প্রাচীন মিশরীয় পরকালতত্ত্ব
From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাচীন মিশরীয় পরকালতত্ত্ব কেন্দ্রীভূত হয়েছিল মিশরীয় সংস্কৃতির বিবিধ বৈশিষ্ট্যের দ্বারা প্রভাবিত বিভিন্ন ধরনের জটিল আচার-অনুষ্ঠানকে ঘিরে। এই ক্ষেত্রে ধর্ম ছিল একটি প্রধান উপাদান। কারণ, ধর্ম ছিল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা যা সকল মিশরবাসীকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছিল। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক মিশরীয় দেবতার উপরই মৃতের আত্মাকে পরলোকে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা আরোপ করা হয়েছিল। লিখনপদ্ধতির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মীয় ধ্যানধারণা নথিবদ্ধ হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র মিশরীয় সমাজে। এই মতবাদগুলির উৎপত্তি ও দৃঢ়ীভবন ঘটেছিল পরকালতত্ত্ব-সংক্রান্ত রচনাবলি সৃষ্টির মাধ্যমে। এই জাতীয় রচনায় পরলোকযাত্রা নিরাপদ করতে মৃতকে কী কী জানতে হয় তা বিবৃত এবং দৃষ্টান্ত সহযোগে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।
মিশরীয় ধর্মীয় আদর্শে পরকাল-সংক্রান্ত তিনটি আদর্শের উল্লেখ পাওয়া যায়: প্রেতলোক, চিরন্তন জীবন ও আত্মার পুনর্জন্মে বিশ্বাস। প্রাচীন মিশরে প্রেতলোককে বলা হত দুয়াত। মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, দুয়াতের প্রবেশপথ মাত্র একটি এবং শুধুমাত্র মৃতের সমাধিসৌধের মধ্যে দিয়ে যাত্রা করেই সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। কথিত আছে, এই জগতে প্রবেশের পর মৃতের আত্মার সামনে প্রথম যে ছবিটি ফুটে ওঠে সেটি একটি বারান্দার। এই বারান্দার দুই পাশে সারে সারে সাজানো থাকে চিত্তাকর্ষক সব মূর্তি। এই মূর্তিগুলির মধ্যে থাকে বাজপাখির মুণ্ডবিশিষ্ট বিখ্যাত দেবতা হোরাসের মূর্তির রূপভেদও। প্রেতলোকে আত্মাকে নিয়ে যাওয়ার পথ রাজা ও সাধারণ ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। সেখানে প্রবেশের পর আত্মাদের উপস্থিত করা হয় অপর এক বিশিষ্ট দেবতা ওসাইরিসের সামনে। তিনি মৃতের আত্মার গুণাবলি নিরূপণ করেন এবং যোগ্যদের শান্তিপূর্ণ পরকাল প্রদান করেন। চিরন্তন জীবন-সংক্রান্ত মিশরীয় ধারণাটিকে প্রায়শই বর্ণনা করা হয় অনির্দিষ্টভাবে পুনর্জন্ম লাভ হিসাবে। সেই জন্য যে সকল আত্মা মার্জিতভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, তাঁদের ওসাইরিসের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় পুনর্জন্ম প্রাপ্তির জন্য।[1]
প্রেতলোকে পৌঁছানোর পথ মসৃণ করতে মিশরীয়দের জীবদ্দশায় সঠিক আচরণবিধি অনুসরণ ও মিশরীয় ধর্মে বিশ্বাস স্থাপন ইত্যাদি কয়েকটি আচার পালন করতে হত। সেই সঙ্গে তারা বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করত মৃত্যু-পরবর্তী আচার-অনুষ্ঠানগুলির উপরেও। মৃত ব্যক্তি যাতে নির্বিঘ্নে তাঁর ভবিতব্যের সম্মুখীন হতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় আচার পালনের দায়িত্বভার অর্পিত ছিল জীবিতদের উপরেই। মিশরীয়রা মনে করত, জীবিত ও মৃত প্রত্যেকেই ধর্মীয় সদাচারের অনুশীলন এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করলে তবেই মৃত ব্যক্তি সহজে প্রেতলোকে প্রবেশ করতে পারবেন।