প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল
জীব-ভূগোল বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা প্রাণির প্রজাতিসমূহের ভৌগোলিক বিস্তারের (বর্তমানের এবং অতীতে / From Wikipedia, the free encyclopedia
প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল (ইংরেজিতেঃ Zoogeography) হচ্ছে জীব-ভূগোল বিজ্ঞানের একটি শাখা, যা প্রাণির প্রজাতিসমূহের ভৌগোলিক বিস্তারের (বর্তমানের এবং অতীতের) সাথে সংশ্লিষ্ট।[1]
গবেষণার বহুমুখী ক্ষেত্র হিসেবে, প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোলে বিশ্বব্যাপী অধ্যয়নের নির্দিষ্ট অঞ্চলসমূহে ঘটতে থাকা বিবর্তনীয় ঘটনাবলিকে চিত্রায়িত করার জন্য আণবিক জীববিজ্ঞান, জেনেটিক্স, অঙ্গসংস্থান, জাতিজনি এবং ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার (জিআইএস) মত বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল, এর জনক হিসেবে পরিচিত আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল। জাতিজনিক সম্বন্ধগুলো প্রাণীভৌগোলিক অঞ্চলসমূহে পরিমাপ করা যায়, যার ফলে জীবের ভৌগোলিক বিস্তারের চারপাশে ব্যাপারটি আরও সুস্পষ্ট হয় এবং ট্যাক্সার বিবর্তনীয় সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেয়।[2]
প্রাণিবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাতে আণবিক জীববিজ্ঞান এবং বিবর্তন তত্ত্বের অগ্রগতি প্রজাত্যায়ন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের সমাধান দিয়েছে এবং ট্যাক্সার মধ্যে জাতিজনিক সম্পর্ককে প্রসারিত করেছে।[3] জিআইএস এর সাথে ফাইলেজেনটিক্স যোগ করে কার্টোগ্রাফিক ডিজাইনের মাধ্যমে বিবর্তনীয় উৎসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি উপায় বের করা যায়। ফাইলেজেনটিক্স এবং জিআইএস-এর সাথে সংযুক্ত এজাতীয় গবেষণা দক্ষিণ আটলান্টিক, ভূমধ্যসাগরীয় এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসমূহে পরিচালিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ডিএনএ বার-কোডিংয়ের সাম্প্রতিক উদ্ভাবনগুলোর ফলে আন্দামান সাগরে বাসকারী 'স্কর্পিনিডা' এবং 'টেট্রাওডোন্টিডা' নামের সামুদ্রিক বিষাক্ত মাছের দুটি পরিবারের মধ্যে ফাইলেজেনেটিক সম্পর্কের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।[4] ভূমধ্যসাগরীয় এবং প্যারাটিথিস অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের কিলিফিশের (Aphanius এবং Aphanolebias) জীবাশ্ম রেকর্ডের উপর ভিত্তি করে ভূতাত্ত্বিক সময়কালে নিবদ্ধ প্রজাতি সমূহের বিবর্তনীয় বিচ্যুতি বোঝার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালানোর ফলে মায়োসিন পিরিয়ডে জলবায়ুর প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে।[5] দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলের বংশবিস্তার এবং সমজাতীয় অঞ্চলে জীবের বণ্টন সম্পর্কিত জ্ঞান, পরিবেশগত এবং ভৌগোলিক উভয় প্রকার উপাত্তের উপর নির্ভর করে প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল সংক্রান্ত গবেষণা আরও বিস্তৃত হয়েছে।[6]
আধুনিক যুগের প্রাণীবৈজ্ঞানিক ভূগোল সামুদ্রিক এবং স্থলচর উভয় প্রকার প্রাণী প্রজাতি সমূহের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জনসংখ্যার গতিশীলতা সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট ধারণা এবং ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেলকে সংহত করার জন্য জিআইএসের উপর নির্ভর করে। জিআইএস প্রযুক্তি প্রয়োগ করে ভূসংস্থান, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের মতো আবাসের অজৈব নিয়ামকগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে ভূতাত্ত্বিক সময়ের ভিতরে প্রজাতি জনসংখ্যার বিস্তার ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। বাস্তুসংস্থানের প্রভাবে জীবের আবাস গঠন এবং অভিপ্রায়ণের বিন্যাসের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝতে পারলে, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা সংক্রান্ত ঘটনাবলি কিংবা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য নতুন আশ্রয়স্থল গ্রহণের কারণে উদ্ভূত প্রজাত্যায়নের ঘটনাবলির ব্যাখ্যা প্রদান করা যায়।[7]