Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কাল্লার (বা কাল্লান, পূর্বে কল্লারি হিসাবে লেখা হত) হল দক্ষিণ ভারতের সম্পর্কযুক্ত তিনটি জাতির মধ্যে একটি যারা মুক্কুলাঠোর পারস্পরিক জোট গঠন করে।[1] মারাভার এবং আগমুদায়ারের সঙ্গে কাল্লার, সমান্তরাল পেশার ভিত্তিতে একটি ঐক্যবদ্ধ সামাজিক জাতি গঠন করে, যদিও তাদের অবস্থান এবং ঐতিহ্য একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।[2]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
---|---|
তামিলনাড়ু | |
ভাষা | |
তামিল | |
ধর্ম | |
লোক হিন্দু ধর্ম |
কাল্লার একটি তামিল শব্দ যার অর্থ তস্কর। তাদের ইতিহাসের সময়কাল দস্যুবৃত্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[3] কাল্লাররা নিজেরাই "ভূমিস্বামী" উপাধি ব্যবহার করে,[4] অন্যান্য প্রস্তাবিত ব্যুৎপত্তিগত উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে "কালো চামড়ার", "বীর", এবং " টডি -ট্যাপারস"।[5]
নৃতাত্ত্বিক সুসান বেইলি উল্লেখ করেছেন যে মারাভারের মতোই কাল্লার নামটি তামিল পালাইয়াক্কারদের (যোদ্ধা-প্রধান) দেওয়া একটি উপাধি। মেষপালক কৃষক যারা তাদের সশস্ত্র অনুচর হিসাবে কাজ করেছিল, এই উপাধি তাদের জন্য। অধিকাংশ পলিগার (সামন্ত প্রভু যারা দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময় থেকে সামরিক প্রধান এবং প্রশাসনিক গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন), যারা ১৭শ এবং ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে তেলুগু অঞ্চলের পাশাপাশি তামিল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেছিল, তারা নিজেরাই কাল্লার, মারাভার এবং ভাতুকা সম্প্রদায় থেকে এসেছিল।[6] কাল্লার হল পশ্চিম ভারতীয় শব্দ কোলির সমার্থক, যার অর্থ তস্কর, কিন্তু উচ্চভূমিতে পশুপালন অর্থও রয়েছে।[7] বেলির মতে, কাল্লারকে "পৈতৃক ঐতিহ্যের যোদ্ধা-মেষপালক তামিলনাড়ুর গ্রামীণ গোষ্ঠীর শিরোনাম" হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।[8]
বেলি মন্তব্য করেছেন যে কল্লার এবং মারাভার কোন উপাধি হিসাবে নয় বরং একটি জাতি হিসাবে চিহ্নিত হয়,"...তারা স্পষ্টতই তামিলনাড়ু অঞ্চলের প্রাচীন জীবনের সাথে যুক্ত ছিল না। পলিগার শাসিত অশান্ত সাম্রাজ্যের এই মানুষগুলো সত্যিকার অর্থে জাতিতে পরিণত হয়েছে, তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক অতীতে তাদের সখ্যতার বন্ধন তৈরি হয়েছে"।[7] ১৮ শতকের শেষের দিকে, ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্ম, বর্ণের ধারণা এবং অন্তঃবিবাহের মতো অনুশীলনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল ন্যূনতম। এরপর বিভিন্ন প্রভাবের ফলে জাতি হিসেবে এদের বিবর্তন ঘটে, প্রভাবগুলি ছিল,- জঙ্গল কেটে ফেলার ফলে অন্যান্য গোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি, রাজ্য-নির্মাণ এবং আদর্শগত পরিবর্তন।[6]
ব্রিটিশ সূত্রগুলি প্রায়শই কাল্লার এবং সংশ্লিষ্ট জাতিগুলিকে "কাজের বাইরে থাকা সৈনিক" হিসাবে চিহ্নিত করেছে। অনেক কাল্লার গত কয়েক শতাব্দী ধরে যোদ্ধার পাশাপাশি কৃষক ছিলেন। নাদুদের নেটওয়ার্কে সংগঠিত কাল্লার সেনাপতিরা মাদুরাইয়ের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করত। নায়করা কাল্লার সর্দার উপাধি দিয়ে তাদের শান্ত বা পরাধীন করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বিশেষ কাজ হয়নি। এই নাদুরা নায়কের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং লোকগীতিগুলি থেকে জানা যায় মাদুরাই শহরের সার্বভৌম এবং স্বাধীন বলে বিবেচিত কাল্লার দলগুলির দ্বারা ফসল তোলা এবং অভিযান চালানো সম্ভব নয় এমন ক্ষেত্রগুলির কথা বলা হয়েছিল। নায়কদের পতন এবং ইউসুফ খানের আবির্ভাবের পরে, ১৮ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। ১৭৫৫ সালে শুরু করে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রেসিডেন্সি বাহিনী মেলুরের কাল্লারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযানে নিযুক্ত ছিল, কিন্তু কয়েক দশক পরেও কাল্লার অভিযানকারী দলগুলি বেশ উল্লেখযোগ্য হুমকির সৃষ্টি করেছিল। ১৮০১ সালে, তারা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে একের পর এক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তামিল ও তেলুগু অঞ্চলের পালেগারদের সাথে নেটওয়ার্ক তৈরি করে।[9]
