পর্যায় সারণি
বিভিন্ন মৌলিক পদার্থকে একত্রে উপস্থাপনের একটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত ছক / From Wikipedia, the free encyclopedia
পর্যায় সারণি (Periodic table), যা মৌলের পর্যায় সারণি নামেও পরিচিত, রসায়নের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই সারণীতে রাসায়নিক মৌলগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে সারি ("পর্যায়") এবং কলাম ("গ্রুপ") আকারে সাজানো থাকে। বিজ্ঞানের অঙ্গনে, বিশেষ করে রসায়ন এবং পদার্থবিদ্যায় এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। পর্যায় আইনের একটি চিত্ররূপ হচ্ছে এই পর্যায় সারণী। এই আইনে বলা হয়, মৌলসমূহকে যদি পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে সাজানো হয়, তবে তাদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একধরনের নিয়মিত পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করা যায়। সারণিতে চারটি আয়তাকার অঞ্চল রয়েছে যেগুলোকে ব্লক বলা হয়। একই গ্রুপের মৌলগুলো একই রকম রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে।
পর্যায় সারণির উল্লম্ব, অনুভূমিক এবং তির্যক রেখা বরাবর কিছু নির্দিষ্ট প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। একটি গ্রুপে নিচে নামার সাথে সাথে ধাতব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায় এবং একটি পর্যায়ে বাম থেকে ডান দিকে যাওয়ার সাথে তা হ্রাস পায়। আবার, পর্যায় সারণির নিচের বাম থেকে উপরের ডান দিকে যাওয়ার সাথে অধাতব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়।
রাশিয়ান রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলেভ ১৮৬৯ সালে সর্বপ্রথম সর্বজনীনভাবে গৃহীত পর্যায় সারণিটি প্রণয়ন করেন। তিনি পারমাণবিক ভরের ওপর ভিত্তি করে রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত পর্যায় সারণিটি তৈরি করেন। যেহেতু সেসময় সকল মৌল আবিষ্কৃত হয়নি, তাই তার পর্যায় সারণিতে কিছু ফাঁকা জায়গা ছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে মেন্ডেলেভ এই পর্যায় সারণি কাজে লাগিয়ে কয়েকটি অনুপস্থিত মৌলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ১৯ শতকের শেষের দিকে পর্যায় সারণিকে মৌলিক আবিষ্কার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে পারমাণবিক সংখ্যা এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা সম্ভব হয়। ১৯৪৫ সালে গ্লেন টি. সিবোর্গের অ্যাক্টিনাইড মৌলগুলোর আবিষ্কারের পর এগুলোকে f-ব্লকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যার ফলে পর্যায় সারণী তার আধুনিক রূপটি পায়। পর্যায় সারণী এবং পর্যায় আইন বর্তমানে আধুনিক রসায়নের একটি কেন্দ্রীয় এবং অপরিহার্য অংশ।
প্রকৃতিতে ৯৪ পারমাণবিক সংখ্যা পর্যন্ত মৌলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর চেয়ে বেশি পারমাণবিক সংখ্যার মৌলগুলোকে গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে। আজ, ১১৮ পর্যন্ত সমস্ত মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে যা সারণীর প্রথম সাতটি সারি পূর্ণ করে। তবে, সবচেয়ে ভারী মৌলগুলোর কিছু রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরীক্ষামূলকভাবে যাচাই করা এখনো বাকি। পর্যায় সারণী যে সাতটি সারি নিয়ে শেষ হবে না, তা নিয়ে অনেকের ধারণা রয়েছে। তবে, তত্ত্ব অনুযায়ী সারণী কতদূর বিস্তৃত হবে তা এখনো জানা যায়নি। আবার, বৈজ্ঞানিক আলোচনায় আজও পর্যায় সারণীতে কিছু মৌলের সঠিক অবস্থান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। পর্যায় আইনের অনেকগুলো বিকল্প রূপ রয়েছে, এবং পর্যায় সারণীর কোনো সর্বোত্তম রূপ আছে কিনা তা নিয়ে কিছু আলোচনা রয়েছে।