পারমাণবিক বল
From Wikipedia, the free encyclopedia
পারমাণবিক বল বা নিউক্লীয় বল (অথবা নিউক্লিয়ন–নিউক্লিয়ন মিথষ্ক্রিয়া) হল পরমাণুতে প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল। নিউট্রন এবং প্রোটন উভয়েই নিউক্লিয়ন, এবং নিউক্লীয় বল দ্বারা প্রায় একইভাবে প্রভাবিত হয়। প্রোটনের +1 e চার্জ থাকার দরুণ একটি বিকর্ষক বৈদ্যুতিক বল অনুভব করে, কিন্তু নিকটদূরত্বে নিউক্লীয় বল এই বিকর্ষণ বলের চেয়ে বেশি প্রভাবশীল। পারমাণবিক বলের কারণেই প্রোটন ও নিউট্রন একত্রিত হয়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠন করে।
~১ ফেমটোমিটার (fm, বা ১.০ × ১০−১৫ মিটার) দূরত্বে নিউক্লিয়নসমূহের মধ্যে পারমাণবিক বল প্রচণ্ড আকর্ষণ উৎপন্ন করে, কিন্তু ~২.৫fm এর বেশি দূরত্বে খুব দ্রুত এর প্রাবল্যের পতন ঘটে এবং লক্ষণীয় প্রভাব হারিয়ে যায়। অন্যদিকে, ০.৭ fm এর কম দূরত্বে পারমাণবিক বল বিকর্ষক হয়ে যায়। এই বিকর্ষক বৈশিষ্ট্য নিউক্লিয়াসের আকারের নিম্নসীমার জন্য দায়ী, কেননা নিউক্লিয়নগুলো এই বল অতিক্রম করে আরও কাছাকাছি আসতে পারে না। তুলনামূলকভাবে, পরমাণুর আকার, এই দূরত্বের তুলনায় পাঁচ ঘাত বেশি। পারমাণবিক বল কোন সরল বল নয়, কারণ এটি নিউক্লিয়নের স্পিন এর ওপর নির্ভর করে, এর স্থিতিস্থাপক বৈশিষ্ট্য আছে, এবং নিউক্লিয়নের আপেক্ষিক ভরবেগের সথেও সম্পর্কিত হতে পারে।[2] পারমাণবিক বল, পাঁচটি মৌলিক বলের অন্তর্গত।
পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে এবং পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহৃত শক্তির উৎস হিসেবে নিউক্লীয় বলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। চার্জযুক্ত প্রোটনসমূহের তড়িৎ বিকর্ষণ পরাভূত করে তাদের একত্রে আবদ্ধ করার জন্য কাজ (শক্তি) প্রয়োগ করতে হয়। পারমাণবিক বল দ্বারা প্রোটন-নিউট্রনের সমন্বয়ে নিউক্লিয়াস গঠনকালে সেই শক্তি সঞ্চিত হয়। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভর, এর অন্তস্থ নিউক্লিয়নগুলোর মোট ভরের চেয়ে কম হয়। ভরের এই পার্থক্য হচ্ছে ভর ত্রুটি, যা কাঠামোটিতে প্রযুক্ত শক্তির সমতুল্য হিসেবে দেখানো যায়। একটি নিউক্লিয়াস ভেঙে নিউক্লিয়নে ফিরে যাবার সময় নিউক্লীয় যোজন শক্তি নির্গত হয়। এটি হচ্ছে এক ধরনের তড়িৎচুম্বকীয় বিভব শক্তি, যা চার্জযুক্ত নিউক্লীয় কণার ওপর পারমাণবিক বলের প্রভাব বিলুপ্ত হওয়ার সময় নির্গত হয়।[3][4]
নিউক্লীয় বলের পরিমাপ, আংশিকভাবে পরীক্ষালদ্ধ কিছু সমীকরণের ওপর নির্ভরশীল। এই সমীকরণগুলো নিউক্লিয়নসমূহের মধ্যস্থ বিভব শক্তির ব্যাখ্যা করে। (সাধারণত কণা পর্যায়ের কাঠামোকে বিভব শক্তি দ্বারা সরলভাবে বর্ণনা করা যায়; বিভবের ঋণাত্বক নতি ভেক্টর বলের সমান।) এসব সমীরকণের ধ্রুবক রাশিগুলোর মানও পরীক্ষালদ্ধ। নিউক্লিয়ন-নিউক্লিয়ন মিথষ্ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য বর্ণনার প্রচেষ্টায় এই বিভব কাজে আসে। মান নির্ণয়ের পর এসব কণা বিভবকে বিভিন্ন সমীকরণে প্রয়োগ করা যায়, যেমন শ্রোডিঙার সমীকরণ দ্বারা নিউক্লিয়ন কাঠামোর কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
১৯৩২ সালে নিউট্রন আবিষ্কার এর পর জানা যায়, পারমাণবিক নিউক্লিয়াস প্রোটন ও নিউট্রন মিলে তৈরি, যারা একটি আকর্ষক বল দ্বারা সংযুক্ত থাকে। ১৯৩৫ সালের মধ্যে নিউক্লীয় বলের ধারণাটি স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছিল, এবং বলটি মেসন কণা দ্বারা প্রবাহিত বলে কল্পনা করা হত। এই তাত্ত্বিক ধারণায় ইউকাওয়া বিভবের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা প্রথমদিককার একটি নিউক্লীয় বিভবের উদাহরণ। ১৯৪৭ সালে একটি পরীক্ষায় মেসন কণা আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭০ এর মধ্যে কোয়ার্ক কাঠামো তত্ত্ব বিকশিত হয়, যেখানে মেসন এবং নিউক্লিয়ন কণাগুলো কোয়ার্ক এবং গ্লুয়ন দ্বারা গঠিত বলে ব্যাখ্যা করা হয়। এই কাঠামো অনুযায়ী, পাশাপাশি অবস্থিত নিউক্লিয়নের মধ্যে মেসন বিনিময় থেকে নিউক্লীয় বলের উদ্ভব ঘটে, এবং বলটি মূলত সবল নিউক্লীয় বলের অবশিষ্টাংশ বলে প্রতীয়মান হয়।