ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস
ডায়াবেটিস আক্রান্তদের সম্ভাব্য মরণঘাতী জটিলতা / From Wikipedia, the free encyclopedia
ডায়েবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (ইংরেজি: Diabetic ketoacidosis) হচ্ছে ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগের একটি সম্ভাব্য প্রাণঘাতী জটিলতা।[6] এই জটিলতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি করা, পেটব্যাথা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, মূত্রত্যাগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, দুর্বলতা, বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া, এবং কিছু ক্ষেত্রে চেতনা হ্রাস পাওয়া।[6] অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর মুখে মিষ্টি ধরনের গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে।[6] লক্ষণগুলোর সূত্রপাত সাধারণত খুব দ্রুততার সাথে ঘটে।[6] যেসকল লোকেরা জানেন না যে তাদের ইতোমধ্যেই বহুমূত্ররোগে আক্রান্ত তারা অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস ডায়াবেটিস থাকার প্রথম লক্ষণ হিসেবে এই শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারেন।[1]
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস | |
---|---|
ডায়াবেটিস কিটোঅ্যাসিডোসিসের ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে তাই এর চিকিৎসায় শিরা পথে তরল পদার্থ প্রয়োগ করা প্রয়োজন হয় | |
বিশেষত্ব | এন্ডোক্রাইনোলজি |
লক্ষণ | বমি করা, পেটব্যথা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, মূত্রত্যাগের হার বৃদ্ধি পাওয়া, মানসিক বিভ্রান্তি, মুখে বিশেষ গন্ধ সৃষ্টি হওয়া[1] |
জটিলতা | সেরিব্রাল ইডিমা[2] |
রোগের সূত্রপাত | অপেক্ষাকৃত খুব-ই দ্রুততার সাথে[1] |
কারণ | ইনসুলিন কমে যাওয়া[3] |
ঝুঁকির কারণ | সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবেটিস, অন্য ধরনের ডায়াবেটিসে খুব প্রচলিত নয়[1] |
রোগনির্ণয়ের পদ্ধতি | রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা, রক্তের নিম্ন পিএইচ, কিটোঅ্যাসিড[1] |
পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | হাইপারওসোমোলার ননকিটোটিক অবস্থা, অ্যালকহোলিক কিটোঅ্যাসিডোসিস, ইউরিমিয়া, স্যালিসাইলেট বিষক্রিয়া[4] |
চিকিৎসা | ইন্ট্রাভেনাস তরল, ইনসুলিন, পটাশিয়াম[1] |
সংঘটনের হার | টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি বছরে ৪–২৫%[1][5] |
সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রেই এই জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তবে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে অন্য ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্তদেরও এই জটিলতা হতে পারে।[6] এই জটিলতার সৃষ্টির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ, সঠিকভাবে ইনসুলিন গ্রহণ না করা, স্ট্রোক, এবং নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড।[6] শরীরে ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের সৃষ্টি হয়, কারণ ইনসুলিনের অভাবে শরীর শর্করা বিপাকের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করতে না পারায়, শরীর ফ্যাটি এসিডের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করা শুরু করে যার ফলশ্রুতিতে শরীরে অম্লীয় কিটোন বডির তৈরি হয়।[7] রোগনির্ণয়ের জন্য রক্তে উচ্চমাত্রার শর্করার উপস্থিতি, নিম্নমাত্রার পিএইচ, এবং প্রশ্রাবে বা রক্তে কিটো এসিডের পরিমাণের ওপর নির্ভর করা হয়।
প্রাথমিকভাবে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড থেরাপি ও ইনসুলিন প্রয়োগের মাধ্যমে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের চিকিৎসা শুরু হয়।[6] জটিলতার মারাত্মকতার ওপর ভিত্তি করে ইনসুলিন সরাসরি রক্তে বা প্রচলিত পদ্ধতিতে পেশির ওপর ইনজেকশন হিসেবে প্রয়োগ করা হতে পারে।[7] সাধারণত এসবের পাশাপাশি রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা নেমে যাওয়া ঠেকাতে রক্তে পটাশিয়ামও প্রয়োগ করা হয়।[6] চিকিৎসাকালীন সময়ে নিয়মতি রক্তে শর্করা ও পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয়।[6] আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কোনো ধরনের ব্যাকটেরিঘটিত সংক্রমণে আক্রান্ত থাকেন তবে সেটি আরোগ্যের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।[8] যেসব ক্ষেত্রে রক্তের পিএইচের মাত্রা খুব বেশি মাত্রায় কম থাকে, সেক্ষেত্রে সোডিয়াম বাইকার্বনেট দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু এর কার্যকারীতার নিশ্চয়তার ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি এবং এর প্রয়োগ সুপারিশও করা হয় না।
ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিসের মারাত্মকতা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম।[5] যুক্তরাজ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে এই জটিলতায় আক্রান্তের হার প্রায় ৪%, অপরদিকে মালয়েশিয়ায় এই হার প্রায় ২৫%।[5][6] ১৮৮৬ সালে সর্বপ্রথম এই জটিলতার কথা বর্ণনা করা হয়, এবং ১৯২০-এর দশকে ইনসুলিন থেরাপির প্রচলন হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্বের সকল স্থানে ও সকল ক্ষেত্রেই এই জটিলতায় আক্রান্তরা মৃত্যুবরণ করতেন।[9] তবে বর্তমানে সময়োপযোগী ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদান করা হলে মৃত্যুর হার ১–৪%।[10]