উত্তরাখণ্ড
ভারতের একটি রাজ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
উত্তরাখণ্ড (হিন্দি: उत्तराखण्ड, পূর্বতন নাম উত্তরাঞ্চল) [2] উত্তর ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এই রাজ্যে অনেক হিন্দু মন্দির ও তীর্থস্থান আছে বলে, এটিকে ‘দেবভূমি’ বা ‘দেবতাদের দেশ’ বলা হয়। হিমালয়, ভাবর ও তরাই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এই রাজ্য বিখ্যাত। ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের হিমালয় ও তৎসংলগ্ন জেলাগুলি নিয়ে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ২৭তম রাজ্য হিসেবে উত্তরাখণ্ড রাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছিল।[3] উত্তরাখণ্ডের উত্তর দিকে চীনের তিব্বত, পূর্বদিকে নেপালের মহাকালী অঞ্চল ও সুদূর-পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিণ দিকে ভারতের উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্য অবস্থিত। উত্তরাখণ্ড রাজ্যটি দুটি বিভাগে বিভক্ত। এগুলি হল: গাড়োয়াল ও কুমায়ূন বিভাগ। এই দুই বিভাগের অন্তর্গত মোট জেলার সংখ্যা ১৩। উত্তরাখণ্ডের অন্তর্বর্তী রাজধানী হল দেরাদুন। দেরাদুনই এই রাজ্যের বৃহত্তম শহর ও রেল টার্মিনাস। উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট নৈনিতাল শহরে অবস্থিত।
উত্তরাখণ্ড उत्तराखण्ड उत्तराखण्डराज्यम् | |
---|---|
রাজ্য | |
ডাকনাম: দেবভূমি देवभूमि | |
ভারতের মানচিত্রে উত্তরাখণ্ডের অবস্থান (লাল রঙে চিহ্নিত) | |
উত্তরাখণ্ডের মানচিত্র | |
স্থানাঙ্ক (দেরাদুন): ৩০.৩৩° উত্তর ৭৮.০৬° পূর্ব / 30.33; 78.06 | |
দেশ | ভারত |
অঞ্চল | উত্তর ভারত |
প্রতিষ্ঠা | ৯ নভেম্বর, ২০০০ [a] |
ইতিহাস | সারসংক্ষেপ
|
রাজধানী | দেরাদুন [b] |
বৃহত্তম শহর | দেরাদুন |
জেলা | ১৩টি |
সরকার | |
• শাসক | ভারত সরকার |
• রাজ্যপাল | বেবি রানি মৌর্য |
• মুখ্যমন্ত্রী | ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত |
• উত্তরাখণ্ড বিধানসভা | এককক্ষীয় (৭১টি আসনবিশিষ্ট) [c] |
• সংসদীয় ক্ষেত্র | রাজ্যসভা (৩টি আসন) লোকসভা (৫টি আসন) |
• হাইকোর্ট | উত্তরাখণ্ড হাইকোর্ট |
আয়তন | |
• মোট | ৫৩,৪৮৩ বর্গকিমি (২০,৬৫০ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ১৯শ |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,০১,১৬,৭৫২ ৫১,৫৪,১৭৮ ♂ ৪৯,৬২,৫৭৪ ♀ |
• ক্রম | ২০শ |
• জনঘনত্ব | ১৮৯/বর্গকিমি (৪৯০/বর্গমাইল) |
• ঘনত্বের ক্রম | ২০শ |
বিশেষণ | উত্তরাখণ্ডি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | IN-UT |
যানবাহন নিবন্ধন | UK 01—XX |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১১) | ০.৫১৫[1](মধ্যম) |
মানব উন্নয়ন সূচক অনুসারে স্থান | ৭ম |
লিঙ্গ অনুপাত | ৮৪১♀/১,০০০♂ |
সাক্ষরতা (২০১১) | ৭৯.৬৩% ৮৮.৩৩% ♂ ৭০.৭০% ♀ |
কথিত ভাষা | হিন্দি গাড়োয়ালি কুমায়োনি উর্দু পাঞ্জাবি জৌনসারি ভোটি রাজি রাথি/সালানি নেপালি |
সরকারি ভাষা | হিন্দি সংস্কৃত |
ওয়েবসাইট | www.uk.gov.in |
^a উত্তরপ্রদেশ পুনর্গঠন আইন, ২০০০ অনুসারে উত্তরপ্রদেশ ভেঙে ২০০০ সালের ৯ নভেম্বর সৃষ্ট ^b দেরাদুন রাজ্যের অন্তর্বর্তী রাজধানী। নতুন রাজধানী এখনও নির্বাচিত হয়নি। ^c ৭০টি আসন নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং ১টি আসন আংলো ইন্ডিয়ান গোষ্ঠীর থেকে মনোনীত সদস্যের জন্য রক্ষিত। |
পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে উত্তরাখণ্ড ভূখণ্ডে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষের বসতি থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতে বৈদিক যুগে এই অঞ্চল কুরু ও পাঞ্চাল মহাজনপদের অংশ ছিল। গাড়োয়াল ও কুমায়ূন অঞ্চলের প্রথম উল্লেখযোগ্য রাজবংশটি ছিল কুনিন্দ রাজবংশ। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর এই রাজবংশ আদি শৈব ধর্মাবলম্বী ছিল। কলসিতে প্রাপ্ত অশোকের শিলালিপি থেকে জানা যায়, এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের অস্তিত্ব ছিল। মধ্যযুগে এই অঞ্চল কুমায়ূন রাজ্য ও গাড়োয়াল রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৮০৩ সালে এই রাজ্য নেপালের গোর্খা সাম্রাজ্যের অন্তর্গত হয়। ১৮১৬ সালে ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধের পর অধুনা উত্তরাখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল সুগৌলী সন্ধিচুক্তি বলে ব্রিটিশ ভারতের অঙ্গীভূত হয়। পূর্বতন গাড়োয়াল ও কুমায়ূন ও গাড়োয়াল রাজ্যদুটি পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি রাজ্য হলেও, বিভিন্ন প্রতিবেশী জাতিগোষ্ঠীর অবস্থান এবং পারস্পরিক ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও প্রথাগত মিলের জন্য দুই অঞ্চলের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা ১৯৯০-এর দশকে উত্তরাখণ্ড আন্দোলনকে বিশেষ গতি দিয়েছিল।
উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের উত্তরাখণ্ডি বলা হয়। বিশেষভাবে অঞ্চল অনুসারে, উত্তরাখণ্ডের অধিবাসীদের গাড়োয়ালি ও কুমায়ুনি – এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ১০,১১৬,৭৫২। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ভারতের ১৯শ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য। এই রাজ্যের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ রাজপুত ও ব্রাহ্মণ। রাজ্যের ৮৫% লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। মুসলমানেরা এই রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। এছাড়াও শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও জৈনরাও এই রাজ্যে বাস করেন। গাড়োয়ালি ও কুমায়ূনী ভাষা এবং অন্যান্য পার্বত্য উপভাষাগুলি রাজ্যের প্রধান আঞ্চলিক ভাষা। হিন্দি এই রাজ্যের সর্বাধিক কথিত ভাষা। উত্তরাখণ্ডই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানী সংস্কৃত একটি সরকারি ভাষার মর্যাদা পায়।