খায়বারের যুদ্ধ
যুদ্ধ / From Wikipedia, the free encyclopedia
খায়বারের যুদ্ধ (আরবি: غزوة خيبر, হিব্রু: קרב ח'ייבר) ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন আরবের মদিনা নগরী থেকে ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা) দুরে অবস্থিত খায়বার নামক মরুভূমিতে বসবাসরত ইহুদিগণের সাথে মুসলিমগণের সঙ্ঘটিত একটি যুদ্ধ। মুসলিমদের ইতিহাস অনুসারে, মুসলিমগণ সেখানে দুর্গে আশ্রয় নেয়া ইহুদিদেরকে আক্রমণ করেছিল ।[4]
খায়বারের যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: মুহাম্মাদ সা. এর সামরিক অভিযানসমূহ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
মুসলিম সেনাবাহিনী | খায়বার মরুভূমির ইহুদিগণ | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
আলী ইবনে আবি তালিব |
আল-হারিস ইবনে আবু জয়নব†[1] মারহাব ইবনে আবু জয়নব†[1] | ||||||
শক্তি | |||||||
১,৬০০ |
খায়বার ১০,০০০[2] বনু গাফতান ৪,০০০[2] | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
২০ জনের কম নিহত হন[3] ৫০ আহত | ৯৩ জন নিহত |
সপ্তম হিজরিতে খায়বারের ইহুদিরা পরিকল্পনা করে মদীনা আক্রমণ করার কারণে খায়বার যুদ্ধ হয়। খায়বার মদীনা থেকে ৮০ মাইল দূরের একটি বড় শহর। এখানে ইহুদীদের অনেকগুলো দুর্গ ও ক্ষেত খামার ছিল। মূলত খায়বার ছিল ইহুদীদের একটি উপনিবেশ। খায়বারের ইহুদীরা বনু কোরাইজা গোত্রের ইহুদীদেরকে বিশ্বাসঘাতকায় উদ্দীপিত করেছিল। মুহাম্মাদ সা. কে হত্যা করার পরিকল্পনা এই খায়বার থেকে করা হতো। খায়বারের ইহুদীরা গাতাফান গোত্র ও বেদুঈনদের সাথে মিলিত হয়ে মদীনা আক্রমণ করার ব্যাপারে পরিকল্পনা করছিল। খায়বার যুদ্ধে পরাজিত ইহুদীদেরকে মুহাম্মাদ সা. কোন নির্বাসন দেন নি। প্রতি বছর তাদের উৎপাদিত ফল ফসলের অর্ধেক ইহুদীরা মুসলমানদের কে দিবে এই শর্তে খায়বারের ইহুদীরা খায়বারে থাকার অনুমতি পায়। কিন্তু এই খায়বার যুদ্ধের পর পর এক ইহুদী মহিলা মুহাম্মাদ সা. কে আমন্ত্রণ করে ছাগলের মাংসের ভিতরে বিষ মিশিয়ে মুহাম্মাদ সা. কে হত্যা করতে চেয়েছিল। এই ঘটনার পরেও মুহাম্মাদ সা. খায়বারের সকল ইহুদীদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
আক্রমণের কারণ প্রসঙ্গে, স্কটিশ ঐতিহাসিক উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট খায়বার যুদ্ধে বনু নাদির গোত্রের উপস্থিতি উদ্ধৃত করেন, যারা মদিনার ইসলামী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী আরব গোত্রগুলোর মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতা জাগিয়ে তুলছিল। ইতালীয় প্রাচ্যবিদ লরা ভেক্সিয়া ভ্যাগ্লিয়েরি ওয়াটের তত্ত্বের সাথে সহমত পোষণ করে দাবী করেন যে, যুদ্ধের পেছনে আরও কারণ থাকতে পারে, যেগুলো হল, ইহুদিদের উক্ত দুরভিসন্ধির প্রতিক্রিয়া মুহাম্মাদের সাহাবীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধ অভিযানসমূহের রসদ হিসেবে যুদ্ধলব্ধ মালামালসমূহ লুণ্ঠনের উপযোগিতা। [5][6]
পরিশেষে খায়বারের ইহুদিগণকে অবরোধ করা হয় এবং উক্ত উপত্যকায় তাদেরকে থাকার অনুমতি দেয়া হয় এই শর্তে যে, তারা মুসলিমগণকে তাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক বাৎসরিকভাবে প্রদান করবে। খলিফা ওমররের সময়ে ওমর কর্তৃক বহিষ্কৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই তাদের বসবাস অব্যাহত ছিল। এই বিজয়ের ফলাফলস্বরূপ বিজিত ইহুদিদের উপর ইসলামের বিধান অনুযায়ী জিজিয়া কর আরোপ করা হয় এবং তাদের অধিভুক্ত জমিসমূহ মুসলিমদের প্রশাসনিক দখলের অন্তর্ভুক্ত হয়।[5][7][8] বিনিময়ে, ইহুদিগণ তাদের ধর্মপালনের অনুমতি পায়, বৃহৎ পরিসরে নিজ সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভ করে, মুসলিমদের কাছ থেকে বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষা লাভের প্রতিশ্রুতি লাভ করে এবং তাদেরকে সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ এবং যাকাত প্রদানের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়, যেগুলো মুসলিম নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক।