Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অ্যান্ডিসাইট ( /ˈændɪsaɪt/ অথবা /ˈændɪzaɪt/[1]) একটি আগ্নেয় শিলা এবং এটি অ্যাফনাইটিক থেকে পোরফিরাইটিক(আগ্নেয় শিলার প্রকার) প্রকৃতির হয়। প্রকৃতিগত দিক দিয়ে এটি ব্যাসল্ট ও রাইয়োলাইটের মধ্যবর্তী যাতে ৫৭ - ৬৩% সিলিকন ডাইঅক্সাইড (SiO2) বর্তমান। অ্যান্ডিসাইটের প্রধান খনিজ উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমানে প্লেজিওক্লেজ সহ পাইরোক্সিন বা হর্নব্লেন্ডের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া আনুষঙ্গিক খনিজ হিসাবে আছে ম্যাগনেটাইট, জিরকন, এপাটাইট, ইলমেনাইট, বায়োটাইট এবং গারনেট।[2] এছাড়াও অন্যান্য উপাদানের মধ্যে স্বল্প পরিমানে ক্ষারযুক্ত ফিল্ডস্পার এবং অন্যান্য আগ্নেয় শিলার মতোই প্রচুর পরিমানে কোয়ার্টজ-ফিল্ডস্পারের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়।
আগ্নেয় শিলা | |
মিশ্রণ | |
---|---|
মধ্যবর্তী প্রধান খনিজ উপাদান: প্লেজিওক্লেজ (অ্যান্ডিসিন) এবং পাইরোক্সিন বা হর্নব্লেড |
বহিরাগত দিক দিয়ে অ্যান্ডিসাইট, প্লুটোনিক ডায়ারাইটের সমতুল্য হিসাবে বিবেচিত হয়। ভূত্বকের অভ্যন্তরে যেখানে দুটি মহাদেশীয় পাত একে ওপরের উপর অবস্থান করে সেই স্থানকে বলা হয় সাবডাকসান জোন। এই সাবডাকসান জোনের উলম্ব স্থানেই বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির মুখ অবস্থান করে। এইরূপ অনেক সক্রিয় আগ্নেয়গিরির শৃঙ্খলকে আর্ক্ বা আইস্ল্যাণ্ড আর্ক্ নামে অভিহিত করা হয়। সাবডাকসান জোনের উপরিস্থিত আইস্ল্যাণ্ড আর্কের গঠনগত উপাদানের মধ্যে অ্যান্ডিসাইট অন্যতম প্রধান উপাদান। ভূত্বকের পুরু, বিস্তৃত অংশ যা মহাদেশ বা অন্যান্য বৃহৎ ভূখণ্ডের সৃষ্টি করে, তাকে কন্টিনেন্টাল ক্রাস্ট বা মহাদেশীয় ভূত্বক নামে অভিহিত করা হয়। এই মহাদেশীয় ভূত্বকের উপাদান বিশ্লেষণ করলে গড় মাত্রার দিক দিয়ে অ্যান্ডিসাইটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।[3] মঙ্গল গ্রহের আবরণ বা ভূমিভাগেও উল্লেখযোগ্য পরিমানে ব্যাসল্টের সাথে অ্যান্ডিসাইট বর্তমান। [4] অ্যান্ডিসাইট নামটি প্রধানত আন্দিজ পর্বতমালা থেকে প্রাপ্ত।
আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা নিষ্কাশন এবং তা ভূত্বকের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশে পর ব্যাথোলিথস এবং হাইপাবিসাল প্রস্তরে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া ম্যাগমাটিসম -এর অন্তর্ভুক্ত। আইসল্যান্ড আর্কে ম্যগমাটিসম প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের গভীরে অবস্থিত সাবডাকসান প্লেটের পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে, সাবডাকসান প্লেটের শঙ্কু আকৃতির সংযোগস্থল থেকে উৎপন্ন হয়।