নিউক্লীয় গবেষণার জন্য ইউরোপীয় সংস্থা
From Wikipedia, the free encyclopedia
নিউক্লীয় গবেষণার জন্য ইউরোপীয় সংস্থা একটি ইউরোপীয় গবেষণা সংস্থা যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ কণা পদার্থবিজ্ঞান গবেষণাগার পরিচালনায় নিয়োজিত। সংস্থাটির মূল ফরাসি নাম হল অর্গানিজাসিওঁ ওরোপেএন পুর লা রশের্শ ন্যুক্লেয়্যার (ফরাসি: Organisation européenne pour la recherche nucléaire), তবে ফরাসিতে এটি সংক্ষেপে সের্ন নামেই বেশি পরিচিত (আ-ধ্ব-ব:[sɜːɹn] বা [sɛrn])। ইংরেজিতে সংস্থাটির নাম ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, তবে সংক্ষেপে ফরাসি "সের্ন" আদ্যক্ষরাটিকে ইংরেজির মতো করে "সার্ন" উচ্চারণ করা হয়।[3] সংস্থাটির আদি ফরাসি নাম কোঁসেই ওরোপেয়াঁ পুর লা রশের্শ ন্যুক্লেয়্যার (Conseil Européen pour la Recherche Nucléaire)-এর আদ্যক্ষর চতুষ্টয় c, e, r, ও n থেকে CERN বা সের্ন আদ্যক্ষরাটির উৎপত্তি, যার বাংলা অর্থ হয় "নিউক্লীয় গবেষণার জন্য ইউরোপীয় পরিষদ"।
গঠিত | ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪; ৬৯ বছর আগে (1954-09-29)[1] |
---|---|
সদরদপ্তর | মেরাঁ, জেনেভা ক্যান্টন, সুইজারল্যান্ড |
সদস্যপদ | ২৩টি দেশ |
দাপ্তরিক ভাষা | ফরাসি ও ইংরেজি |
পরিষদ প্রধান | এলিয়েজার রাবিনোভিচি[2] |
মহাপরিচালক | ফাবিওলা জানত্তি |
ওয়েবসাইট | home |
সংস্থাটি ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের সীমান্তের কাছে সুইজারল্যান্ডের ফরাসিভাষী জেনেভা শহরের উত্তর-পশ্চিমের একটি শহরতলী মেরাঁ (Meyrin) পৌরসভাতে অবস্থিত। ১৯৫৪ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত এক সভায় সের্ন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবটি স্বাক্ষরিত হয়। প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের সংখ্যা শুরুতে মাত্র ১২ থাকলেও বর্তমানে এই সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বেড়ে ২৩-এ দাঁড়িয়েছে।[4] এদের মধ্যে ইসরায়েল একমাত্র অ-ইউরোপীয় রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ণ সদস্যের মর্যাদা লাভ করেছে।[5] সের্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আনুষ্ঠানিক পর্যবেক্ষকসমূহের একটি।[6]
সের্নের গবেষণাগারে ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬ শতেরও বেশি বিজ্ঞানী, কারিগর ও প্রশাসনিক কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। সে বছর বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে আগত ১২ হাজার ৪ শত ব্যবহারকারী এখানে কাজ করেন।[7] গবেষণাগারের পরীক্ষাগুলি থেকে প্রতিদিন গড়ে এক পেটাবাইট উপাত্ত (১০ লক্ষ গিগাবাইট) প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ১১৫ পেটাবাইট উপাত্ত সংরক্ষণ করে রাখা হয়।[8]
সের্নের প্রধান কাজ হল উচ্চ-শক্তির পদার্থবৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য কণা ত্বরক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর যোগান দেওয়া। এ কারণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাভিত্তিক বহু পরীক্ষা সের্নে নির্মাণ করা হয়েছে। সের্নে বৃহৎ হ্যাড্রন সংঘর্ষকটি অবস্থিত, যা কিনা বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে বেশী শক্তিবিশিষ্ট কণা সংঘর্ষক।[9] সংস্থাটি মূল কর্মস্থলে একটি বৃহৎ পরিগণন কেন্দ্র (computing facility) আছে, যেটিকে প্রধানত পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত উপাত্তগুলি সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এর পাশাপাশি এটির দ্বারা কণা পদার্থবৈজ্ঞানিক ঘটনাগুলি পরিগণক তথা কম্পিউটারে ছদ্মায়নেও (simulation) ব্যবহার করা হয়। গবেষকদের দূর থেকে এইসব সুবিধায় প্রবেশাধিকারের দরকার হয়, তাই গবেষণাগারটিকে ঐতিহাসিকভাবে একটি ব্যাপক এলাকাভিত্তিক পরিগণক-জালিকাব্যবস্থার (ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক) একটি কেন্দ্র (হাব) হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এখানেই বিশ্বব্যাপী পরিগণক জাল তথা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর জন্ম হয়।[10][11]
নিউক্লীয় গবেষণার জন্য ইউরোপীয় সংস্থার বেশ কিছু সাফল্যের মধ্যে আছে ২০১২ সালে হিগস বোসন কণার অস্তিত্ব প্রমাণ, ১৯৭৩ সালে দুর্বল নিরপেক্ষ তড়িৎপ্রবাহ আবিষ্কার (যার মাধ্যমে অতিপারমাণবিক কণাসমূহের মধ্যে দুর্বল নিউক্লীয় বল কাজ করে), ১৯৮৩ সালে ডব্লিউ ও জেড বোসন কণার আবিষ্কার (যেগুলি দুর্বল নিউক্লীয় বলের মধ্যস্থতাকারী দুইটি অতিপারমাণবিক কণা), ১৯৮৯ সালে হালকা নিউট্রিনো আবিষ্কার (যেগুলি "ভুতুড়ে কণা" নামেও পরিচিত), ১৯৯৫ সালে প্রতিপদার্থ (প্রতি-হাইড্রোজেন) সৃষ্টি, ১৯৯৯ সালে আধান সাম্যতা লঙ্ঘনের প্রমাণ এবং ১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাপী পরিগণক জাল (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব) সৃষ্টি (কর্মরত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স-লি দ্বারা)।