সিডনি
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী শহর / From Wikipedia, the free encyclopedia
সিডনি (ইংরেজি: Sydney) অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েল্সের রাজধানী এবং অস্ট্রেলিয়া তথা ওশেনিয়ার বৃহত্তম ও জনবহুল শহর।[7] শহরটি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের জ্যাকসন বন্দরকে ঘিরে অবস্থিত। শহরটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে পশ্চিমের ব্লু পর্বতমালার দিকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার ( ৪৩.৫ মাইল ) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর উত্তরে হকসবেরি শহর, দক্ষিণে রয়াল ন্যাশনাল পার্ক বা রাজকীয় জাতীয় উদ্যান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ম্যাকার্থার শহর।[8] সিডনিতে ৬৫৮টি উপশহর, ৩৩ টি স্থানীয় সরকার অঞ্চল এবং ১৫টি সংলগ্ন অঞ্চল বা রিজিয়ন আছে। সিডনির অধিবাসীদেরকে স্থানীয় ইংরেজি ভাষায় "সিডনিসাইডার্স" নামে ডাকা হয়।[9] ২০১৯ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী সিডনি মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫৩ লক্ষ ( ৫৩১২১৬৩ জন ) ।[10] এখানে নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের প্রায় ৬৫% জনগণ বাস করে।[11]
সিডনি Sydney নিউ সাউথ ওয়েলস | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক | ৩৩°৫১′৫৪″ দক্ষিণ ১৫১°১২′৩৪″ পূর্ব | ||||||||
জনসংখ্যা | ৫১,৩১,৩২৬ (২০১৭)[1] (১ম) | ||||||||
• জনঘনত্ব | ৪১৫/বর্গ কি.মি. (১,০৭০/ব.মা.) (২০১৭)[2] | ||||||||
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ২৬শে জানুয়ারি ১৭৮৮ | ||||||||
আয়তন | ১২,৩৬৭.৭ বর্গ কি.মি.(৪,৭৭৫.২ বর্গমাইল)(GCCSA)[3] | ||||||||
সময় অঞ্চল | অপূমাস (AEST) (UTC+10) | ||||||||
• দিবালোক সংরক্ষণ সময় | অপূগ্রীস (AEDT) (UTC+11) | ||||||||
অবস্থান | |||||||||
স্থানীয় সরকার | বিভিন্ন (৩১) | ||||||||
প্রশাসনিক বিভাগ | কাম্বারল্যান্ড[4] | ||||||||
রাজ্য নির্বাচনী এলাকা | বিভিন্ন (৪৯) | ||||||||
কেন্দ্রীয় বিভাগ | বিভিন্ন (২৪) | ||||||||
| |||||||||
পাদটীকা | স্থানাঙ্ক:[6] |
সিডনি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন এবং বড় শহর। প্রযুক্তির শহরও বলা চলে সিডনিকে। অস্ট্রেলিয়ার বড় বড় কোম্পানির প্রধান অফিস সিডনিতে। বিশাল বিশাল বিল্ডিং দেখলেই বুঝা যায় যে সিডনি একটা ব্যবসায়িক শহর। জ্ঞানের শহর ও বলা হয় সিডনিকে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় অনেক সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার আছে। এছাড়া রাস্তাতেও ফ্রি গ্রন্থাগার রয়েছে। বই নিয়ে পড়ে আবার ওইখানে ফেরত দেয়া যায়। [12]
আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানরা প্রায় ৩০,০০০ বছর ধরে সিডনি এলাকায় বসবাস করেছে , এবং তাদের সহস্রাধিক নিদর্শন সিডনিকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছে ।
ইউরোপীয় যোগাযোগের সময়, প্রায় ২৯ টি গোষ্ঠী এখানে বাস করত । ১৭৭০ সালে , লেফটেন্যান্ট জেমস কুক ও তার সহযাত্রীরা প্যাসিফিক যাত্রার সময় প্রথম অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলে বোটানি বে'তে নোঙর করেন এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এদিকে আকৃষ্ট হয় । ১৭৮৮ সালে আর্থার ফিলিপ প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপীয়দের কলোনী প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি একে টমাস টাউনশ্যান্ড , প্রথম ভিসকাউন্ট সিডনির নামে ' সিডনি ' নামকরণ করেন । ১৮৪২ সালে সিডনি শহর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার পর নিউ সাউথ ওয়েলসে দন্ডপ্রাপ্তদের নির্বাসিতকরণের অবসান ঘটে । পরবর্তী এক শতক সিডনির স্বর্ণসময় , এ সময়কালীন সিডনি ঔপনিবেশিক ফাঁড়ি থেকে অন্যতম আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে । ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সিডনি একটি বহুজাতিক শহরে পরিণত হয় । ২০১১ আদমশুমারির অনুযায়ী , সে সময় ২৫০ এরও বেশি ভাষাভাষী ছিল সেখানে । ২০১৬ এর সময়ে , ৩৫.৮% বাসিন্দা বাড়িতে ইংরেজী ছাড়া অন্য ভাষা ব্যবহার করত । তদুপরি , ৪৫.৪% বাসিন্দা বিদেশে জন্মগ্ৰহণকারী , যা লন্ডন ও নিউইয়র্কের পর তৃতীয় বৃহত্তম বিদেশী বসবাসকারীর সংখ্যা । সিডনির জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণই হলো অভিবাসন ।
বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহর হলেও সিডনি বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সিডনির প্রভাব ও কার্যবিস্তৃতির কারণে 'গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড সিটিস রিসার্চ নেটওয়ার্ক' দ্বারা একে ' আলফা গ্লোবাল সিটি ' হিসেবে ঘোষণা করা হয় । অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধার জন্যে এটি সারাবিশ্বে ১১তম স্থান লাভ করে । সিডনির রয়েছে উন্নত বাজার , শক্তিশালী অর্থনীতি , উৎপাদনব্যবস্থা , ও পর্যটনশিল্প । সিডনিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশী ব্যাংক এবং বহুজাতিক কর্পোরেশন রয়েছে এবং শহরটি অস্ট্রেলিয়ার আর্থিক রাজধানী এবং এশিয়া প্যাসিফিকের অন্যতম প্রধান আর্থিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে । ১৮৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়টি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত । সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পুরানো গ্ৰন্থাগার রয়েছে , যার নাম ' নিউ সাউথ ওয়েলস লাইব্রেরী ' , প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮২৬ সালে ।
সিডনি হারবার ব্রিজ বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। ১৯২৩ সালে কাজ শুরু হয়ে ১৯৩২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই ব্রিজটি ১৩৪ মিটার উঁচু এবং ১ হাজার ১৪৮ মিটার লম্বা। এটি তৈরি করতে গিয়ে কিছু লোক প্রাণ হারায়। আপনি চাইলে ব্রিজের উপর থেকে সিডনির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।[12]
সিডনি ২০০০ গ্ৰীষ্মকালীন অলিম্পিকের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে । শহরটি বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি সর্বাধিক পরিদর্শন করা শহরগুলোর একটি । প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন পর্যটকের আনাগোনা হয় এখানে । প্রায় ১০,০০,০০০ হেক্টর জমির উপর এর পরিবেশ সংরক্ষণ পার্ক স্থাপিত। এর উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে সিডনি হারবার , রয়্যাল ন্যাশনাল পার্ক , রয়্যাল বোটানিক গার্ডেন এবং হাইড পার্ক , যেটি দেশের প্রাচীনতম পার্কল্যান্ড । বিশেষ স্থাপনা যেমন হারবার ব্রিজ কিংবা সিডনি অপেরা হাউসও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত । নগরীর প্রধান যাত্রী বিমানবন্দর হলো ' কিংসফোর্ড - স্মিথ বিমানবন্দর ' , যেটি বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিমানবন্দর । ১৯০৬ সালে স্থাপিত কেন্দ্রীয় (সেন্ট্রাল) স্টেশনটি রাজ্যের অন্যতম বড় ও ব্যস্ত রেলস্টেশন এবং শহরের রেল যোগাযোগের প্রধান ।