১৮ শতকের শেষের দিকে, কাল্লাররা দক্ষিণ তামিলনাড়ুর শত শত গ্রামে, বিশেষ করে মাদুরাইয়ের পশ্চিম অঞ্চলে কাভালকার বা প্রহরী হিসাবে কাজ করছিল। এই কাভালকাররা তাদের কাজ সঠিকভাবে করেছে তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের ভাড়া-মুক্ত জমি,মানিয়াম, দেওয়া হয়েছিল। এই কাভাল মানিয়ামগুলি সাধারণত পালাইয়াকারদের হাতে ছিল, যারা একটি ছোট সেনাদল বজায় রাখার জন্য জমি এবং ফসলের ভাগ ব্যবহার করত। ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের একটি সাধারণ অভিযোগ ছিল যে এই কাভালকাররা তাদের অবস্থানের "অপব্যবহার" করছে এবং যাদের জীবিকা রক্ষা করার কথা ছিল, সেই কৃষকদের শোষণ করছে।পালাইকাররা প্রায়ই কাল্লারদের ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে রাখত, যারা ব্রিটিশ সূত্র অনুসারে পালাইকাররা গ্রামবাসীদের লুট করার জন্য তাদের ব্যবহার করত। ১৮০৩ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা এই অধিকারগুলি বাতিল করা হয়েছিল এবং সেনাদল বিলুপ্ত হয়েছিল। যাইহোক, কাভাল প্রথা বিলুপ্ত করা হয়নি বরং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল।[9]
১৮১৬ সালে সংস্কারের ফলে কাভালকারদের দায়িত্ব বাতিল হয়, ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণের জন্য কাভালকারদের দায়িত্ব ছিল ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং কিছু মূল্য (ফি) কেটে রাখা। ব্রিটিশ সূত্র দাবি করে যে কাভালকাররা অত্যধিক ফি আদায় করত। ১৯ শতকের শেষের দিকে, সেনারা একটি "ছায়া প্রশাসন" গঠন করে। যদিও ব্রিটিশ দাবি করে যে কাল্লার প্রহরীদের "সুরক্ষা গোষ্ঠী" পরিচালনা করার খবর অতিরঞ্জিত, কাল্লার প্রহরীদের তখনও ক্ষমতা ছিল কৃষকদের উপর সহিংসতা করার।[9]
২০ শতকের শুরুর দিকে, মাদুরাইয়ের কাছে অনেক সম্প্রদায়ের চাষীরা সম্প্রদায়ের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে কাল্লার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের কারণগুলি জটিল: আংশিকভাবে কাল্লার প্রহরী দ্বারা দেখানো কর্তৃত্বের অপব্যবহার, আংশিকভাবে কৃষি সমস্যা এবং আংশিক-ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। আন্দোলনগুলি কাল্লারদের বিরুদ্ধে সহিংসতার রূপ নেয়, যার মধ্যে ছিল অগ্নিসংযোগ এবং তাদের জোরপূর্বক গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া। ১৯১৮ সালে, সম্প্রদায়টিকে অপরাধী উপজাতির তালিকায় রাখা হয়েছিল।[9]
তৎকালীন পুদুক্কোত্তাই রাজ্যের থনডাইমান রাজবংশ কাল্লার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল।[10]
ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের দ্বারা উল্লিখিত কল্লারদের ঐতিহ্যগত প্রথার মধ্যে ছিল "কোল্লারি লাঠি" ( তামিল: ভালই তাড়ি, কল্লারতাড়ি)। এটি একটি বাঁকানো লাঠি বা "নকল বুমেরাং", যেটিকে ১০০ গজ (৯১ মি) দূরত্বে ছুঁড়ে ফেলা যায়।[11] ১৯৫৭ সালে লেখার সময়, লুই ডুমন্ট উল্লেখ করেছিলেন যদিও সাহিত্যে এই অস্ত্রের ঘন ঘন উল্লেখ পাওয়া গেছে, কিন্তু এটি পিরামালাই কাল্লারদের মধ্যে আর পাওয়া যায়না।[12] [ পৃষ্ঠা প্রয়োজন ]
কাল্লাররা ঐতিহ্যগতভাবে আমিষভোজী ছিল,[13] যদিও তামিলনাড়ুর ১৯৭০-এর দশকের একটি জরিপ থেকে জানা গেছে যে, ৩০% জরিপ করা কল্লার, যদিও আমিষভোজী ছিল, কিন্তু বয়ঃসন্ধির পর মাছ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল।[14] যদিও কল্লার ভোজনপ্রণালীতে মাংস ছিল, কিন্তু সেটিও ঘন ঘন খাওয়া হত না। সেটি শনিবারের রাত এবং উৎসবের দিনগুলিতে সীমাবদ্ধ ছিল। তা সত্ত্বেও, এই অল্প পরিমাণ মাংস কাল্লার সামাজিক অবস্থার ধারণাকে প্রভাবিত করার জন্য যথেষ্ট ছিল।[12]
কাল্লাররা ঐতিহ্যগতভাবে একটি তামিল সমরকলা অনুশীলন করত যেটি আদিমুরাই, চিন্না আদি এবং বর্ণ আতি নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ১৯৫৮ সাল থেকে, এগুলিকে দক্ষিণ-শৈলী কালারিপায়াত্তু হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও এগুলি কালারিপায়াত্তুর প্রাচীন মার্শাল আর্ট থেকে আলাদা যা ঐতিহাসিকভাবে কেরালায় পাওয়া শৈলী ছিল।[15]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.