Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ঊষা রঞ্জন ঘটক (১৯৩১–২০০৫) ছিলেন একজন ভারতীয় জৈব রসায়নবিদ, বিন্যাস রসায়নবিদ এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্সের (আইএসিএস) পরিচালক।[1] তাঁর বিশেষ অবদান ছিল ডাইটারপেইনয়েডের বিন্যাস-নির্বাচনী সংশ্লেষণের অদৃষ্টপূর্ব সংগতির বিকাশ। [2] তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমী[3] এবং ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমীর নির্বাচিত ফেলো ছিলেন।[4] ১৯৭৪ সালে, বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ভারত সরকারের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ তাঁকে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারভাটনগর পুরষ্কারে ভূষিত করেছিল। এটি একটি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার। রাসায়নিক বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের জন্য তিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।[5]
ঊষা রঞ্জন ঘটক | |
---|---|
জন্ম | ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত | ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১
মৃত্যু | ১৮ জুন ২০০৫ ৭৪) কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | (বয়স
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন |
|
পরিচিতির কারণ | স্টিরিওেকেমিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জৈব সংশ্লেষণ সম্পর্কিত গবেষণা |
পুরস্কার |
|
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র |
|
প্রতিষ্ঠানসমূহ | |
ডক্টরাল উপদেষ্টা |
|
ঊষা রঞ্জন ঘটক ১৯৩১ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ শহর (বর্তমানে বাংলাদেশে)। হেম রঞ্জন ঘটক-সৌদামিনী দেবীর সাত সন্তানের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন।[1] তিনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পরে ১৯৪৯ সালে আগরতলা থেকে ইন্টারমিডিয়েট পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি আশুতোষ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক (বিএসসি, সাম্মানিক) হয়েছিলেন এবং ১৯৫৩ সালে রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনের জন্য তিনি মতিলাল মল্লিক পদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। পরবর্তীকালে, তিনি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স (আইএসিএস) এ ডক্টরাল পড়াশুনার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন এবং জৈব রসায়নবিদ পি সি দত্তের অধীনে গবেষণা করেছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।[4] তিনি আরও দু'বছর আইএসিএসের সাথে ছিলেন। তারপরে তিনি তাঁর ডক্টরাল পরবর্তী পড়াশুনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনটি কেন্দ্রে তিনি গবেষণা করেছিলেন, সেগুলি হল মেইন বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলি এবং সেন্ট জনস বিশ্ববিদ্যালয়।[1] তিনি ১৯৬৩ সালে ভারতে ফিরে এসে আইএসিএস-এ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনি সেখানে কাজ করে গেছেন। এর মধ্যে, তিনি জৈব রসায়ন বিভাগের প্রধান (১৯৭৭–৮৯) এবং পরিচালক হিসাবে (১৯৮৯-৯৬) দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[6] পরে, তিনি ভারতীয় রাসায়নিক জীববিজ্ঞান সংস্থার সাথে আইএনএসএ এর বরিষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে যুক্ত হয়েছিলেন।[4]
ঘটক অনিন্দিতার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং এই দম্পতি কলকাতায় থাকতেন। এখানেই, ২০০৫ সালের ১৮ই জুন, হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।[1]
ঘটকের অবদান মূলত ছিল বিন্যাস রসায়ন নিয়ন্ত্রিত জৈব সংশ্লেষণ। তিনি পলিকার্বোসাইক্লিক ডাইটারপেনয়েড এবং ব্রিজড-রিং যৌগগুলির সংশ্লেষণের পদ্ধতিগুলি বিকাশের জন্য পরিচিত ছিলেন।[7] ডিঅক্সিপোডোকার্পিক অ্যাসিড, ডিআইসোপ্রোপাইল ডিহাইড্রোএবিয়েটিক অ্যাসিড এবং এর সাথে সম্পর্কিত ৫টি এপিমারের চারটি সম্ভাব্য রেসমিক মিশ্রণ সম্পর্কে ছিল তাঁর কাজ। এর আগে পর্যন্ত বিন্যাস রসায়নে যে অনিশ্চয়তা ছিল তা এর পরে অনেকটাই কেটে গিয়েছিল।[1] তিনি জিব্বারেলিন (বৃদ্ধি-নিয়ন্ত্রক উদ্ভিদ হরমোনগুলির একটি গোষ্ঠী) সম্পর্কিত যৌগগুলির সম্পূর্ণ সংশ্লেষণ ব্যাখ্যা করেছিলেন।[8] ডায়াজোকিটোন এবং পাশাপাশি নতুন অ্যানিউলেশন প্রতিক্রিয়াগুলির মাধ্যমে ধনাত্মক আয়নিত এবং র্যাডিকাল প্রক্রিয়া জড়িত রেজিও-নির্দিষ্ট ও বিন্যাস-নির্দিষ্ট আন্তঃআণবিক ক্ষারকীয় পুনঃস্থাপন করে তিনি মুক্ত র্যাডিক্যাল সাইক্লাইজেশন রসায়ন বোঝা সহজ করেছিলেন।[4]
ঘটক তাঁর গবেষণাগুলি, তাঁর লেখা একটি বই এ সেঞ্চুরি, ১৮৭৬-১৯৭৬ [9] এবং সহকর্মী-পর্যালোচিত জার্নালে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি নিবন্ধের[10][টীকা 1] মাধ্যমে নথিভুক্ত করে গেছেন। একটি অনলাইন নিবন্ধের সংগ্রহস্থল, রিসার্চগেট, এর মধ্যে ১৪৮টিকে তাদের তালিকাভুক্ত করেছে।[11] তিনি বেশ কয়েকজন ডক্টরাল ছাত্রকে গবেষণায় পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং তাঁর রচনাগুলি থেকে বেশ কয়েকজন লেখক উদ্ধৃত করেছেন।[টীকা 2] তিনি বেশ কয়েকটি জার্নালের সাথে যুক্ত ছিলেন, এর মধ্যে আছে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ কেমিস্ট্রি (বিভাগ বি), প্রসিডিংস অফ ইন্ডিয়ান সায়েন্সেস (রসায়ন বিজ্ঞান) এবং ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির কার্যক্রম। এদের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য হিসাবে তিনি যুক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[4]
বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ ১৯৭৪ সালে ঘটককে শান্তি স্বরূপ ভটনাগর পুরস্কার প্রদান করেছিল। এটি একটি সর্বোচ্চ ভারতীয় বিজ্ঞান পুরস্কার।[12] ১৯৭৬ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমি তাঁকে ফেলো নির্বাচিত করেছিল[3] এবং তিনি ১৯৮০ সালে ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো হয়েছিলেন।[4] কেমিক্যাল রিসার্চ সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ২০০৩ সালে তাঁকে আজীবন কৃতিত্ব পুরস্কার প্রদান করেছিল।[13] তাঁর বেশ কয়েকটি পুরস্কৃত বক্তৃতার মধ্যে আছে অধ্যাপক কে. ভেঙ্কটারামন এন্ডোমেন্ট বক্তৃতা (১৯৮২), ভারতীয় রাসায়নিক সমিতির আচার্য পি. সি. রায় স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৮৫), অধ্যাপক এন. ভি. সুব্বা রাও স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৮৬), ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আর. সি. শাহ স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৮৬), দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের টি. আর. শেষাদ্রি স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৮৭), পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবা কর্তার সিং স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৯০) এবং ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির এস. স্বামীনাথনের ষাটতম জন্মদিনের স্মৃতি বক্তৃতা (১৯৯৪)।[7] তিনি সহযোগী সদস্য হিসাবে রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি এবং কেমিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডনের সাথেও যুক্ত ছিলেন।[4] ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স ঘটকের সম্মানে প্রফেসর ইউ. আর. ঘটক এন্ডোমেন্ট লেকচার নামে একটি বার্ষিক বক্তৃতার আয়োজন করে।[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.