উপনয়ন
হিন্দু ষোড়শ সংস্কারের একাদশ সংস্কার / From Wikipedia, the free encyclopedia
উপনয়ন (সংস্কৃত: उपनयन) সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৈদিক ও শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান।[1][2] এটি হিন্দুধর্মের প্রাচীন গ্রন্থে ষোড়শ সংস্কারের (আচার) একাদশ সংস্কার।[3] এটির মাধ্যমে সনাতনী বালকেরা গায়ত্রী মন্ত্র সংস্কারে দীক্ষিত হয়। বৈদিক শাস্ত্রানুসারে, সংস্কারটি বালকদের বৈদিক শিক্ষাদিক্ষা আরম্ভকালীন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার অনুষ্ঠান।[4]
সনাতন ধর্মীয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য বর্ণের জন্য উপনয়নের ন্যূনতম বয়স যথাক্রমে সাত, তেরো ও সতেরো বছর কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বয়স সীমা ১৮, ২১ অথবা ২৪ বছর বয়স।[5] উপনয়নকালে বালকদের বৈদিক মন্ত্রোপদেশ শিক্ষা দেওয়া হয়। মনুস্মৃতি অনুযায়ী, এরপর তারা ব্রহ্মচারী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে উপনয়ন সংস্কার শুধু ব্রাহ্মণদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। তবে ব্রহ্ম পুরাণ অনুযায়ী শূদ্রও সংস্কার ও আগম জ্ঞান সম্পন্ন হলে দ্বিজ হতে পারে।[6]
উপনয়ন অনুষ্ঠানে শরীরে যজ্ঞোপবীত বা উপবীত (চলিত বাংলায় পৈতে) ধারণ করা হয়। উপবীত প্রকৃতপক্ষে তিনটি পবিত্র সূতো যা দেবী সরস্বতী, গায়ত্রী ও সাবিত্রীর প্রতীক। উপবীত ধারণের সময় উপবীতধারী গায়ত্রী মন্ত্র শিক্ষা করে। উপনয়নের পর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের দ্বিজ বলা হয়।[7][8] দ্বিজ শব্দের অর্থ দ্বিতীয় বার জন্ম।[1][9][10][11] বৈদিক শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রথমবার ব্যক্তির জন্ম হয় মাতৃগর্ভ থেকে; এবং দ্বিতীয়বার জন্ম হয় ব্যক্তির সৎসংস্কার ধারণ করে।[7][8] আয়ুর্বেদিক ব্রাহ্মণ যখন অধ্যয়ন ও ব্রহ্মচর্য শেষ করে "বৈদ্য" জীবনে প্রবেশ করে তখন আরেকবার উপনয়ন করে এবং ত্রিজ হয়, এই উপনয়ন বিবাহের সময় হয়ে থাকে। প্রাচীনকালে উপনয়ন সংস্কার পশ্চাৎ কুলগুরু ও আচার্য ব্রহ্মচারী বালকদের গুরুকুলে[12] নিয়ে যেতেন,[13][14] এবং পরিবারের পরম্পরা অনুযায়ী বালকদের কে কোন এক বেদের কোন এক নির্দিষ্ট শাখার সহস্বর শিক্ষা দেওয়া হত।[15] তাহার সাথে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় শিক্ষা দেওয়া হতো। ভারতের বিভিন্ন বহির্গত আক্রান্তদের শাসন কালে গুরুকুল ও গুরুশিষ্য পরম্পরা বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলস্বরূপ বহু জ্ঞান লুপ্তপ্রায় হয়ে যায়, যার কারণে সমাজে বহু ভুল ধারণাদি ঘর করে।