মিসৌরি নদী
From Wikipedia, the free encyclopedia
মিসৌরি নদী ( Missouri River) উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী। মিসৌরি নদী পশ্চিম মনটানার রকি পর্বতমালার উপর দিয়ে পূর্ব হতে দক্ষিণ দিকে ২,৩৪১ মাইল (৩,৭৬৭ কি.মি.) প্রবাহিত হয়ে মিসৌরির সেন্ট লুইস বা সেইন্ট লুইস শহরের উত্তরে মিসিসিপি নদীতে গিয়ে মেশে। মিসৌরি নদীর একটি জলপ্রণালী ৫ লক্ষ বর্গমাইল বা ১৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দশটি রাজ্য ও কানাডার ২টি প্রদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই এলাকাগুলো স্বল্প বৃষ্টিপাতসম্পন্ন বা অর্ধ শুষ্ক জলবায়ু বিশিষ্ট এলাকা বলে জলপ্রণালীটিকে 'সেমি অ্যারিড(semi-arid)' জলপ্রণালী বলা হয়। যদিও এ নদীটি মিসিসিপি নদীর একটি শাখা নদী, কোন শাখা নদীর সাধারণ আকারের তুলনায় মিসৌরি নদী অনেক বড় এবং এর পানির পরিমাণও অনেক বেশি। এ নদীটি মিসিসিপি নদীর নিম্নাঞ্চলের সাথে মিশে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রিভার সিস্টেম(অনেকগুলো জলপ্রণালী একত্রে মিশে সৃষ্ট একটি নদীপথ যা সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে মেশে) গঠন করে।
মিসৌরি নদী | |
---|---|
ব্যুৎপত্তি | The Missouri tribe, whose name in turn meant "people with wooden canoes"[1] |
স্থানীয় নাম | Mnišoše[4][5] {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: প্যারামিটারের মান ত্রুটিপূর্ণ (সাহায্য) |
১২,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিসৌরি নদী এবং এর শাখা নদীগুলোকে নদীর তীরবর্তী জনগণ তাদের জীবিকা নির্বাহ ও পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। দশটিরও বেশি আদি আমেরিকান জাতিগোষ্ঠী এই নদীর জলপ্রণালীর তীরে বসতি গড়ে তুলেছে। এই আদি আমেরিকানদের বেশিরভাগই যাযাবর। এরা মূলত গ্রেট প্লেইনস এলাকায় বিচরণকারী বাইসনের পালগুলোর উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করে। এই এলাকায় ইউরোপিয়ানদের প্রথম আগমন ঘটে ১৭ শতকের শেষের দিকে এবং স্প্যানিশ ও ফরাসিদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পর লুইসিয়ানা পারচেসের মাধ্যমে এটি আবার যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ হয়। ফরাসিদের দ্বারা দখলকৃত উত্তর আমেরিকার একটি রাজ্যের নাম ছিল নিউ ফ্রান্স যার একটি প্রশাসনিক অঞ্চলের নাম ছিল লুইসিয়ানা (আমেরিকার বর্তমানের লুইসিয়ানা প্রদেশ)। ১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে নিউ ফ্রান্স হতে লুইসিয়ানা প্রদেশকে কিনে নেয়, যে ঘটনাটি লুইসিয়ানা পারচেস(Louisiana Purchase) নামে পরিচিত।
১৯ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠার সময় মিসৌরি নদীকে যাতায়াতের একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। ১৯ শতকের শুরুর দিকে পশম বাণিজ্যের মাধ্যমে এখানকার অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে উঠতে শুরু করে। এর ফলে এই এলাকায় শিকারিদের সংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। এ অঞ্চলের ১ম অদিবাসীরা মূলত ইউরোপিয়ান আমেরিকান এবং আফ্রিকান আমেরিকান ছিল। ১৮৩০ সালে এই অধিবাসীরা আরো পশ্চিমের দিকে যাত্রা শুরু করে, ১ম দিকে কভার্ড ওয়াগন এবং পরবর্তীতে বাষ্পচালিত নৌকার মাধ্যমে। এক পর্যায়ে মিসৌরি নদীর জলপ্রণালীর তীরে বসবাসকারী আদি আমেরিকান জাতিগোষ্ঠীর সাথে এদের সংঘাত শুরু হয় যা রীতিমতো আমেরিকান-ইন্ডিয়ান যুদ্ধ অর্থাৎ ১৭ থেকে ২০ শতক পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় সংঘটিত ইউরোপিয়ান, আমেরিকান ও কানাডিয়ান সরকার,উপনিবেশবাসী ও অধিবাসী বনাম বিভিন্ন আদি আমেরিকান ও আমেরিকান ইন্ডিয়ান উপজাতির মধ্যবর্তী যুদ্ধের একটি অংশে পরিণত হয়।
২০ শতকের সময়, মিসৌরি নদীর অববাহিকা সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। নদীর মূল অংশে মোট ১৫টি বাঁধ এবং শাখা নদীগুলোতে কয়েকশোর মতো বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য আঁকাবাঁকা নদীপথগুলোকে কৃত্রিমভাবে পরিশোধন করা হয়। এর ফলে নদীটির দৈর্ঘ্য ২০০ মাইল(৩২০ কিলোমিটার)-এর মতো কমে গিয়েছে। মিসৌরি নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলটি বর্তমানে একটি জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে এবং এ এলাকাটিতে কৃষি ও শিল্প উভয় খাতেই প্রচুর উৎপাদন হয়। তবে এই নগরায়ণের ফলে এলাকাটির বন্যজীবন, পানির বিশুদ্ধতা এবং মাছের পরিমাণে বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে যা এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, মিসৌরি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনো অসংখ্য মানুষকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।