পার্ল হারবার আক্রমণ
From Wikipedia, the free encyclopedia
পার্ল হারবার আক্রমণ ছিল ইতিহাসের একটি অপ্রত্যাশিত সামরিক অভিযান যা জাপান সাম্রাজ্যের নৌবাহিনী কর্তৃক ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ সালের ভোরে (জাপানের সময়: ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১) হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও নৌ-ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ আক্রমণটি জাপান সাম্রাজ্যের জেনারেল হেডকোয়ার্টারের অপারেশন জেড-এর পরিকল্পনায় হাওয়াই অপারেশন বা অপারেশন এআই নামে সমধিক পরিচিত।[6][7][8][9] হাওয়াই দ্বীপে ঐ দিনটি ছিল ছুটির দিন। সেখানে আমেরিকান নৌবাহিনীর প্যাসিফিক ফ্লিটকে জাপানী নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে আকাশসীমা অবরোধের জন্য ঘাঁটিতে নিয়ে আসা হয়েছিল।
পার্ল হারবার আক্রমণ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল | |||||||
একটি জাপানী প্লেন থেকে যুদ্ধ জাহাজের সারি আলোকচিত্রটি আক্রমণের শুরুতে তোলা হয়েছে। বিস্ফোরণটির কেন্দ্র ছিল টর্পেডো স্ট্রাইক ইউএসএস ওকলাহামাতে (বিবি-৩৭)। দু'টি জাপানী প্লেনের আক্রমণ দেখা গিয়েছিল: একটি ইউএসএস নিওশোর (এও-২৩) ওপর এবং একটি নৌবাহিনী প্রাঙ্গণের ওপর। | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র | টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত জাপানের সাম্রাজ্য | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
হাজব্যাণ্ড কিমেল ওয়াল্টার শর্ট |
চুইচি নাগুমো ঈসোরোকু ইয়ামোতো | ||||||
শক্তি | |||||||
সামরিক শক্তি: ৮টি যুদ্ধের জাহাজ ৮টি ক্রুইজার ৩০টি ডেস্ট্রয়ার ৪টি ডুবোজাহাজ ৪৯টি অন্যান্য জাহাজ[1] ~৩৯০ উড়োজাহাজ |
সামরিক শক্তি: ৬টি উড়োজাহাজ বাহক ২টি যুদ্ধের জাহাজ ২টি হেভি ক্রুইজার ১টি লাইট ক্রুইজার ৯টি ডেস্ট্রয়ার ৮টি ট্যাংকার ২৩টি নৌবহর ডুবোজাহাজ ৫টি ছোট ডুবোজাহাজ ৪১৪টি উড়োজাহাজ | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৪টি যুদ্ধের জাহাজ ডুবে গিয়েছিল ৩টি যুদ্ধের জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত ১টি যুদ্ধের জাহাজ ভূপৃষ্ঠ ছিল ২টি ডেস্ট্রয়ার ডুবে গিয়েছিল ১টি অন্যান্য জাহাজ ডুবে গিয়েছিল ৩টি ক্রুইজার ক্ষতিগ্রস্ত[nb 1] ১টি ডেস্ট্রয়ার ক্ষতিগ্রস্ত ৩টি অন্যান্য জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত ১৮৮টি উড়োজাহাজ ধ্বংস ১৫৫টি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত ২,৪০২ জন নিহত ১,২৪৭ জন আহত[3][4] |
৪টি ছোট ডুবোজাহাজ ডুবে গিয়েছিল ১টি ছোট ডুবোজাহাজ ভূপৃষ্ঠ ছিল ২৯টি উড়োজাহাজ ধ্বংস ৬৪ জন নিহত ১ জন বন্দি[5] | ||||||
বেসামরিক দুর্ঘটনা: ৫৭ জন নিহত ৩৫ জন আহত[3] |
৬টি বিমানবাহী জাহাজ থেকে ৩৫৩টি জাপানি যুদ্ধ বিমান, বোমারু বিমান এবং টর্পেডো বিমান নৌ-ঘাঁটিটিতে একযোগে আক্রমণ করে।[10] চারটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ তাৎক্ষণিকভাবে ডুবে যায়। এছাড়াও অন্য চারটি যুদ্ধজাহাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডুবে যাওয়া যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে দুটিকে উদ্ধার করে পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধের কাজে লাগানো হয়। জাপান পরিচালিত এ বিমান আক্রমণে ১৮৮টি মার্কিন বিমান ধ্বংস হয়। নিহত হয় ২,৪০২ জন এবং আহত বা ঘায়েল হয় ১,২৮২ জন।[11] কিন্তু বিমান আক্রমণে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র, রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র, জ্বালানি ও টর্পেডো সংরক্ষণাগার বিশেষ করে সাবমেরিন জেটি এবং গোয়েন্দা বিভাগের সদর দপ্তর আক্রান্ত হয়নি।
অন্যদিকে, আক্রান্তকারী জাপান সৈন্যদলের সামরিক সরঞ্জাম লোকসান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি ছিল খুবই হালকা প্রকৃতির। তাদের ২৯টি যুদ্ধ বিমান ভূ-পাতিত হয় এবং ৫টি খর্বাকৃতি সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ তলিয়ে যায়। হামলাকারীদের মধ্য থেকে ৬৫ জন নিহত কিংবা আহত হয়। 'কাজু সাকামাকি' নামীয় এক জাপানি নাবিককে আটক করা হয়।
আক্রমণের ফলে প্রতিটি আমেরিকানের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রশান্ত এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর - উভয় অংশেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি প্রবেশের অধিকার জন্মে ও নেতৃত্বের সুযোগ পায়। পরের দিন অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর, ১৯৪১ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের বিরুদ্ধে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে। অপ্রত্যাশিতভাবে অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় সমর্থনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক শীতলীকরণ পর্যায়ে যায়, যা পূর্বে খুবই শক্তিশালী ছিল। গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য গোপনে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করে সক্রীয় মৈত্রীশক্তির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জার্মানি এবং ইতালি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১১ ডিসেম্বর যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পরবর্তীকালে ঐ একই দিন পাল্টা যুদ্ধের ঘোষণা প্রদান করে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
অনেক ঐতিহাসিক ঘটনাকে আড়াল করে জাপান পার্ল হারবারে সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করেছিল। কোনরূপ আনুষ্ঠানিক সতর্কবাণীর অভাব, দৃশ্যত ও বিশেষত চলমান আলাপ-আলোচনা দ্বারা সমস্যার সমাধান থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট ৭ ডিসেম্বর, ১৯৪১ তারিখে ঘোষণা দেন যা কুখ্যাত দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বা কলঙ্কজনক বক্তব্য মর্মে বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।