Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নরেন্দ্র নায়েক (জন্ম: ৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫১) ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের মাঙ্গলুরুর অধিবাসী একজন যুক্তিবাদী, সংশয়ী, এবং ভণ্ড গুরুদের দুষ্কর্মাদি অনাবৃতকারী।[1]
নরেন্দ্র নায়েক | |
---|---|
জন্ম | |
পেশা | যুক্তিবাদী, নাস্তিক, কলাম লেখক এবং প্রাণরসায়ন অধ্যাপক |
দাম্পত্য সঙ্গী | আশা নায়েক |
নায়েক ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেশনালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনস (এফআইআরএ) এর বর্তমান সভাপতি। তিনি ১৯৭৬ সালে দক্ষিণ কন্নড় যুক্তিবাদী সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তখন থেকেই তিনি এর সম্পাদক।[1] তিনি ২০১১ সালের জুলাইয়ে এইড উইদাউট রিলিজিয়ন (ধর্ম ছাড়া সহায়তা) নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[2] তিনি দেশে ঘুরে ঘুরে কর্মশালার আয়োজন করেন এবং সেইসব কর্মশালায় বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য প্রচার করার সাথে সাথে কীভাবে গুরু এবং জালিয়াতদের ভণ্ডামির অনাবরণ করা যাবে তা দেখান। তিনি ভারতে এরকম ২০০০ এরও বেশি কর্মশালার আয়োজন করেছেন। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, ইংল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল সহ বহু দেশে তিনি এই উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করেছেন।[3] তিনি একজন বহুভাষী যিনি ৯টি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কথা বলার সময় তারঁ এই জ্ঞান তাঁকে তাকে সাহায্য করে।[4]
স্বামী বিবেকানন্দের (জন্মনাম নরেন্দ্র নাথ দত্ত) নামানুসারে নায়েকের নামকরণ করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন যে তাঁর বাবার ব্যবসায়ের জায়গাটি ব্যাংক কর্তৃক পুনরায় দখল হয়ে যাওয়ার পর এবং তাঁর বাবা একজন জ্যোতিষীর পরামর্শে ঋণ পরিশোধের জন্য লটারির টিকিট কেনেন। জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বানীতে তাঁর বাবার আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল যে এই টিকিটে প্রথম পুরস্কার উঠবে। এই ঘটনা তাঁকে যুক্তিবাদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।[5] তিনি মাঙ্গলুরুর আইনজীবী আশা নায়ককে বিবাহ করেছিলেন, তাঁদের বিবাহে কোন ধার্মিক মঙ্গলাচরণ হয়নি। নায়েক ১৯৭৮ সালে মাঙ্গলুরুর কস্তুরবা মেডিকেল কলেজে প্রাণরসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন।[6][7] ১৯৮২ সালে, কেরলের এক বিখ্যাত যুক্তিবাদী বাসব প্রেমানান্দের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত হয়েছিল। তিনি প্রেমানান্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।[5]
২০০৪ সালে কর্ণাটকের গুলবর্গায় একটি মেয়েকে বলি দেওয়া হয়েছিল শুনে নায়েক পুরো সময়ের জন্য কুসংস্কারবিরোধী সক্রিয়তাবাদ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[3] ২০০৬ সালের ২৫শে নভেম্বর স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণের সময় তিনি প্রাণরসায়নের একজন সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।[1] তিনি সেখানে ২৮ বছর ধরে কাজ করেছিলেন।[6][7]
