অনিশ্চয়তা নীতি
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এক মৌলিক নীতি / From Wikipedia, the free encyclopedia
অনিশ্চয়তা নীতি, যা হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি নামেও পরিচিত, কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এক মৌলিক ধারণা। এই নীতি অনুযায়ী, কোনো একজোড়া ভৌত রাশির মান, যেমন অবস্থান ও ভরবেগ, একই সঙ্গে জানা থাকলে তাদের পরিমাপ একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত নির্ভুল হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, ঐ দুই রাশির মধ্যে যেকোনো একটি রাশি আরও নির্ভুলভাবে পরিমাপ করলে অন্য রাশিটির পরিমাপ আরও কম নির্ভুল হবে।
আরও পোশাকি ভাষায় বলতে গেলে, অনিশ্চয়তা নীতি হচ্ছে অসমতার এক রূপ, যা কোনো একজোড়া কোয়ান্টাম রাশির পরিমাপের নির্ভুলতার গুণফলে এক মৌলিক সীমাকে প্রকাশ করে, যেমন অবস্থান x ও ভরবেগ p।[1] এইধরনের চলরাশির যুগল পরিপূরক চলরাশি নামে পরিচিত।
১৯২৭ সালে জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী ভের্নার কার্ল হাইজেনবের্গ[2] দ্বারা প্রকাশিত এই নীতি অনুযায়ী, কোনো কণার অবস্থান আরও নির্ভুলভাবে পরিমাপ করলে প্রাথমিক অবস্থা থেকে ভরবেগ আরও কম নির্ভুলভাবে অনুমান করা হবে, এবং এর বিপরীত বিবৃতিও সত্য। ১৯২৭ সালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্রে তিনি আসলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে অনিশ্চয়তা নীতিটি হচ্ছে ΔpΔq ≈ h, যেখানে h হচ্ছে প্লাঙ্ক ধ্রুবক।[2][3][4][5] ঐ একই বছরে পরে এয়ার্লে হেসা কেনার্ড[6] এবং ১৯২৮ সালে হারমান ভাইল[7] অবস্থান σx-এর আদর্শ চ্যুতি এবং ভরবেগ σp-এর আদর্শ চ্যুতির সঙ্গে সম্পর্কিত নিম্নলিখিত অসমতাটি নির্ণয় করেছিলেন:
যেখানে ħ = ।
ঐতিহাসিকভাবে এই অনিশ্চয়তা নীতিটি পদার্থবিজ্ঞানে পর্যবেক্ষক প্রভাবের সঙ্গে বিভ্রান্ত হয়েছে।[8][9] পর্যবেক্ষক প্রভাব অনুযায়ী, কিছু সংস্থাকে পরিবর্তিত না করে তার পরিমাপ সম্পন্ন হয় না,[10][11] হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম স্তরে কোয়ান্টাম অনিশ্চয়তার এক ভৌত "ব্যাখ্যা" হিসাবে এধরনের পর্যবেক্ষক প্রভাব ব্যবহার করেছেন।[12] তবে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে অনিশ্চয়তা নীতিটি তরঙ্গের মতো সমস্ত সংস্থার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্তর্নিহিত,[13] এবং সমস্ত কোয়ান্টাম বস্তুর পদার্থ তরঙ্গ প্রকৃতির জন্য এটি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান মধ্যে উদ্ভূত হয়।[14] সুতরাং অনিশ্চয়তা নীতি আসলে কোয়ান্টাম সংস্থার একটি মৌলিক ধর্ম এবং কোনো বর্তমান প্রযুক্তির পর্যবেক্ষণগত সাফল্য সম্পর্কিত কোনো বিবৃতি নয়।[15] প্রকৃতপক্ষে, এই অনিশ্চয়তার নীতির মূল হচ্ছে বলবিজ্ঞানের মৌলিক সমীকরণ লেখার জন্য ক্যালকুলাসের প্রয়োগ। এটি লক্ষণীয় যে এখানে "পরিমাপ" বলতে কেবল এমন কোনো প্রক্রিয়াকে বোঝাচ্ছে না যেখানে পদার্থবিজ্ঞানী-পর্যবেক্ষক অংশগ্রহণ করেন, বরং কোনো পর্যবেক্ষক নির্বিশেষে চিরায়ত ও কোয়ান্টাম বস্তুর মধ্যে যেকোনো আন্তঃক্রিয়াকে বোঝাচ্ছে।[16]
যেহেতু অনিশ্চয়তা নীতি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের এক মৌলিক ফলাফল, সেহেতু সাধারণ কোয়ান্টাম পরীক্ষাগুলোতে এর বিভিন্ন দিক পাওয়া যায়। কিছু পরীক্ষা তাদের প্রধান গবেষণা কর্মসূচির অংশ হিসাবে অনিশ্চয়তা নীতির এক নির্দিষ্ট রূপকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অতিপরিবাহিতা[17] কিংবা কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞান[18] সংস্থায় সংখ্যা–দশা অনিশ্চয়তা নীতির পরীক্ষা। অনিশ্চয়তা নীতির উপর নির্ভরশীল এমন প্রযুক্তির মধ্যে অত্যন্ত নিম্ন-শব্দের প্রযুক্তি অন্তর্গত, যার মধ্যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ইন্টারফেরোমিটার উল্লেখযোগ্য।[19]