তামবোরা পর্বত
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি / From Wikipedia, the free encyclopedia
তামবোরা পর্বত একটি সক্রিয় স্তরীভূত কোণ আকারের আগ্নেয়গিরি যা ইন্দোনেশিয়ার সুমবাওয়া দ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। সুমবাওয়ার উত্তর ও দক্ষিণে ভুগর্ভস্থ টেকটোনিক প্লেটের উচ্চভাগ অবস্থিত, এবং এর নিচের টেকটোনিক প্লেটের অন্তক্রিয়ার ফলেই তামবোরা পর্বতের উৎপত্তি। তামবোরা পর্বতের উচ্চতা প্রায় ৪,৩০০ মিটার (১৪,১০০ ফিট)[1] যা একে অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম সুউচ্চ শৃঙ্গে পরিনত করে। এর ভেতরের ম্যাগমা চেম্বার কয়েক দশক ধরে পুর্ণ হতে থাকে, এবং ১০ এপ্রিল ১৮১৫ তে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়।[2] এর ফলে অগ্নুৎপাত ঘটে। অগ্নুৎপাতের আগ্নেয় বিস্ফোরক মানদণ্ড (volcanic explosivity index) ছিলো ৭। এটির ছিলো ১৮০ খ্রীষ্টাব্দের লেক ট্যুপো অগ্নুৎপাতের পর একমাত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আগ্নেয় বিস্ফোরক মানদণ্ডে ৭ মাত্রার অগ্নুৎপাত।[3] (তবে ধারণা করা হয় ৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দের পায়েকটু পর্বতের অগ্নুৎপাত অগ্নেয় বিস্ফোরক মানদণ্ডে ৭ মাত্রার হতে পারে)। তামবোরা পর্বতের সর্বশেষ অগ্নুৎপাত ঘটে ১৯৬৭ সালে, যা আগ্নেয় বিস্ফোরক মানদণ্ডে ০ মাত্রার ছিলো।
তামবোরা পর্বত | |
---|---|
সর্বোচ্চ বিন্দু | |
উচ্চতা | ২,৭২২ মিটার (৮,৯৩০ ফুট) |
সুপ্রত্যক্ষতা | ২,৭২২ মিটার (৮,৯৩০ ফুট) |
তালিকাভুক্তি | Ultra Ribu |
ভূগোল | |
অবস্থান | Sumbawa, Lesser Sunda Islands, Indonesia |
ভূতত্ত্ব | |
শিলার বয়স | 57,000 years |
পর্বতের ধরন | Stratovolcano/Caldera |
সর্বশেষ অগ্ন্যুত্পাত | 1967 ± 20 years |
তামবোরা আগ্নেয়গিরির ১৮১৫ সালের অগ্নুৎপাত ইতিহাসের সব থেকে বৃহৎ অগ্নুৎপাত যার নিঃসরণ আয়তন ছিলো ১৬০ বর্গ কিলোমিটার। বিস্ফোরনের শব্দ ২০০০ কিলোমিটার (১২০০ মাইল) দূরবর্তী সুমাত্রা দ্বীপেও শুনা গিয়েছিলো। ভারী আগ্নেয় ছাই বোর্নিও, সুলাওয়েসি, জাভা ও মালুকু দ্বীপপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছিল। অগ্নুৎপাতের নিঃসরণের ফলে নির্গত বর্জ্য পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ভূমির উর্বরতা নষ্ট করে দেয়, ফলে খাদ্যাভাব ও বিভিন্ন রোগে অনেক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তামবোরা আগ্নেয়গিরির ১৮১৫ সালের অগ্ন্যুৎপাতে অন্তত ৭১০০০ মানুষের প্রাণহানী ঘটে, যার মধ্যে ১১০০০–১২০০০ সরাসরি অগ্ন্যুৎপাতে মারা যায়,[3] বাকিরা পরবর্তীতে খাদ্যাভাব ও বিভিন্ন রোগে প্রাণ হারান। মৃতের সংখ্যা ৯২০০০ বলে বহুল প্রচলিত হলেও তা ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।[4][5]
এই অগ্নুৎপাত পৃথিবীজুড়ে আবহাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে রয়েছে "আগ্নেয় শীতকাল"। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের আবহাওয়ায় প্রভাবের ফলে ১৮১৬ সাল পরিচিত হয় "গ্রীষ্মকাল বিহীন বছর" নামে। উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন স্থানে শস্য ধ্বংস হয় ও গবাদি পশু মারা যায়। ফলশ্রুতিতে ১৯শ শতকের সবথেকে ক্ষতিকর দুর্ভিক্ষের সূত্রপাত হয়।
২০০৪ সালে সংঘটিত এক খননকার্যের সময় প্রত্নতাত্ত্বিকরা ১৮১৫ এর অগ্ন্যুৎপাতে চাপা পড়া বিভিন্ন সংস্কৃতিক নিদর্শন আবিষ্কার করেন।[6] এগুলো ৩ মিটার গভীর পাইরোক্লাস্টিকের নিচে চাপা পড়েছিল। এই নিদর্শনগুলো ঠিক ১৮১৫ সালের অবস্থানেই রয়েছে। এই স্থানকে "পূবের পাম্পেই" বলা হয়।