আনাতকাবির
মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমাধিসৌধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
আনাতকাবির হলো তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার চাঙ্কায়া জেলায় অবস্থিত একটি কমপ্লেক্স যেখানে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সমাধি রয়েছে। এমিন ওনাত ও ওরহান আরদা দ্বারা নকশাকৃত আনাতকাবিরের নির্মাণকাজ ১৯৪৪ সালে শুরু হয়ে ১৯৫৩ সালে সম্পন্ন হয়। এটি বিশেষত সমাধিমন্দির ও শান্তি উদ্যান নামক একটি জঙ্গলযুক্ত এলাকা সহ বিভিন্ন স্থাপনা ও স্মৃতিস্তম্ভ নিয়ে গঠিত।
Anıtkabir | |
স্থানাঙ্ক | ৩৯°৫৫′৩২″ উত্তর ৩২°৫০′১৬″ পূর্ব |
---|---|
অবস্থান | চাঙ্কায়া, আঙ্কারা, তুরস্ক |
নকশাকারক | এমিন ওনাত ওরহান আরদা |
ধরন | সমাধিসৌধ |
উপাদান | কংক্রিট, ট্র্যাভারটাইন ও মার্বেল |
দৈর্ঘ্য | ৫৭.৩৫ মি (১৮৮.২ ফু) |
প্রস্থ | ৪১.৬৫ মি (১৩৬.৬ ফু) |
উচ্চতা | ২৭ মি (৮৯ ফু) |
শুরুর তারিখ | ৯ অক্টোবর ১৯৪৪ (1944-10-09) |
সম্পূর্ণতা তারিখ | ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ (1953-09-01) |
খোলার তারিখ | ১০ নভেম্বর ১৯৫৩ (1953-11-10) |
নিবেদিত | মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক |
ওয়েবসাইট | anitkabir.tsk.tr |
১৯৩৮ সালের ১০ নভেম্বরে আতাতুর্কের মৃত্যুর পর ঘোষণা করা হয় যে আঙ্কারায় সমাধিসৌধ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তার দেহ আঙ্কারা নৃকুলবিদ্যা জাদুঘরে থাকবে। সমাধিসৌধটি কোথায় নির্মাণ করা হবে তা নির্ধারণের জন্য সরকার একটি কমিশন গঠন করেছিলো। প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ১৭ জানুয়ারি ১৯৩৯ তারিখে প্রজাতন্ত্রী জনতা দলের সংসদীয় দলের সভায় রাসাত্তেপেতে ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো। এই সিদ্ধান্তের পর, সমাধিসৌধ নির্মাণের স্থানের সাথে সম্পর্কিত জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করার সময় ভবনের নকশা নির্ধারণের জন্য ১৯৪১ সালের ১ মার্চে একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্প প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ১৯৪২ সালের ২ মার্চে শেষ হওয়া প্রতিযোগিতার পরে করা মূল্যায়নের ফলস্বরূপ, নকশায় কিছু সংশোধনের পর এমিন ওনাত ও ওরহান আরদার প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ১৯৪৪ সালের ৯ অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এর নির্মাণ শুরু হয়। কিছু সমস্যা ও বাধার কারণে পরিকল্পনা করার পরে চারটি পর্যায়ে পরিচালিত এই নির্মাণকাজ ১৯৫৩ সালের অক্টোবরে শেষ হয়, নির্মাণ কাজ চলাকালেও প্রকল্পে পরিবর্তন আনা হয়। ১৯৫৩ সালের ১০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আতাতুর্কের দেহ এখানে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৬৬ সালে জেমাল গুরসেল ও ১৯৭৩ সালে ইসমত ইনোনুর দেহ আনাতকাবিরে সমাহিত করা হয়। ১৯৬০–১৯৬৩ সালের মধ্যে দাফন করা এগারো জনের কবর আনাতকাবির থেকে ১৯৮৮ সালে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এখানে সমাধি ভবনের সম্মানকক্ষ নামক অংশে আতাতুর্কের একটি প্রতীকী সমাধিস্তম্ভ রয়েছে। এটি কমপ্লেক্সের প্রধান ভবন যেখানে আতাতুর্কের দেহ এই ভবনের নীচের তলায় সমাধি কক্ষে সমাহিত করা হয়েছিলো। কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বার সিংহ সড়ক নামক ছায়াবীথির সম্মুখে অবস্থিত। এই সড়ক আনুষ্ঠান চত্বরে নিয়ে যায়। সমাধিটি পোর্টিকো দ্বারা বেষ্টিত এই এলাকার একপাশে অবস্থিত হলেও সেখানে চত্বরের অপর পাশে সিংহ সড়কের দিকে কমপ্লেক্সের প্রস্থান অংশ রয়েছে। সিংহ সড়কের চারটি কোণ, আনুষ্ঠান চত্বরের প্রস্থান ও চত্বরের কোণগুলো সহ এই কমপ্লেক্সে দশটি মিনার, দুটি ভাস্কর্য গোষ্ঠী এবং আতাতুর্ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধ জাদুঘর রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভ বিভাগ নামে পরিচিত এই সমস্ত স্থাপনাগুলো শান্তি উদ্যান নামে একটি জঙ্গলে ঘেরা। রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করা ভবনগুলোর উপরিভাগে ও মেঝেতে বিভিন্ন ধরনের মার্বেল ও ট্র্যাভারটাইন ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন জায়গায় রিলিফ, মোজাইক, ফ্রেস্কো ও খোদাই কৌশল দ্বারা সাজানো হয়েছে। দ্বিতীয় জাতীয় স্থাপত্য আন্দোলনের শৈলীতে নির্মিত এই নব্য-ধ্রুপদীয় ভবন হিট্টীয়, গ্রিক, সেলজুক ও উসমানীয় সংস্কৃতির চিহ্ন বহন করে যারা আজকের তুরস্ক ভূমিকে ইতিহাসের বিভিন্ন সময় শাসন করেছে।
তুর্কি সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ আনাতকাবিরের সমস্ত পরিষেবা ও কাজের দায়িত্বে রয়েছে। এখানে যে কার্যকলাপগুলো অনুষ্ঠিত হয় তা একটি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তুরস্কের সরকারি ছুটির দিন ও ১০ নভেম্বরে আতাতুর্কের মৃত্যুবার্ষিকীতে সরকার কর্তৃক আনাতকাবিরে সরকারি স্মরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি এবং অন্যান্য প্রকৃত প্রতিনিধি ও সংসদীয় ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের দ্বারা অনুষ্ঠানগুলোও এখানে সংগঠিত হয়। আনাতকাবির হলো একটি জায়গা যেখানে বিদেশী সরকারি কর্মকর্তারা তুরস্কে তাদের সরকারি সফরের সময় মাঝেমধ্যে যান ও সেখানে সরকারি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।