Loading AI tools
ফরাসি অভিনেত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইজাবেল ইয়াসমিনা আদজানি (ফরাসি: Isabelle Yasmina Adjani জন্ম: ২৭ জুন ১৯৫৫) হলেন একজন ফরাসি অভিনেত্রী ও গায়িকা। তিনি সর্বকালের সবচেয়ে সমাদৃত ফরাসি অভিনেত্রীদের একজন। তিনি পোসেসিওঁ (১৯৮১), লেতে মরত্রিয়ে (১৯৮৩), কামিই ক্লোদেল (১৯৮৮), লা রেন মার্গো (১৯৯৪) ও লা জুর্নে দ্য লা জ্যুপ (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সেজার পুরস্কার লাভ করেন, যা সেজার পুরস্কারের ইতিহাসের কোন অভিনয়শিল্পীর সর্বাধিক অর্জন। ২০১০ সালে তিনি লেজিওঁ দনরের শেভালিয়ে[2] এবং ২০১৪ সালে অর্দ্র দেজারজে দে লেত্র-এর কমান্ডার উপাধিতে ভূষিত হন।
ইজাবেল আদজানি | |
---|---|
Isabelle Adjani | |
জন্ম | ইজাবেল ইয়াসমিনা আদজানি ২৭ জুন ১৯৫৫ |
জাতীয়তা | ফরাসি |
মাতৃশিক্ষায়তন | ভিনসেনেস বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেত্রী, গায়িকা |
কর্মজীবন | ১৯৭০–বর্তমান |
সঙ্গী | ব্রুনো ন্যুতেঁ (বিচ্ছেদ. ১৯৮৩) ড্যানিয়েল ডে-লুইস (বি. ১৯৮৯; বিচ্ছেদ. ১৯৯৫) |
সন্তান | ২ |
১৯৭৫ সালের লিস্তোয়ার দাদেল আশ. চলচ্চিত্রে আদেল উ্যগো চরিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।[3] কামিই ক্লোদেল চলচ্চিত্রের জন্য তিনি তার দ্বিতীয় মনোনয়ন পান এবং তিনি প্রথম ফরাসি অভিনেত্রী হিসেবে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দুটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন পান। তিনি ১৯৮১ সালে পোসেসিওঁ ও কোয়ার্টেট চলচ্চিত্রের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং ১৯৮৯ সালে কামিই ক্লোদেল চলচ্চিত্রের জন্য বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক অর্জন করেন। তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল ল্য লোকাত্যার (১৯৭৬), নসফেরাটু: ফান্টোম ডের নাখট (১৯৭৯), সাবওয়ে (১৯৮৫), দিয়াবোলিক (১৯৯৬) এবং সু লে জ্যুপ দে ফিই (২০১৪)।
ইজাবেল ইয়াসমিনা আদজানি ১৯৫৫ সালের ২৭শে জুন প্যারিসের ১৭তম আরোঁদিসমাঁয় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ শেরিফ আদজানি কন্সটান্টিনে জন্মগ্রহণকারী আলজেরীয় কাবিল এবং মাতা এমা "গুস্টি" আউগুস্টা শোয়েইনবের্গার বাভারিয়ায় জন্মগ্রহণকারী জার্মান ক্যাথলিক।[4][5][6][7][8][9] শেরিফের সাথে গুস্টির পরিচয় ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় সমাপ্তির দিকে। তখন শেরিফ ফরাসি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তারা বিয়ে করে প্যারিসে ফিরে আসেন, কিন্তু গুস্টি তখনো ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারতেন না।[10][11] গুস্টি শেরিফকে তার নামের প্রথমাংশ ব্যবহার করতে বলেন, কারণ শেরিফ নামটি "মার্কিনী" শব্দের মত শোনায়।[12] আদজানির এরিক নামে এক ছোট ভাই ছিল। তিনি পেশায় আলোকচিত্রী ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
ইজাবেল প্যারিসের উত্তর-পশ্চিমের জেনেভিলিয়ার উপশহরে বেড়ে ওঠেন। সেখানে তার পিতা একটি গ্যারেজে কাজ করতেন।[13] শৈশবেই তিনি ফরাসি ও জার্মান দুই ভাষায়ই দক্ষতা অর্জন করেন।[14][15][16] বিদ্যালয়ে একটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় জয়ের পর তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। তিনি মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৭৬ সালে ভিনসেনেস বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীক্ষা বিষয়ে পড়াশোনা সমাপ্ত করেন।[5]
১৪ বছর বয়সে আদজানি প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ল্য প্যতি বুনিয়া (ফরাসি: Le Petit Bougnat, ১৯৭০)।[17] তিনি ১৯৭২ সালে কমেদি-ফ্রঁসোয়ায় ধ্রুপদী অভিনেত্রী হিসেবে যোগদান করে প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি মলিয়েরের লেকোল দে ফেম (ফরাসি: L'École des femmes)-এর প্রধান নারী চরিত্র আনিয়েসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রশংসিত হন। তিনি অল্পদিনের মধ্যেই চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরুর লক্ষ্যে মঞ্চনাটক ত্যাগ করেন।
কয়েকটি চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি ১৯৭৪ সালের লা জিফল (ফরাসি: La Gifle) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে মাঝারি মানের সফলতা অর্জন করেন। ফ্রঁসোয়া ত্রুফো চলচ্চিত্রটি দেখেছিলেন এবং এরপরই তাকে তার পাঁচ বছর পূর্বে সমাপ্ত করা লিস্তোয়ার দাদেল আশ. (ফরাসি: L'Histoire d'Adèle H.) পাণ্ডুলিপি থেকে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে আদেল উ্যগো চরিত্রের জন্য বাছাই করেন। সমালোচকগণ তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন,[5] এবং মার্কিন সমালোচক পলিন কায়েল তার অভিনয়ের প্রতিভাকে "মহাবিস্ময়" বলে অভিহিত করেন।[18] এই কাজের জন্য তিনি তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং ১৯ বছর বয়সে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার মনোনয়নের ফলে তিনি সেসময়ের শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সর্বকনিষ্ঠ অস্কার মনোনয়ন পাওয়ার রেকর্ড গড়েন এবং পরের ৩০ বছর তিনি এই রেকর্ডটির মালিক ছিলেন।[19]
তিনি লিস্তোয়ার দাদেল আশ. চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর হলিউডের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন, তন্মধ্যে রয়েছে ওয়াল্টার হিলের ১৯৭৮ সালের অপরাধমূলক থ্রিলার দ্য ড্রাইভার। তিনি এর পূর্বে দি আদার সাইড অব মিডনাইট চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেন। তিনি হলিউডকে "কল্পনার শহর" বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, "আমি মার্কিনী নই। আমি পুরস্কার জয় করবো এমনভাবে বেড়ে ওঠিনি।" অপরদিকে ত্রুফো বলেন, "ফ্রান্স তার জন্য খুবই ছোট স্থান। আমি মনে করি ইজাবেল মার্কিন চলচ্চিত্রের জন্য জন্মেছে।"[5] তিনি দ্য ড্রাইভার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সম্মত হন, কারণ তিনি ওয়াল্টার হিলের প্রথম চলচ্চিত্র হার্ড টাইমস-এর গুনমুগ্ধ ছিলেন।[20] দ্য ড্রাইভার চলচ্চিত্রটি তার নিজের দেশ ফ্রান্সে বিপুল দর্শক দেখলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা ভালো করতে পারেনি।[21]
তিনি ভের্নার হের্ৎসগের ১৯৭৯ নসফেরাটু: ফান্টোম ডের নাখট (জার্মান: Nosferatu: Phantom der Nacht, অনুবাদ 'নসফেরাটু: রাতের ছায়াশরীরী') চলচ্চিত্রে লুসি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি বিপুল সমাদৃত হয় এবং ইউরোপের বক্স অফিসে ব্যবসা সফল হয়। রজার ইবার্ট চলচ্চিত্রটি পছন্দ করেন এবং এতে আদজানিকে বাছাই হের্ৎসগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। তিনি লিখেন যে "তাকে কেবল মুখভঙ্গির পরিপূর্ণতার জন্যই নয় বরং উচ্চমার্গীয় স্থানে অবস্থান করার কৌতুহলী গুণাবলির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।"[22] ক্লাউস কিন্স্কি ও ব্রুনো গানৎস তাদের মাতৃভাষায় আরও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে অভিনয় করতে পারবেন, তাই চলচ্চিত্রটি মার্কিন পরিবেশক টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের অনুরোধে ইংরেজি ও জার্মান দুই ভাষাতেই নির্মাণ করা হয়।[23]
১৯৮১ সালে তিনি জঁ রিসের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত কোয়ার্টেট এবং ভীতিপ্রদ পোসেসিওঁ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি পোসেসিওঁ চলচ্চিত্রে স্নায়বিক উত্থানপতনে জর্জরিত নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার প্রথম সেজার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের লেতে মোরত্রিয়ে (ফরাসি: L'été meurtrier) চলচ্চিত্রে একজন প্রতিশোধপরায়ণ নারী চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তার দ্বিতীয় সেজার পুরস্কার অর্জন করেন। একই বছর তিনি সের্জ গ্যাঁসবুর্গের গীত ও সুরে ফরাসি পপ অ্যালবাম পুল ম্যারিন প্রকাশ করেন। এছাড়া তাকে লুক বেসোঁর পরিচালনায় এই অ্যালবামের শীর্ষ গান "পুল ম্যারিন"-এর মিউজিক ভিডিওতে দেখা যায়।
তিনি ১৯৮৮ সালে ভাস্কর কামিই ক্লোদেলের জীবনীমূলক কামিই ক্লোদেল চলচ্চিত্রের সহ-প্রযোজনা ও এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই কাজের জন্য তিনি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক ও তার তৃতীয় সেজার পুরস্কার অর্জন করেন এবং শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে দ্বিতীয় একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি প্রথম ফরাসি অভিনেত্রী হিসেবে দুটি একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন পান। এছাড়া চলচ্চিত্রটি বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে।
তিনি পাত্রিস শ্যরো পরিচালিত ১৯৯৪ সালের মহাকাব্যিক লা রেন মার্গো (ফরাসি: La Reine Margot) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তার চতুর্থ সেজার পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি ২০০৯ সালের লা জুর্নে দ্য লা জ্যুপ (ফরাসি: La Journée de la jupe) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পঞ্চমবারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সেজার পুরস্কার লাভ করেন, যা সেজার পুরস্কারের ইতিহাসের কোন অভিনয়শিল্পীর সর্বাধিক অর্জন। চলচ্চিত্রটিতে তাকে এক সমস্যা জর্জরিত ফরাসি উপশহরের স্কুল শিক্ষক হিসেবে দেখা যায়, যে দুর্ঘটনাবশত তার এক শিক্ষার্থীর নিকট প্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে দেয়। ২০০৯ সালের ২০শে মার্চ ফ্রেঞ্চ আর্ট চ্যানেলে চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়, যেখানে রেকর্ড সংখ্যক ২.২ মিলিয়ন দর্শক ছিল। পরে এটি ২০০৯ সালের ২৫শে মার্চ চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়।[24]
আদজানি চিত্রগ্রাহক ও নির্মাতা ব্রুনো ন্যুতেঁর সাথে সম্পর্কে জড়িত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তাদের পুত্র বার্নাবে সাইদ-ন্যুতেঁর জন্ম হয়। ব্রুনো তার প্রযোজিত ওগুস্ত রদ্যাঁর সহকর্মী ও প্রেমিকা হিসেবে সুপরিচিত ভাস্কর কামিই ক্লোদেলের জীবনীমূলক কামিই ক্লোদেল চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন।[13]
১৯৮৯ থেকে ১৯৯৫ সালে ড্যানিয়েল ডে-লুইসের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।[14] ১৯৯৫ সালে তাদের পুত্র গ্যাব্রিয়েল-কে ডে-লুইসের জন্মের পূর্বে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে।[25] পরবর্তী কালে সুরকার জঁ-মিশেল জারের সাথে আদজানির সম্পর্ক হয়, কিন্তু ২০০৪ সালে তারা আলাদা হয়ে যান।[25]
আদজানি ফ্রান্সে অভিবাসন-বিরোধী ও আলজেরীয়-বিরোধী অনুভূতির বিরুদ্ধে কথা বলেন।[13] ২০০৯ সালে তিনি এইডস রোধে কনডম ফলপ্রসূ পদ্ধতি নয় পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের এমন বিবৃতির সমালোচনা করেন।[26] একই বছর তিনি ১৯৭৭ সালে সুইজারল্যান্ডে ১৩ বছর বয়সী কিশোরীকে ড্রাগ প্রদান ও ধর্ষণের অপরাধে রোমান পোলান্স্কির গ্রেফতারের বিরুদ্ধে পোলান্স্কির সমর্থনে পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।[27]
২০১৭ সালে ফ্রান্স ইন্টার রেডিও স্টেশনে ভিনসেন্ট জোস তার সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকারকালীন তিনি ভ্যাকসিনের ব্যাপারে তার অস্বস্তি এবং বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন গ্রহণের বিরোধিতা করেন।[28][29][30][31]
২০১০: লেজিওঁ দনরের শেভালিয়ে ২০১৪: অর্দ্র দেজারজে দে লেত্র-এর কমান্ডার
মনোনীত
বিজয়ী
বিজয়ী
বিজয়ী
বিজয়ী
মনোনীত
বিজয়ী
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.