অহল্যা
ঋষি গৌতমের পত্নী / From Wikipedia, the free encyclopedia
অহল্যা (সংস্কৃত: अहल्या) হলেন এক হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র। তিনি ঋষি গৌতমের পত্নী। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে উল্লিখিত কাহিনিসূত্রে জানা যায়, দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর সতীত্ব হরণ করেন, ব্যভিচারের অপরাধে ঋষি গৌতম তাঁকে অভিশাপ দেন এবং বিষ্ণুর অবতার রাম এসে তাঁকে শাপমুক্ত করেন।
অহল্যা | |
---|---|
দেবনাগরী | अहल्या |
সংস্কৃত লিপ্যন্তর | Ahalyā |
অন্তর্ভুক্তি | ঋষি, পঞ্চকন্যা |
আবাস | ঋষি গৌতমের আশ্রম |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
সঙ্গী | গৌতম |
সন্তান | শতানন্দ |
ব্রহ্মা এক পরমাসুন্দরী নারী সৃষ্টির মানসে অহল্যাকে সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর স্বামী ঋষি গৌতম বয়সে তাঁর থেকে অনেক বড়ো ছিলেন। প্রাচীনতম পূর্ণাঙ্গ উপাখ্যানগুলিতে বলা হয়েছে, অহল্যা ছদ্মবেশী ইন্দ্রকে চিনতে পারলেও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেননি। কিন্তু পরবর্তীকালের গ্রন্থগুলির মতে, অহল্যা নির্দোষ ছিলেন। তিনি ইন্দ্রের শঠতার শিকার হয়েছিলেন অথবা ধর্ষিতা হয়েছিলেন। সকল উপাখ্যানেই দেখা যায়, ঋষি গৌতম অহল্যা ও ইন্দ্র উভয়কেই অভিশাপ দিয়েছিলেন। অভিশাপটি ঠিক কী ছিল, তা নিয়ে অবশ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে মতভেদ আছে। তবে সকল গ্রন্থেই কথিত হয়েছে যে, রাম অহল্যার ত্রাতা ও মুক্তিদাতা রূপে উপস্থিত হয়েছিলেন। প্রাচীনতর গ্রন্থগুলিতে আছে, প্রায়শ্চিত্তের জন্য অহল্যা কঠোর তপস্যা করেছিলেন এবং রামকে আতিথ্য দান করে পাপমুক্ত হন। কিন্তু পরবর্তীকালে প্রচলিত হওয়া জনপ্রিয় পুনর্কথনগুলিতে দেখা যায়, ঋষির অভিশাপে অহল্যা পাথর হয়ে যান এবং রামের পাদস্পর্শে পুনরায় মানবী রূপ ফিরে পান।
শাস্ত্রগ্রন্থগুলিতে অহল্যার যে জীবনকথা পাওয়া যায়, তার সব ক’টিরই কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হল ইন্দ্র কর্তৃক অহল্যাকে প্রলুব্ধকরণ এবং তার প্রতিফল।[1] ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলিতেই (খ্রিস্টপূর্ব নবম থেকে ষষ্ঠ শতাব্দী) প্রথম ইন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের আভাস দেওয়া হলেও হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণেই (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম-চতুর্থ শতাব্দী) প্রথম স্পষ্টভাবে ও সবিস্তারে তাঁর পরকীয়া সম্পর্কের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে রামের মাহাত্ম্য কীর্তিত হয়েছে। তাই মধ্যযুগীয় কথকেরা রাম কর্তৃক অহল্যা-উদ্ধারণকে ঈশ্বরের কৃপার নিদর্শন হিসেবে সেই কাহিনির উপরেই অধিক গুরুত্ব আরোপ করতেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে বহুবার পুনর্কথিত হওয়ার পাশাপাশি আধুনিক যুগের কবিতা, ছোটোগল্প এমনকি নৃত্য ও নাট্যসাহিত্যেও এই কাহিনি বারবার উপস্থাপিত হয়েছে। প্রাচীন উপাখ্যানগুলিতে রামের মাহাত্ম্য কীর্তিত হলেও আধুনিক গল্পগুলি অহল্যার উপর বিশেষভাবে আলোকপাত করে তাঁরই দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত হয়েছে। কোনও কোনও উপাখ্যানে অবশ্য তাঁর সন্তানসন্ততির কথাও আছে।
হিন্দুরা প্রথানুসারে অহল্যাকে পঞ্চকন্যার (পাঁচ আদর্শ সতী) প্রথমা মনে করেন। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এই পঞ্চকন্যার নাম আবৃত্তি করলে পাপস্খালন ঘটে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নিঃশঙ্ক চিত্তে অভিশাপ গ্রহণের জন্য তাঁকে পতিব্রতা ও নারীত্বের আদর্শ হিসেবে প্রশস্তি করা হয়; আবার অন্য ক্ষেত্রে ব্যভিচারের অপরাধে তাঁর নিন্দাও করা হয়ে থাকে।