Loading AI tools
মার্কিন অভিনেতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জেমস আর্ল জোন্স (ইংরেজি: James Earl Jones; ১৭ জানুয়ারি ১৯৩১ - ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪) একজন মার্কিন অভিনেতা ছিলেন। ষাট বছরের অধিক সময় ধরে তিনি অভিনয় করছেন এবং তাকে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রখ্যাত ও বৈচিত্রময় অভিনয়শিল্পীদের একজন"[1] এবং "যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অভিনয়শিল্পী" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[2] তিনি অস্কার, এমি, গ্র্যামি ও টনি পুরস্কার বিজয়ী অল্প কয়েকজন অভিনয়শিল্পীদের একজন।[3][4][5][6] ১৯৮৫ সালে আমেরিকান থিয়েটার হল অব ফেমে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং ১৯৯২ সালে তিনি ন্যাশনাল মেডেল অব আর্টস, ২০০২ সালে কেনেডি সেন্টার সম্মাননা, ২০০৯ সালে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ও ২০১১ সালে একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার লাভ করেন।[7][8]
জেমস আর্ল জোন্স | |
---|---|
ইংরেজি: James Earl Jones | |
জন্ম | আর্কাবুটলা, মিসিসিপি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | ১৭ জানুয়ারি ১৯৩১
মৃত্যু | ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৯৩) পলিং, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স
মাতৃশিক্ষায়তন | মিশিগান স্কুল অব মিউজিক, থিয়েটার অ্যান্ড ড্রামা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অভিনেতা |
কর্মজীবন | ১৯৪৮-বর্তমান |
দাম্পত্য সঙ্গী | জুলিয়েন মারি (বি. ১৯৬৮; বিচ্ছেদ. ১৯৭২) সেসিলিয়া হার্ট (বি. ১৯৮২; মৃ. ২০১৬) |
সন্তান | ১ |
পিতা-মাতা | রবার্ট আর্ল জোন্স (পিতা) রুথ কনেলি (মাতা) |
১৯৫৭ সালে সানরাইজ অ্যাট ক্যাম্পোবেলো নাটক দিয়ে তার ব্রডওয়ে মঞ্চে অভিষেক ঘটে। এরপর তিনি ওথেলো, হ্যামলেট ও কিং লিয়ার-সহ একাধিক শেকসপিয়ারীয় নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি দ্য গ্রেট হোয়াইট হোপ মঞ্চনাটকে মুষ্টিযোদ্ধা জ্যাক জেফারসন চরিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে টনি পুরস্কার অর্জন করেন এবং এর চলচ্চিত্ররূপে (১৯৭০) অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কার ও নাট্যধর্মী চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
জোন্স অগাস্ট উইলসনের ফেন্সেস (১৯৮৭) মঞ্চনাটকে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার দ্বিতীয় টনি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি আর্নেট টমসনের বয়োবৃদ্ধ দম্পতির সম্পর্কিত অন গোল্ডেন পন্ড (২০০৫) নাটকে স্বামীর চরিত্রে এবং গোর ভিদালের দ্য বেস্ট ম্যান (২০১২) নাটকে সাবেক রাষ্ট্রপতি চরিত্রে অভিনয় করে আরও দুটি টনি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। ব্রডওয়ে মঞ্চে তার অভিনীত অন্যান্য নাটক হল ক্যাট অন আ হট টিন রুফ (২০০৮), ড্রাইভিং মিস ডেইজি (২০১০-১১), ইউ ক্যান্ট টেক ইট উইথ ইউ (২০১৪), ও দ্য জিন গেম (২০১৫-১৬)। ২০১৭ সালে তিনি আজীবন স্বীকৃতি হিসেবে একটি বিশেষ টনি পুরস্কার লাভ করেন।[9][10]
স্ট্যানলি কুবরিকের ড. স্ট্রেঞ্জলাভ অর: হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওরিয়িং অ্যান্ড লাভ দ্য বম (১৯৬৪)-এ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে জোন্সের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। তিনি ক্লডিন (১৯৭৪)-এ অভিনয় করে সঙ্গীতধর্মী বা হাস্যরসাত্মক চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। তিনি স্টার ওয়ার্স চলচ্চিত্র ধারাবাহিকে ডার্থ ভেডার চরিত্রে কণ্ঠ দিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল দ্য ম্যান (১৯৭২), কোনান দ্য বারবারিয়ান (১৯৮২), মেটওয়ান (১৯৮৭), কামিং টু আমেরিকা (১৯৮৮), ফিল্ড অব ড্রিমস (১৯৮৯), দ্য হান্ট ফর রেড অক্টোবর (১৯৯০), স্নিকার্স (১৯৯২), দ্য স্যান্ডলট (১৯৯৩), ডিজনির দ্য লায়ন কিং (১৯৯৪), ও ক্রাই, দ্য বিলাভড কান্ট্রি (১৯৯৫)। টেলিভিশনে অভিনয় করে জোন্স আটটি প্রাইমটাইম এমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র হিট ওয়েভ (১৯৯০) ও অপরাধমূলক ধারাবাহিক গ্যাব্রিয়েল্স ফায়ার (১৯৯১)-এর জন্য দুটি পুরস্কার অর্জন করেন। তার অন্যান্য টেলিভিশন কর্মসমূহ হল রুটস (১৯৭৭), জিসাস অব নাজারেথ (১৯৭৭), পিকেট ফেন্সেস (১৯৯৪), হোমিসাইড: লাইফ অন দ্য স্ট্রিট (১৯৯৭) ও এভারউড (২০০৪)।
জেমস আর্ল জোন্স ১৯৩১ সালের ১৭ই জানুয়ারি মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের আর্কাবাটলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[11] তার মাতা রুথ (বিবাহপূর্ব কনেলি; ১৯১১-১৯৮৬) একজন শিক্ষিকা ও গৃহপরিচারিকা ছিলেন এবং পিতা রবার্ট আর্ল জোন্স (১৯২০-২০০৬) একজন মুষ্টিযোদ্ধা, খানসামা ও গাড়ি চালক ছিলেন। জেমসের জন্মের কিছুদিন পর তার পিতা তাদের পরিবার ছেড়ে চলে যান এবং পরবর্তীকালে নিউ ইয়র্ক ও হলিউডে মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে কাজ করেন।[11][12] ১৯৫০-এর দশকে জেমস ও তার পিতার মধ্যে পুনরায় সুসম্পর্ক স্থাপনের পূর্ব পর্যন্ত তাদের সাক্ষাৎ হয়নি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান যে তার পিতামাতা দুজনেই মিশ্র আফ্রিকান-মার্কিন, আইরিশ ও স্থানীয় আমেরিকান বংশোদ্ভূত।[13][14]
জোন্স মিশিগানের ম্যানিস্টি শহরের রামসডেল থিয়েটারে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি মঞ্চের সুতার ছিলেন এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে তিনি অভিনয় ও মঞ্চ নির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। রামসডেলে প্রথম মৌসুমে তিনি ওথেলো চরিত্রে অভিনয় করেন।[15] এই সময়ে তিনি এবিসি রেডিওর সংকলিত ধারাবাহিক থিয়েটার-ফাইভ-এ কণ্ঠ দেন।[16] ১৯৫৭ সালে মলি কাজান পরিচালিত দি ইগহেড নাটকের মধ্যে দিয়ে তার ব্রডওয়ে মঞ্চে অভিষেক ঘটে।[17] নাটকটি মাত্র ২১ বার মঞ্চস্থ হয়,[18] কিন্তু তিন মাস পর ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি কর্ট থিয়েটারে ডোর শারি'র সানরাইজ অ্যাট ক্যাম্পোবেলো নাটকে এডওয়ার্ড দ্য বাটলার চরিত্রটি প্রথম অভিনয় করেন।[19]
১৯৬১ সালে জোন্স অফ-ব্রডওয়ে মঞ্চে জঁ জ্যনে'র দ্য ব্ল্যাকস নাটকে রস্কো লি ব্রাউন, সিসেলি টাইসন, লুইস গসেট জুনিয়র-সহ আরও প্রখ্যাত আটজন কৃষ্ণাঙ্গ অভিনয়শিল্পীর সাথে অভিনয় করেন।[20] নিউ ইয়র্ক গণগন্থাগারে টাইসন ও জোন্সের একটি করে ছবিসহ এই নাটকের ছবির সংকলন রয়েছে।[21]
১৯৬০-এর দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত জোন্স উইলিয়াম শেকসপিয়ারের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করে সে সময়ের সুপরিচিত শেকসপিয়ারীয় অভিনেতা হয়ে ওঠেন। তিনি ওথেলো ও কিং লিয়ার-এর নাম চরিত্র, এ মিডসামার নাইট'স ড্রিম-এ ওবেরন, মেজার ফর মেজার-এ অ্যাবর্সন, হ্যামলেট-এ ক্লডিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া এই সময়ে স্ট্যানলি কুবরিকের ড. স্ট্রেঞ্জলাভ অর: হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওরিয়িং অ্যান্ড লাভ দ্য বম (১৯৬৪)-এ তরুণ লেফটেন্যান্ট লোথার জগ, বি-৫২ বোম্বার্ডিয়ার চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। জোন্স এরপর রিচার্ড বার্টন, এলিজাবেথ টেইলর ও অ্যালেক গিনেসের সাথে দ্য কমেডিয়ান্স চলচ্চিত্রে একজন শল্যচিকিৎসক ও হাইতীয় বিপ্লবী নেতা চরিত্রে অভিনয় করেন।[22]
