমবৈঠক) প্রস্তর যুগের একটি গুহাচিত্র। এটাই ভারতের সবচেয়ে পুরনো সভ্যতার নিদর্শন। এটি ২০০৩-এ অন্যতম ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে নির্বাচিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের পদার্পণের প্রথম চিহ্ন উদ্ধার করা গেছে এখান থেকে, এবং সেই সূত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রস্তর যুগের সূচনার সময়কালও এই প্রস্তরক্ষেত্রে প্রাপ্ত নিদর্শন অনুযায়ীই নির্ণয় করা হয়। ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের রায়সেন জেলার আবদুল্লাগঞ্জ শহরের কাছে রাতাপানি ব্যাঘ্র অভয়ারণ্যের মধ্যে এটি অবস্থিত। এর মধ্যে অন্তত কোনো কোনো গুহায় আজ থেকে আনুমানিক ১ লক্ষ বছর আগে হোমো ইরেক্টাসের বসতি ছিল।[১][২] ভীমবেটকায় প্রাপ্ত কোনো কোনো গুহাচিত্রের বয়স আনুমানিক ৩০, ০০০ বছর।[৩]
ভীমবেটকা (भीमबैठका) নামটির সাথে মহাভারতের অন্যতম নায়ক ভীমের সম্বন্ধ আছে।[৪] এর অর্থ করা যায় "ভীমের উপবেশন স্থল"।[৪]
Remove ads
অবস্থান

মধ্য প্রদেশের রায়সেন জেলায়, ভোপাল শহরের ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ভীমবেটকার অবস্থান। এর দক্ষিণ দিকে সাতপুরা পর্বতের একের পর এক শৈলশ্রেণী অবস্থিত।
সমগ্র অঞ্চলটি ঘন বনাঞ্চলের অন্তর্গত, প্রাকৃতিক সম্পদে (প্রাণী ও উদ্ভিদ) সমৃদ্ধ এবং অনেকাংশে অস্ট্রেলিয়ার কাকাড়ু জাতীয় উদ্যান, কালাহারি মরুভূমির বুশম্যান-দের গুহাচিত্র এবং ফ্রান্সের লাস্কো গুহাচিত্রের অনুরূপ।[৫]
Remove ads
আবিষ্কার
ভীমবেটকাকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে প্রকাশিত ইউনেস্কোর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নথিতে এই স্থানটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৮৮৮ খ্রিঃ, একটি বৌদ্ধ মঠ জাতীয় কিছু হিসেবে। স্থানীয় আদিবাসীদের কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীকালে ভি.এস.বাকঙ্কর ট্রেনে করে ভোপাল যাওয়ার পথে এই অঞ্চলে স্পেন ও ফ্রান্সে দেখা প্রস্তরক্ষেত্রের অনুরূপ গঠন দেখতে পান। ১৯৫৭ তে পুরাতাত্ত্বিকদের একটি দল নিয়ে ঐ অঞ্চলে উপস্থিত হন এবং অনেকগুলো প্রাগৈতিহাসিক গুহা-বসতি আবিষ্কার করেন।[৬]
সেই থেকে এই রকম ৭৫০ টির বেশি গুহা-বসতি আবিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৪৩ টি ভীমবেটকা অঞ্চলে এবং ১৭৮ টি লাখা জুয়ার অঞ্চলে। পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলটি থেকে প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার প্রমাণ মিলেছে (অন্ত্য আশুলিয়ান থেকে মধ্য প্রস্তর যুগের শেষভাগ পর্যন্ত)। বিশ্বের প্রাচীনতম পাথরের মেঝে ও দেওয়ালও এখানেই দেখা গেছে।
ভীমবেটকায় প্রাপ্ত বেশ কিছু নিদর্শনের কাঁচামাল নিকটবর্তী বারখেড়া অঞ্চল থেকে সংগৃহীত বলে নির্ণয় করা হয়েছে।[৭]
Remove ads
গুহাশিল্প ও গুহাচিত্র
সারাংশ
প্রসঙ্গ
ভীমবেটকার গুহা-বসতি ও গুহাগুলোয় বহুসংখ্যক ছবি পাওয়া গেছে। সবচেয়ে প্রাচীন ছবিগুলো আনুমানিক ৩০,০০০ বছর প্রাচীন, কিন্তু নতুন কয়েকটা মধ্যযুগেও আঁকা হয়েছে। আঁকায় ব্যবহৃত রঙ উদ্ভিজ্জ, এবং সময়ের সাথে সাথে এই রঙ ক্ষয় না পাওয়ার কারণ হল এই যে, ছবিগুলো আঁকা হত গুহার গভীর অংশের দেওয়ালের গায়ে। প্রাপ্ত ছবিগুলোকে সময় অনুযায়ী সাত ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথম যুগ- (উচ্চ প্যালিওলিথিক): সবুজ ও গাঢ় লাল রেখাচিত্র, বিষয়বস্তু বৃহদাকার পশু, যেমন বাইসন, বাঘ, গণ্ডার ইত্যাদি।
দ্বিতীয় যুগ- (মধ্য প্রস্তর যুগ): অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের ছবি, ছবির মধ্যে রেখার নকশা। জীবজন্তু ছাড়াও আছে মানুষের ছবি ও শিকারের ছবি। শিকারের দৃশ্যে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের পরিষ্কার ছবি দেখা যায়: কাঁটাওয়ালা বর্শা, ছুঁচলো লাঠি ও ধনুর্বাণ। গোষ্ঠীগত নাচ, পাখি, বাজনা, মা ও শিশু, গর্ভবতী মহিলা, মৃত পশু কাঁধে পুরুষ, পানভোজন ও মৃতের সমাহিতকরণের ছবি সমঞ্জসভাবে অঙ্কিত আছে।
তৃতীয় যুগ- (তাম্র যুগ): অন্যান্য স্থানে প্রাপ্ত তাম্র যুগের ছবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সময়ের ছবি থেকে বোঝা যায় সমসাময়িক গুহাবাসীরা মালওয়া সমভূমির কৃষিজীবীদের সাথে বিনিময় প্রথায় যোগাযোগ রাখত।
চতুর্থ ও পঞ্চম যুগ- (প্রাথমিক ঐতিহাসিক): এই সময়কার ছবিতে স্পষ্ট নান্দনিক সামঞ্জস্যের চিহ্ন পাওয়া যায়। ব্যবহৃত রঙ প্রধানত লাল, সাদা ও হলুদ। ঘোড়সওয়ার, ধর্মচিহ্ন, আলখাল্লা-সদৃশ পোশাক এবং বিভিন্ন সময়ের লিপির নিদর্শন এখান থেকে পাওয়া যায়। যক্ষ মূর্তি, বৃক্ষদেবতা এবং আকাশ-রথের ছবি থেকে ধর্মবিশ্বাসের প্রমাণ মেলে।
ষষ্ঠ ও সপ্তম যুগ- (মধ্যযুগ): এই ছবিগুলো জ্যামিতিক ও সুসংবদ্ধ হলেও শৈল্পিক উৎকর্ষের অবক্ষয়ের পরিচয় দেয়। ব্যবহৃত রঙ প্রস্তুত হত ম্যাঙ্গানিজ, হেমাটাইট ও কাঠকয়লার সংমিশ্রণে।
"চিড়িয়াখানা পাথর" বলে পরিচিত একটা পাথরে হাতি, সম্বর হরিণ, বাইসন ও হরিণের ছবি পাওয়া গেছে। আর একটা পাথরে একটা ময়ূর, একটা সাপ, একটা হরিণ আর সূর্যের ছবি পাওয়া গেছে। আরও একটা পাথরে দাঁতওয়ালা দুটো হাতি পাওয়া গেছে। প্রাগৈতিহাসিক ছবির মধ্যে ধনুর্বাণ ও ঢাল-তলোয়ার ব্যবহারকারী শিকারীদের দেখা যায়।
চিত্রশালা
- পাথরের কচ্ছপ, প্রস্তরক্ষেত্রের ঠিক বাইরে থেকে
- ফুল ও একটা ঘোড়ার ছবি
- ভীমবেটকায় প্রাপ্ত শিংওয়ালা শূকরের দ্বারা "মানুষ" শিকারের একমাত্র ছবি
- ঘোড়সওয়ার; ভীমবেটকা গুহাচিত্র
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads