বেদ
হিন্দুধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ এবং পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন সাহিত্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
বেদ (সংস্কৃত: वेद, "জ্ঞান") হল প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। ছান্দস্ ভাষায় রচিত বেদই ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং সনাতন ধর্মের সর্বপ্রাচীন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ।[4][5] সনাতনীরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ বা লোক" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক)[6] এবং "নৈর্বক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা সাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনও রচয়িতা নেই)[7][8][9] মনে করেন। আর্ষ শাস্ত্র অনুযায়ী পরব্রহ্মই সৃষ্টির আদিতে মানব হিতার্থে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা এই চার ঋষি চার বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন। এবং পরবর্তিতে তাঁরা অন্যান্য ঋষিদের মাঝে সেই জ্ঞান প্রচার করেন এবং অলিপিবদ্ধভাবে পরাম্পরার মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হয়ে এসেছে।[10][11] আর্যসমাজের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী এই চার ঋষিকে শরীরধারী মানুষ বলেছেন।[12] পুস্তক আকারে প্রাপ্ত বেদ আধুনিক হলেও এর জ্ঞানকে শাশ্বত বলে অনেক নৈষ্ঠিক পণ্ডিত মনে করেন। পাশ্চাত্যের অনেক গবেষক ভাষাগত রচনাশৈলি, প্রত্নতাত্তিক প্রমাণাদির উপর নির্ভর করে বেদের রচনাকাল আনুমানিক ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ হিসাবে ধারণা করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বেদ | |
---|---|
তথ্য | |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম |
ভাষা | বৈদিক সংস্কৃত |
যুগ | আনু. ১৫০০–১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (ঋগ্বেদ),[1] আনু. ১২০০–৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (যজুর্বেদ, সামবেদ, অথর্ববেদ)[1][2] |
মন্ত্র | ২০,৩৭৯টি মন্ত্র[3] |
বেদকে শ্রুতি (যা শ্রুত হয়েছে) সাহিত্যও বলা হয়। কারণ বেদের লিখিত কোনো বই বা পুস্তক আকারে ছিল না। বৈদিক ঋষিরা বেদমন্ত্র মুখে মুখে উচ্চারণ করে তাদের শিষ্যদের শোনাতেন, আর শিষ্যরা শুনে শুনেই বেদ অধ্যায়ন করতেন।[13] এইখানেই সনাতন ধর্মের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোর সঙ্গে বেদের পার্থক্য। সনাতন ধর্মের অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোকে বলা হয় স্মৃতি (যা স্মরণধৃত হয়েছে) সাহিত্য। সনাতন মহাকাব্য মহাভারতে ব্রহ্মা বেদ প্রাপ্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[14] যদিও বৈদিক স্তোত্রগুলোতে বলা হয়েছে, একজন সূত্রধর যেমন নিপূণভাবে রথ নির্মাণ করেন, ঠিক তেমনই ঋষিগণ দক্ষতার সঙ্গে বেদ গ্রন্থনা করেছেন।[10]
বেদের সংখ্যা চার: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ।[15][16] এতে মোট মন্ত্র সংখ্যা ২০৩৭৯টি। প্রত্যেকটি বেদ আবার চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), ব্রাহ্মণ (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যজ্ঞাদির উপর টীকা), আরণ্যক (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম, যজ্ঞ ও প্রতীকী যজ্ঞ) ও উপনিষদ্ (ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-সংক্রান্ত আলোচনা)।[15][17][18] কোনও কোনও গবেষক উপাসনা (পূজা) নামে একটি পঞ্চম বিভাগের কথাও উল্লেখ করে থাকেন।[19][20]
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন শাখা ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায় বেদ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে থাকে। ভারতীয় দর্শনের যে সকল শাখা বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকার করে এবং বেদকেই তাদের শাস্ত্রের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে, সেগুলোকে "আস্তিক" শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[note 1] অন্যদিকে ভারতীয় দর্শনের লোকায়ত, চার্বাক, আজীবক, বৌদ্ধ ও জৈন প্রভৃতি অন্যান্য শ্রামণিক শাখায় বেদের প্রামাণ্যতা স্বীকৃত নয়। এগুলোকে "নাস্তিক" শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[22][23] মতপার্থক্য থাকলেও শ্রামণিক ধারার গ্রন্থগুলোর মতো বেদের বিভিন্ন স্তরের বিভাগগুলোতেও একই চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলো আলোচিত হয়েছে।[22]