সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র
তালিকা / From Wikipedia, the free encyclopedia
সত্যজিৎ রায় (২ মে, ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল, ১৯৯২) ছিলেন এক ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম।[1] সত্যজিৎ রায় জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার এক বাঙালি পরিবারে। তিনি নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞাপনের জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে।[2] ১৯৪৯ সালে ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক জঁ রনোয়ার কলকাতায় দ্য রিভার ছবির শ্যুটিং করতে এলে, তার সঙ্গে সত্যজিতের সাক্ষাৎ ঘটে। ১৯৫০ সালে লন্ডনে গিয়ে সত্যজিৎ ভিত্তোরিও দে সিকার লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (বাইসাইকেল থিভস) ছবিটি দেখেন। এই দু’টি ঘটনাই তাঁকে চলচ্চিত্র পরিচালক হতে অনুপ্রাণিত করেছিল।[3][4] সত্যজিৎ রায় পরিচালিত প্রথম ছবি পথের পাঁচালী মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। তিনি মোট ৩৬টি ছবি পরিচালনা করেন। এর মধ্যে ২৯টি ছিল কাহিনিচিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি।
সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র সাধারণভাবে সমালোচকদের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছে।[5][6] তবে তাঁর পরিচালিত পথের পাঁচালী ও অশনি সংকেত (১৯৭৩) ছবি দু’টির বিরুদ্ধে "দারিদ্র্য রফতানি" ও "বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করার" অভিযোগ করা হয়েছিল।[5][7] ২০০৫ সালে তার অপু ত্রয়ী (১৯৫৫-১৯৫৯) টাইম পত্রিকার সর্বকালীন ১০০ চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পেয়েছে।[8] পরিচালনা ছাড়াও তিনি নিজের ও অন্যান্য পরিচালকদের ছবিতে চিত্রনাট্য রচনা এবং সুরারোপের কাজও করেছেন।[9] এছাড়া সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন লেখক, অলংকরণ শিল্পী ও চারুলিপিকর। তিনি বাংলা ভাষায় বেশ কিছু ছোটো গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলির অধিকাংশই শিশু ও কিশোরদের উপযোগী করে লেখা।[10][11] তার ছোটো গল্পগুলি অবলম্বনে তিনি এবং তার একমাত্র পুত্র সন্দীপ রায় সহ একাধিক পরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সত্যজিৎ রায়কে ভারতের অন্যতম সাংস্কৃতিক আইকন হিসেবে গণ্য করা হয়। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[12] ওয়েস আন্ডারসন, মার্টিন স্কোরসেজি,[13][14] জেমস আইভরি,[15] ফ্রঁসোয়া ত্রুফো[16] ও কার্লোস সরার[17] মতো একাধিক বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় কর্তৃক অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
সত্যজিৎ রায় অন্য আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। এগুলির মধ্যে অন্যতম দি এলিয়েন (এই ছবিটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে স্টিভেন স্পিলবার্গ ১৯৮২ সালে ই.টি. ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন);[18][19] ভারতীয় সেতার বাদক রবি শংকরের উপর একটি তথ্যচিত্র;[20] ভারতীয় মহাকাব্য মহাভারত অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র; এবং ১৯২৪ সালে এডওয়ার্ড মরগ্যান ফরস্টারের লেখা উপন্যাস আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া অবলম্বনে একটি ছবি। যদিও এই ছবিগুলির কাজ শুরুর আগেই ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যু ঘটে।[21]
সত্যজিৎ রায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে এবং অন্যত্র অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার পাওয়া এই পুরস্কারগুলির মধ্যে ছিল ভারতের একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৯৯২ সালে ৬৪তম অ্যাকাডেমি পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রদত্ত একটি সাম্মানিক অ্যাকাডেমি পুরস্কার।[22] ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায় ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর ১৯৯২ সালে তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন।[23][24]