পশ্চিমবঙ্গ
ভারতের একটি রাজ্য / From Wikipedia, the free encyclopedia
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি রাজ্য পূর্ব ভারতে বঙ্গোপসাগরের উত্তর দিকে বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৯ কোটি ১৩ লক্ষেরও বেশি। জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের চতুর্থ সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য (প্রথম-উত্তর প্রদেশ, দ্বিতীয়- মহারাষ্ট্র, তৃতীয়-বিহার )। এই রাজ্যের আয়তন ৮৮৭৫২ বর্গ কি. মি.। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা ভাষী বাঙালি জাতি অধ্যুষিত অবিভক্ত বাংলার একটি অংশ। এই রাজ্যের পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্র এবং উত্তর দিকে নেপাল ও ভুটান রাষ্ট্র অবস্থিত। ভারতের ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, সিকিম ও আসাম রাজ্যও পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা শহরটি হল ভারতের সপ্তম বৃহত্তম মহানগরী৷ ভৌগোলিক দিক থেকে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, গাঙ্গেয় বদ্বীপ, রাঢ় অঞ্চল ও উপকূলীয় সুন্দরবনের অংশবিশেষ এই রাজ্যের অন্তর্গত। বাঙালিরাই এই রাজ্যের প্রধান জাতিগোষ্ঠী এবং রাজ্যের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই বাঙালি হিন্দু।
পশ্চিমবঙ্গ | |
---|---|
রাজ্য | |
উপরে থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে: হাওড়া ব্রিজ; পুরুলিয়ায় ছৌ নাচ; দুর্গাপূজা; সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান বেঙ্গল টাইগার; হ্যাপি ভ্যালি চা বাগান থেকে দার্জিলিং; দীঘার সৈকত; হাজার দুয়ারী রাজপ্রাসাদ; দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি | |
ভারতের মানচিত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান | |
দেশ | ভারত |
প্রতিষ্ঠা | ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ |
রাজধানী | কলকাতা |
| কলকাতা |
জেলা | |
সরকার | |
• শাসক | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
• রাজ্যপাল | সিভি আনন্দ বোস [1] |
• মুখ্যমন্ত্রী | মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূল কংগ্রেস) |
• আইনসভা | বিধানসভা (২৯৫) |
• হাইকোর্ট | কলকাতা হাইকোর্ট |
• প্রধান বিচারপতি | টি.এস. সিভাগ্নানাম |
আয়তন | |
• মোট | ৮৮,৭৫২ বর্গকিমি (৩৪,২৬৭ বর্গমাইল) |
এলাকার ক্রম | ত্রয়োদশ |
জনসংখ্যা (২০২৩)[2] | |
• মোট | ১০,২৫,৫২,৭৮৭ |
• ক্রম | চতুর্থ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল) |
মোট রাজ্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (২০২২–২৩)[3][4] | |
• মোট | ₹১৭.১৩ লক্ষ কোটি (US$২২১.৩৭ বিলিয়ন) |
• মাথাপিছু | ₹ ১,৭২,৩০০ (US$ ২,১০৬.০৭) |
ভাষা | |
• সরকারি | |
• অতিরিক্ত সরকারি | নেপালি (দার্জিলিং জেলার তিনটি মহকুমা ও কালিম্পং জেলায়)[6] (যে সকল ব্লক, মহকুমায় বা জেলায় উক্ত ভাষাভাষীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের বেশি) |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | আইএন-ডব্লিউবি |
যানবাহন নিবন্ধন | ডব্লিউবি |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০২২) | ০.৬৭৪ (মধ্যম) • ২৮তম[10] |
সাক্ষরতা (২০২২) | ৮০.৮৬%[11] |
লিঙ্গানুপাত (২০২২) | ১০১২ ♀/১০০০ ♂[12] |
^* ২৯৪ জন নির্বাচিত ও ১ জন মনোনীত | |
প্রতীক of পশ্চিমবঙ্গ | |
প্রতীক | পশ্চিমবঙ্গের প্রতীক |
ভাষা | বাংলা |
সংগীত | বাংলার মাটি বাংলার জল |
নৃত্য | গৌড়ীয় নৃত্য |
পাখি | সাদাবুক মাছরাঙা |
ফুল | শিউলি |
ফল | হিমসাগর আম |
বৃক্ষ | ছাতিম |
নদী | ভাগীরথী হুগলি, তিস্তা, দামোদর |
ক্রীড়া | ফুটবল,টেবিল টেনিস,সাঁতার, ক্রিকেট |
প্রাচীন বাংলা ছিল একাধিক প্রধান জনপদের কেন্দ্রস্থল। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোক এই অঞ্চলটি জয় করেন। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দীতে এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৩শ শতাব্দীর পর থেকে ১৮শ শতাব্দীতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্ন পর্যন্ত একাধিক সুলতান, শক্তিশালী হিন্দু রাজন্যবর্গ ও বারো ভুঁইয়া এবং সামন্ত রাজা জমিদারেরা এই অঞ্চল শাসন করেন।
দিল্লী সালতানাত এবং শাহী বাংলার সালতানাত-এর সময়, ইউরোপবাসীরা বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য প্রদেশ হিসেবে ধরতো[13] মুঘল সাম্রাজ্য আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হত সুবে বাংলায় যা এখনকার দিনের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল।[14][15][16] যা সে সময় সমগ্র ইউরোপের চেয়ে জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল।[17]
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলের উপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে। এরপর দীর্ঘকাল কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। দীর্ঘকাল ব্রিটিশ প্রশাসনের কেন্দ্রস্থলে থাকার সুবাদে বাংলায় প্রাতিষ্ঠানিক পাশ্চাত্য শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের সূচনা ঘটে। এই ঘটনা পরবর্তীকালে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলা ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এই অঞ্চল দ্বিখণ্ডিত হয়। বাংলার পূর্ব ভূখণ্ড নিয়ে নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বাংলা (পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ এবং অধুনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র) গঠিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিম ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। রাজ্যের রাজধানী হয় কলকাতা। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কমিউনিস্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গ শাসন করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসে এই সরকারটিই ছিল সর্বাপেক্ষা দীর্ঘস্থায়ী নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপ্রধান রাজ্য। ভারতের সাকুল্য অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে অবদানের অনুপাতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ।[18] লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ছাড়াও সাহিত্য, সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা ও উৎসব-অনুষ্ঠান পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। নোবেল পুরস্কারজয়ী বাঙালি সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম এই রাজ্যে বিশেষ সমাদৃত ও জনপ্রিয়। কলকাতাকে "ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী" বলেও অভিহিত করা হয়।[19] খেলাধূলার ক্ষেত্রে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যটি হলো, এই রাজ্যের মানুষের মধ্যে জাতীয় স্তরে বিশেষ জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় ।[20][21][22]