দুটি সাবডাকসান প্লেটের পারস্পরিক প্রক্রিয়া চলাকালীন মহাসাগরীয় ভূত্বকে ক্রমবর্ধমান চাপ এবং তাপমাত্রার প্রভাব পরে,যার ফলে তার রূপান্তর ঘটে। জলবাহী খনিজগুলি যেমন অ্যামবিবোল, জাইলোাইটস, ক্লোরাইট ইত্যাদি (যা মহাসাগরীয় লিথোস্ফিয়ারে উপস্থিত রয়েছে) আর্দ্রতাশূন্য হয়ে স্থিতিশীল, অ্যানহাইড্রাস রূপে পরিবর্তিত হওয়ার সময় জল এবং দ্রবণীয় উপাদান ত্যাগ করে যা সাবডাকসান প্লেটের শঙ্কু আকৃতির সংযোগস্থলের উপর ছড়িয়ে পরে ও তার অভ্যন্তরেও প্রবেশ করে [5] যার ফলে তার উপরিস্থ আচ্ছাদন, মধ্যবর্তী অংশ এবং অভ্যন্তরীণ ভূপৃষ্ঠের গভীরে অবস্থিত উপাদানগুলির কাঠিন্য কমে যায় এবং তাদের আংশিক গলন বা পার্শিয়াল মেল্টিং প্রক্রিয়া শুরু হয়। আংশিক গলনের ফলে সাবডাকসান প্লেটের অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলির ঘনত্ব কমে যায় এবং তা স্ফীত ও উপরিভাগে উত্থিত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে সাবডাকসান প্লেটের সংযোগস্থলের নিম্নভাগ স্পর্শ করে। সাবডাকসান প্লেটের শঙ্কু আকৃতির সংযোগস্থলে অবস্থিত আংশিক গলিত উপাদান বা মেল্ট প্রধানত ব্যাসালটিক রচনার, তবে তাদের মধ্যে দ্রবণীয় উপাদানগুলিরও (যেমন: পটাশিয়াম (K), বেরিয়াম (Ba)) এবং সীসা (Pb)) স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ উপস্থিতি রয়েছে যেগুলি সাধারণত প্লেটের উপরিস্থ আচ্ছাদন থেকে মিশ্রিত হয়। যদিও এই প্রক্রিয়ায় মহাসাগরীয় ভূত্বকে মেল্ট তৈরী হওয়ার প্রমাণ আছে কিন্তু তিনটি পারস্পরিক উপাদান (ভূত্বক, পলি এবং শঙ্কু আকৃতির সংযোগস্থল) -এর অবদান নিয়ে মতবিরোধ আছে।[6]
এইভাবে গঠিত ব্যসাল্ট ভগ্নাংশ স্ফটিককরণ, ভূত্বকের আংশিক গলন বা ম্যাগমা মিশ্রণের মাধ্যমে অ্যান্ডিসাইট গঠনে সহায়তা করে, যার সবগুলিই নিচে আলোচনা করা হয়েছে।
অ্যান্ডিসাইট সাধারণত একে উপরের উপর অবস্থিত দুটি মহাদেশীয় পাত যা কনভার্জেন্ট প্লেট নামে পরিচিত, তার সংযোগস্থলে উৎপন্ন হয় কিন্তু ঘটনাচক্রে কনভার্জেন্ট প্লেটের অন্যান্য স্থলেও অ্যান্ডিসাইটের উদ্ভব হতে দেখা গেছে। মধ্যবর্তী প্রকৃতির আগ্নেয় শিলা বিভিন্ন পদ্ধতিতে উদ্ভূত হয়,
এই প্রক্রিয়ায় অ্যান্ডিসাইটে পরিবর্তিত হওয়ার জন্য ব্যাসল্টিক লাভা বা ম্যাগমাকে তার মধ্যে মিশ্রিত কিছু নির্দিষ্ট উপাদানের স্ফটিকীকরণ বা ক্রিস্টালে রূপান্তর করে তাদেরকে মেল্ট থেকে অপসারণ করতে হয়। এই অপসারণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু বেশিরভাগ সময় স্ফটিক প্রতিস্থাপন বা ক্রিস্টাল সেটলিং পদ্ধতির প্রভাব দেখা যায়। অলিভিন ও এমফিবলেস হলো প্রথম দুই উপাদান যারা সর্বপ্রথম স্ফটিকে রূপান্তরিত হয় এবং ব্যাসলটিক মেল্ট থেকে অপসারিত হয়। এই মাফিক খনিজ (মাফিক হল একটি বিশেষণ যা একটি সিলিকেট খনিজ বা পাথরকে বর্ণনা করে যা ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনে সমৃদ্ধ, এবং একইভাবে ম্যাগনেসিয়াম এবং ফেরিকের বহনকারী।) উপাদানগুলি মেল্ট থেকে প্রথক হয়ে মাফিক উপাদানের স্তুপ গঠন করে যা ভূত্বকের ভিতে জমা হয়। এই মাফিক উপাদানগুলির অপসারণের পর মেল্টের মধ্যে কোনো ব্যাসল্টিক উপাদান থাকেনা এবং মেল্টের সিলিকার পরিমান প্রারম্ভিক পরিমানের তুলনায় অনেক বেশি হয়। লোহা ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমান অনেক কমে যায় এবং ধীরে ধীরে মেল্ট ব্যাসল্টিক অবস্থা থেকে রূপান্তরিত হয়ে অ্যান্ডিসাইটিক প্রকৃতি ধারণ করে। পুনরায় কোনো মাফিক উপাদানের সংযোজন না হলে, সময়ের সাথে সাথে মেল্ট অ্যান্ডিসাইটিক থেকে রায়োলাইটিক প্রকৃতি ধারণ করে।
আংশিক গলিত ব্যাসল্ট লাভারূপে উর্দ্ধমুখে গমন করে যতক্ষননা তা একে উপরের উপর অবস্থিত মহাদেশীয় পাতের ভিত অবধি পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছনোর পর দুটি ঘটনা ঘটতে পারে, ১) গলিত ব্যাসল্ট ভূত্বকের আবরণের নিচে জমে গিয়ে একটা স্তর গঠন করে যে প্রক্রিয়াকে বলা হয় আন্ডারপ্লেটিং, অথবা ২)তারা একে ওপরের উপর অবস্থিত মহাদেশীয় পাতের অভ্যন্তরীণ ফাঁকে প্রবেশ করে ডাইক হিসাবে জমা হয়। যদি ব্যাসল্ট আন্ডারপ্লেটিং প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায় তাহলে তা ভূত্বকের আবরণের নিম্ন অংশে তাপ সরবরাহ করে গলাতে সাহায্য করে এবং তার ফলে আবরণের নিম্ন অংশের সেই স্থানটি দুর্বল হয়ে পরে। কিন্তু তাপ সরবরাহকারী মডেল বা হিট ট্রান্সফার মডেল অনুযায়ী লাভারূপী আংশিক গলিত ব্যাসল্টের স্তর মোটামুটি ১১০০–১২৪০ °C তাপ সরবরাহ করে যা ভূত্বকের নিম্ন অংশের অ্যামফিবোলাইট[7] উপাদানকে গলানোর জন্য যথেষ্ট নয়। যাই হোক, এই আংশিক গলিত ব্যাসল্ট ভূত্বকের আবরণের উপরি অংশের পেলিটিক উপাদানকে গলাতে সক্ষম।[8] আইসল্যান্ড আর্কে অ্যান্ডিসাইটিক লাভার উৎপাদন 'পার্শিয়াল মেল্টিং' প্রক্রিয়ার কারণেই সম্ভব হয়।
মহাদেশীয় আর্কে, যেমন আন্দিজ, প্রায়শই ম্যাগমা অগভীর ভূত্বকের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ম্যাগমা চেম্বার গঠন করে। এই ম্যাগমা ভাণ্ডারে সঞ্চিত ম্যাগমা ভগ্নাংশ স্ফটিককরণ এবং আংশিক গলন এই দুই প্রক্রিয়াতেই পরিবর্তিত হয় এবং ধীরে ধীরে রায়োলাইটিক প্রকৃতি ধারণ করার দিকে এগোতে থাকে। এর ফলে সময়ের সাথে সাথে সঞ্চারিত ম্যাগমা তাপ নিঃসরণ করে ঠান্ডা হতে থাকে। সক্রিয় থাকার জন্য ম্যাগমা ভান্ডারকে তার অভ্যন্তরীণ ব্যাসল্ট মেল্ট -এ অবিরত তাপ প্রদান করতে হয়। যখন ব্যাসল্ট উপাদান পরিবর্তনকারী রায়োলাইটিক উপাদানের সঙ্গে মিলিত হয়যখন তা পরিবর্তিত হয়ে ব্যাসল্ট ও রায়োলাইটের মধ্যবর্তী অ্যান্ডিসাইটিক প্রকৃতি ধারণ করে।[9]
দ্বীপ আর্কগুলিতে উচ্চ-ম্যাগনেসিয়াম অ্যান্ডিসাইটগুলি আদিম প্রকৃতির হয়, যা মেটাসোমাইজাইজড ম্যান্টল থেকে উৎপন্ন হয়। [10] [11] পরীক্ষামূলক প্রমাণ অনুযায়ী যে ক্ষয়যুক্ত ম্যান্টল শিলা ক্ষারীয় তরলের সংস্পর্শে রয়েছেতা হাই-ম্যাগনেসিয়াম অ্যান্ডিসাইটের উৎপাদন করতে সক্ষম।[12][13]
২০০৯ সালে, গবেষকরা যে দুটি উল্কায় অ্যান্ডিসাইট আবিষ্কার করেছিলেন। এগুলি অ্যান্টার্কটিকের নুনাটাক্স তুষারক্ষেত্রে আমেরিকার অনুসন্ধানের সময় আবিষ্কার করা হয়েছিল। এই খোঁজের ফলে সম্ভবত অ্যান্ডিসাইট উৎপন্ন করার একটি নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার হতে পারে।[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.