১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জোন্স ওয়াশিংটন, ডি.সি.র এরিনা স্টেজে জেন আলেকজান্ডারের সাথে হাওয়ার্ড স্যাকলারের দ্য গ্রেট হোয়াইট হোপ নাটকে অভিনয় করেন। তিনি মুষ্টিযুদ্ধ চ্যাম্পিয়ন জ্যাক জনসন থেকে অনুপ্রাণিত প্রতিভাধর কিন্তু সমস্যা জর্জরিত মুষ্টিযোদ্ধা জ্যাক জেফারসন চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালের ৩রা অক্টোবর ব্রডওয়ে মঞ্চে মঞ্চস্থ হলে নাটকটি বিপুল সফলতা অর্জন করে। নাটকটি সমাদৃত হয় এবং নাটকে পুলিৎজার পুরস্কার অর্জন করে। জোন্স নিজেও ১৯৬৯ সালে মঞ্চনাটকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে টনি পুরস্কার ও ড্রামা ডেস্ক পুরস্কার অর্জন করেন।[23][24]
১৯৭০ সালে জোন্স দ্য গ্রেট হোয়াইট হোপ নাটকের চলচ্চিত্ররূপে জেন আলেকজান্ডারের সাথে অভিনয় করেন। এটি জোন্সের প্রথম প্রধান চরিত্রে কাজ। জোন্স মঞ্চে পূর্বে তার অভিনীত মুষ্টিযোদ্ধা জ্যাক জনসন চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করে। সিডনি পোয়াটিয়ের পর তিনি এই পুরস্কারে মনোনীত দ্বিতীয় আফ্রিকান-মার্কিন অভিনেতা।[12] ভ্যারাইটি তার অভিনয় সম্পর্কে লিখে, "জোন্সের মঞ্চে অভিনীত চরিত্রটির পুনঃসৃজন চোখের জন্য স্বস্তিদায়ক অভিজ্ঞতা।"[25] ইন দ্য ম্যান (১৯৭২) চলচ্চিত্রে জোন্স একজন সিনেটর চরিত্রে অভিনয় করেন, যিনি অপ্রত্যাশিতভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান-মার্কিন রাষ্ট্রপতি হন।[22]
২০১৯ সালে তিনি দ্য লায়ন কিং (১৯৯৪)-এর সিজিআই পুনর্নির্মাণে মুফাসা চরিত্রে কণ্ঠ দেন। জোন্স মূল চলচ্চিত্রের কণ্ঠশিল্পীদলের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি এই পুনর্নির্মাণে কণ্ঠ দেন।[26][27] পরিচালক জন ফাভ্রো বলেন মূল চলচ্চিত্রের জোন্সের সংলাপগুলোর অধিকাংশই একই রয়ে গেছে।[28][29] মুফাসার ভাই স্কার চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়া চুয়াটেল এজিওফর বলেন, "[দর্শকদের জন্য] এই পুনঃযাত্রায় [জোন্সের এই চরিত্রে পুনঃকণ্ঠদান] খুবই ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে। এটি এক প্রজন্মের মধ্যে একক গুণমানসম্পন্ন কণ্ঠ।"[28] জোন্স কামিং টু আমেরিকা (১৯৮৮)-এর অনুবর্তী পর্ব কামিং ২ আমেরিকা (২০২১) চলচ্চিত্রে তার পূর্বে অভিনীত কিং জ্যাফে জোফার চরিত্রে অভিনয় করেন, এটি তার অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র।[30][31]
১৯৬৮ সালে জোন্স অভিনেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী জুলিয়েন মারিকে বিয়ে করেন। তারা ১৯৬৪ সালে ওথেলো নাটকে অভিনয়কালে একে অপরের সাথে পরিচিত হন।[32] তাদের কোন সন্তান ছিল না। ১৯৭২ সালের তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে।[33] ১৯৮২ সালে তিনি অভিনেত্রী সেসিলিয়া হার্টকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান ফ্লিন।[34][35] হার্ট ২০১৬ সালের ১৬ই অক্টোবর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন।[36]
জোন্স ২০২৪ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কের পলিঙ্গে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।[30][37] জোন্সের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক্সে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় তার ধারাভাষ্যে "উই আর মিশিগান" ভিডিও প্রকাশ করে।[38][39] ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দি আডভান্সমেন্ট অব কালারড পিপল, স্যাগ-অ্যাফট্রা, দ্য পাবলিক থিয়েটার ও মেজর লিগ বেসবল জোন্সের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানায়।[40] নিউ ইয়র্ক সিটির এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং স্টার ওয়ার্স চলচ্চিত্রের জোন্সের আইকনিক ডার্থ ভেডার খল চরিত্রের ন্যায় আলোক প্রজ্জলিত করে।[41]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.