২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে, নায়েক আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে ২৫টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়ার জন্য যে কোনও ভবিষ্যদ্বক্তার সামনে একটি উন্মুক্ত আহ্বান রেখেছিলেন। পুরস্কার মূল্য রাখা হয়েছিল ₹১০,০০,০০০[8] (প্রায় US$১৫,০০০)। প্রায় ৪৫০ জন তাঁকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু কোনওটিতেই সঠিক উত্তর পাওয়া যায় নি।[9][10] ১৯৯১ সাল থেকে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান রেশনালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনস এ জাতীয় আহ্বানগুলি পরিচালনা করে আসছে।[11] ২০১৩ সালের মে মাসে কর্ণাটক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সময়, সমস্ত আহ্বান একতরফা হয়ে যাচ্ছে দেখে, নায়েক জ্যোতিষীদের দ্বন্দে আহ্বান করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন। কিন্তু যখন বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক এক জ্যোতিষী শঙ্কর হেগড়ে নির্বাচনের ফলাফল সঠিকভাবে পূর্বাভাস দেওয়ার দাবি করেছিলেন, নায়েক সেই আহ্বান গ্রহণ করেছিলেন। নায়ক তাঁকে দশ লক্ষ টাকার একটি চেক দেবার প্রস্তাব দেন (আয়কর আইনের আওতায় প্রযোজ্য কর কেটে নেওয়ার পরে), যদি ২০টির মধ্যে ১৯টির ফলাফলও সঠিক প্রমাণিত হয়।[12] তবে পরবর্তীতে জ্যোতিষী হেগড়ে আর দেখা করেননি।
২০১১ সালের জুলাইয়ে নিবন্ধিত এইড উইদাউট রিলিজিয়ন এর মাধ্যমে, তিনি এমন জনগণ ও সংস্থাগুলিকে সহায়তা করে যাচ্ছেন যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠান, কুসংস্কারমূলক আচরণ, ওষুধের অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা এবং এ জাতীয় অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস নেই। নিবন্ধনটি 'রাহু কালে' করা হয়েছিল, যেটি দিনের সবচেয়ে অশুভ একটি সময় - এছড়াও দিনটি ছিল শনিবার, অমাবস্যার দিন। সুতরাং ধর্মানুযায়ী সময়টি একেবারেই শুভ ছিলনা। [2]
তিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ইজ ইট রিয়েল? (এটি কি বাস্তব?) এ উপস্থিত হয়েছিলেন।[13] তিনি ডিসকভারি চ্যানেলেও উপস্থিত হয়েছিলেন।[5] প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি মাঙ্গলুরু টুডে পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখক রয়েছেন।[7] তিনি ফোকস পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরেও কাজ করেন।[14]
তিনি স্বীকার করেছেন যে তাঁর কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে কয়েকবার আক্রান্ত হতে হয়েছিল।[15] তিনি আরও বলেছিলেন যে একজন জ্যোতিষী তাঁর মৃত্যু বা আঘাতের পূর্বাভাস দেওয়ার পরে, তাঁর স্কুটারের ব্রেকের তার কাটা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।[9]
তিনি অলীক বিজ্ঞান তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জড়িত ছিলেন। এটি একটি কথিত আধুনিক কৌশল যার সাহায্যে চোখ বাঁধা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা কোন বস্তু দেখতে সক্ষম হয়।[16]
নায়েক সুপারিশ করেছেন যে আরও মানুষকে গুরুদের তথাকথিত অলৌকিক কাজ কীভাবে করা হয় তা করতে শেখানো উচিত। তিনি এও পরামর্শ দেন যে লোকদের ছদ্ম বিজ্ঞান সনাক্তকরণ এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দাবি করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। তিনি অভিমত পোষণ করেন যে সুপরিচিত বিজ্ঞানীদের ছদ্ম বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিরক্ষা দল গঠন করতে দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া উচিত।[17] তিনি ভারতীয় সংসদে রাষ্ট্র ও ধর্মের পৃথকীকরণের বিলের জন্যও তদবির চালাচ্ছেন।[18][19] কুসংস্কারবিরোধী কর্মী নরেন্দ্র দভোলকরের হত্যার পরে এবং মহারাষ্ট্র রাজ্যে কুসংস্কারবিরোধী অধ্যাদেশ কার্যকরী হওয়ার পরে, নায়েক কর্ণাটকে অনুরূপ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রকাশ করেছিলেন।[20]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.