চারুকলা
মূলত নন্দনতত্ত্বের জন্য বিকশিত শিল্প / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইউরোপীয় একাডেমিক ঐতিহ্যে, চারুকলা প্রাথমিকভাবে নন্দনতত্ত্ব বা সৌন্দর্যের জন্য বিকশিত হয়। আলংকারিক শিল্প বা ফলিত শিল্প থেকে আলাদা হয়ে, যার মধ্যে কিছু ব্যবহারিক কাজ, যেমন: মৃৎশিল্প বা বেশিরভাগ ধাতুর কাজও অন্তর্ভুক্ত। ইতালীয় রেনেসাঁয় বিকশিত নন্দনতত্ত্ব অনুসারে, সর্বোচ্চ শিল্প ছিল সেটি যা শিল্পীর কল্পনার পূর্ণ প্রকাশ এবং প্রদর্শনে সক্ষম, যা কোন ব্যবহারিক বিবেচনার, যেমন একটি কেটলি তৈরি এবং অলংকরণ, দ্বারা সীমাবদ্ধ না। আবার এটিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে শিল্পকর্ম তৈরিতে যাতে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে কাজ ভাগ করে দেওয়া না হয়, যেমন একটি আসবাবপত্র তৈরিতে করা হয়ে থাকে।[1]
চারুকলা বা ললিতকলা (ইংরেজি: Fine Arts) বলতে শিল্পকলার বেশ কিছু ধারার একটি দলকে বোঝায়, যার মধ্যে অঙ্কন, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, সঙ্গীত, কাব্য, মঞ্চনাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয় অন্তর্ভুক্ত।[2] বর্তমানে, ললিতকলায় সাধারণভাবে চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি, ধারণাগত শিল্প, ও প্রিন্টমেকিং যুক্ত হয়।
চারুকলার একটি সংজ্ঞা হল "একটি ভিজ্যুয়াল আর্ট যা প্রাথমিকভাবে নান্দনিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় এবং এর সৌন্দর্য এবং অর্থবহতার ভিত্তিতে বিচার করা হয়, বিশেষ করে, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, অঙ্কন, জলরঙ, গ্রাফিক্স এবং স্থাপত্য এগুলো।"[3] এদিক থেকে চিন্তা করলে চারুশিল্প এবং আলংকরিক বা ফলিত শিল্পকলার মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যতদূর শিল্পের ভোক্তাদের কথা ভাবা হয়, নান্দনিক গুণাবলীর উপলব্ধির জন্য একটি পরিমার্জিত বিচার যা সাধারণত ভাল রুচিবোধ হিসেবে উল্লেখ্য, তা জনপ্রিয় শিল্প এবং বিনোদন থেকে চারুশিল্পকে আলাদা করে।[4]
"চারু" শব্দটি দ্বারা শিল্পকর্মের গুণমানকে বোঝায় না, বরং ঐতিহ্যগত পশ্চিম ইউরোপীয় অনুশাসন অনুসারে শৃঙ্খলা ও বিশুদ্ধতাকে নির্দেশ করে।[6] তবে স্থাপত্য ব্যতীত, যেখানে একটি ব্যবহারিক উপযোগীতা গৃহীত হয়েছে। এই সংজ্ঞায় মূলত "উপযোগীতার" প্রয়োগ বা আলংকারিক শিল্পগুলি বাদ দেয়া হয়েছে এবং কারুশিল্প হিসাবে বিবেচিত পণ্যগুলিকেও বাদ দেয়া হয়। তবে সমসাময়িক অনুশীলনে, এই পার্থক্য এবং সীমাবদ্ধতাগুলি কার্যকরীভাবে অর্থহীন, কারণ এখন শিল্পীর ধারণা বা অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা যে মাধ্যমেই প্রকাশ করা হোক না কেন।[7]
রেনেসাঁর পর থেকে চারুশিল্প শব্দটি সাধারণত শুধুমাত্র পশ্চিমা শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যদিও অনুরূপ ধারা অন্যান্য সংস্কৃতির শিল্পে, বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার শিল্পের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। "চারুশিল্প" কে কখনো কখনো "প্রধান শিল্প" ও বলা হয়, যেখানে "অপ্রধান শিল্প" দ্বারা আলংকারিক শিল্পকে বোঝানো হয়ে থাকে। তবে এই ধারণা মূলত মধ্যযুগীয় এবং প্রাচীন শিল্পের জন্য প্রযোজ্য।