হারমান মেলভিল
From Wikipedia, the free encyclopedia
হারমান মেলভিল (ইংরেজি: Herman Melville) [lower-alpha 1] (১ অগস্ট, ১৮১৯ –২৮ সেপ্টেম্বর, ১৮৯১) ছিলেন একজন আমেরিকান ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও কবি। আমেরিকান নবজাগরণ যুগের সাহিত্যিক মেলভিল টাইপি (১৮৪৬) ও মবি-ডিক (১৮৫১) গ্রন্থদুটির জন্য সর্বাধিক পরিচিত। টাইপি ছিল তার পলিনেশিয়ান জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির একটি রোম্যান্টিক বিবরণ। অন্যদিকে মবি-ডিক ছিল একটি তিমি শিকার-সংক্রান্ত উপন্যাস। তার রচনা তার জীবনের শেষ ত্রিশ বছরে লোকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। তিনি এক সাধারণ নাবিক হিসেবে সমুদ্রে তার অভিজ্ঞতা, তার সাহিত্য ও দর্শন চর্চা, এবং এক দ্রুত পরিবর্তনশীল সময়ে আমেরিকান সমাজের পরস্পর-বিরোধী অবস্থা সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি নিজের রচনার উপাদান সংগ্রহ করতেন। তিনি একটি জটিল ও অলংকারবহুল রচনাশৈলী গড়ে তুলেছিলেন। তার শব্দভাণ্ডার ছিল সমৃদ্ধ ও মৌলিক। বিস্তারিত বাক্যগুলির মধ্যে তিনি নিজের দৃঢ় ছন্দবোধের সাক্ষর রেখেছেন। তার কল্পনাগুলি প্রায়শই অতিন্দ্রিয় ও ব্যজস্তুতিমূলক। শাস্ত্র, পৌরাণিক কাহিনি, দর্শন, সাহিত্য ও দৃশ্যশিল্প থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি তার রচনায় পাওয়া যায়।
হারমান মেলভিল Herman Melville | |
---|---|
জন্ম | হারমান মেলভিল (১৮১৯-০৮-০১)১ আগস্ট ১৮১৯ নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | সেপ্টেম্বর ২৮, ১৮৯১(1891-09-28) (বয়স ৭২) নিউ ইয়র্ক সিটি, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র |
পেশা | ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, শিক্ষক, নাবিক, বক্তা, কবি, শুল্ক পরিদর্শক |
ধরন | ভ্রমণসাহিত্য, কারা-উপাখ্যান, সমুদ্রকাহিনি, গথিক রোম্যান্টিসিজম, রূপক, উপকথা |
সাহিত্য আন্দোলন | রোম্যান্টিসিজম |
দাম্পত্যসঙ্গী | এলিজাবেথ ন্যাপ শ (১৮২২-১৯০৬) (বি. ১৮৪৭–১৮৯১) (তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত) |
সন্তান |
|
স্বাক্ষর |
মেলভিলের জন্ম নিউ ইয়র্ক সিটিতে। তিনি ছিলেন ফরাসি শুকনো জিনিসপত্রের এক বণিকের তৃতীয় সন্তান। ১৮৩২ সালে বাবার মৃত্যুর পর মেলভিলের প্রথাগত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অবস্থায় শেষ হয়ে যায়। এই সময় তার পরিবার এক আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল। মেলভিল বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর ১৮৩৯ সালে তিনি একটি বাণিজ্যপোতে সাধারণ নাবিকের চাকরি নিয়ে সমুদ্রে যান। ১৮৪০ সালে তিনি তিমিশিকারী জাহাজ অ্যাকাশনেট-এ সাক্ষর করে জীবনে প্রথম তিমি শিকারে যান। কিন্তু মার্কাস দ্বীপপুঞ্জে তিনি জাহাজ পরিত্যাগ করেন। কয়েকটি রোমাঞ্চকর অভিযানের পর ১৮৪৪ সালে তিনি বোস্টনে ফিরে আসেন। তার প্রথম বই টাইপি (১৮৪৫) ছিল পলিনেশিয়ানদের সঙ্গে তার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলির একটি উচ্চমানের রোম্যান্টিক বিবরণ। এই বইটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, তিনি ওমু (১৮৪৭) নামে ওই বইটির পরবর্তী খণ্ড প্রকাশ করেন। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে তিনি বোস্টনের এক বিশিষ্ট পরিবারের মেয়ে এলিজাবেথ শ-কে বিয়ে করেন। যদিও তার বিবাহিত জীবন ছিল কণ্টকাকীর্ণ। তার প্রথম উপন্যাস মার্ডি (১৮৪৯) অবশ্য তার নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত হয়নি। এটি একটি সমুদ্রাযাত্রার বিবরণ। এর মধ্যে একটি দার্শনিক রূপক ছিল। কিন্তু বইটি তেমন বিক্রি হয়নি। রেডবার্ন (১৮৪৯) ছিল বাণিজ্যপোতে নাবিকজীবনের গল্প। বিদেশে কঠিন জীবনযাত্রার বিবরণ পাওয়া যায় তার হোয়াইট-জ্যাকেট বইটি। এদুটি বই সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হলেও খুব একটা বিক্রি হয়নি।
১৮৫০ সালের অগস্ট মাসে মেলভিল তার ক্রমবর্ধমান পরিবার নিয়ে ম্যাসাচুয়েটসের পিটসফিল্ডের কাছে অ্যারোহেড নামে এক খামারে চলে আসেন। এখানে ন্যাথানিয়েল হ্যাথ্রোনের সঙ্গে তার গভীর অথচ ক্ষণস্থায়ী বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়। হ্যাথ্রোনকেই তিনি মবি-ডিক উৎসর্গ করেছিলেন। মবি-ডিক উপন্যাসটিও বাণিজ্যিক দিক থেকে ব্যর্থ হয়। সমালোচকদের মধ্যে এই উপন্যাস সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জনপ্রিয় লেখক হিসেবে মেলভিলের কর্মজীবন কার্যত শেষ হয়ে যায় পিয়েরি (১৯৫২) বইটির ব্যর্থতার পর। এই বইটি ছিল সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি ব্যঙ্গাত্মক উপস্থাপনা। বিপ্লবী যুদ্ধ নিয়ে লেখা তার উপন্যাস ইসরায়েল পটার প্রকাশিত হয় ১৮৫৫ সালে। ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি সাময়িকপত্রে ছোটোগল্প রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য বার্টলেবাই, দ্য স্ক্রিভেনার (১৮৫৩),দি এনক্যান্টাড্যাস (১৮৫৪) ও বেনিটো সেরেনো (১৮৫৫)। এগুলি এবং আরও তিনটি গল্প একত্রিত করে ১৮৫৬ সালে প্রকাশিত হয় দ্য পিৎজা টেলস। ১৮৫৭ সালে তিনি ইংল্যান্ডে যান। সেখানে ১৮৫২ সালের পর প্রথম বার হ্যাথ্রোনের সঙ্গে তার দেখা হয়। এরপর তিনি নিকট প্রাচ্য ভ্রমণে যান। দ্য কনফিডেন্স-ম্যান (১৮৫৭) ছিল তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষ গদ্য রচনা। এরপর তিনি নিউ ইয়র্কে চলে আসেন এবং শুল্ক পরিদর্শকের চাকরি নেন। এই সময় তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। গৃহযুদ্ধ নিয়ে নৈতিক প্রশ্নগুলির প্রতিফলন কাব্যিক রূপ পেয়েছিল তার ব্যাটেল-পিসেস অ্যান্ড অ্যাসপেক্টস অফ দ্য ওয়ার (১৮৬৬) গ্রন্থে। ১৮৬৭ সালে তার বড়ো ছেলে ম্যালকম বাড়িতেই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। ১৮৭৬ সালে ক্ল্যারেল: আ পোয়েল অ্যান্ড পিলগ্রিমেজ ইন দ্য হোলি ল্যান্ড নামে একটি একটি অধিবিদ্যামূলক মহাকাব্য প্রকাশ করেন মেলভিল। ১৮৮৬ সালে তার দ্বিতীয় পুত্র স্ট্যানউইক্স মারা যান। এরপর মেলভিল অবসর নেন। জীবনের শেষ বছরগুলিতে মেলভিল ব্যক্তিগতভাবে দুই খণ্ডে কবিতা প্রকাশ করেছিলেন। একটি খণ্ড অপ্রকাশিত থেকে যায়। এই সময় তিনি আবার সমুদ্র-বিষয়ক গদ্য রচনায় হাত দিয়েছিলেন। বিলি বাড নামক অনু-উপন্যাসটি তার মৃত্যুর সময় অসমাপ্ত থেকে যায়। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৪ সালে।
হৃদপিণ্ডের অসুখে আক্রান্ত হয়ে ১৮৯১ সালে মেলভিল প্রয়াত হন। এর পর তার রচনা উপর থেকে প্রচারের আলো সরে যায়। ১৯১৯ সালে তার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ‘মেলভিল পুনরুজ্জীবনে’র সূত্রপাত ঘটে। এই সময় সমালোচকরা তাঁর রচনা পুনরাবিষ্কার করেন, গবেষকরা তাঁর জীবনকাহিনি আলোচনা করতে শুরু করেন, তাঁর প্রধান উপন্যাস ও গল্পগুলি বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী রচনা আখ্যা পায় এবং তাঁর কবিতা ধীরে ধীরে পাঠক সমাজে শ্রদ্ধা অর্জন করে।