বড়দিনের যুদ্ধবিরতি
পশ্চিম রণাঙ্গনের যুদ্ধবিরতি (২৫ ডিসেম্বর, ১৯১৪) / From Wikipedia, the free encyclopedia
বড়দিনের যুদ্ধবিরতি (জার্মান: ওয়াইনাখস্ফ্রিদেন; ফরাসি: ত্রেভ দে ন্যুয়েল) হলো ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বড়দিন উপলক্ষে পশ্চিম রণাঙ্গনে সংঘটিত একটি অনুমোদনহীন যুদ্ধবিরতি, যেদিনটিতে যুদ্ধরত মিত্রশক্তি (মূলত ফরাসি এবং ব্রিটিশ) এবং কেন্দ্রীয় শক্তির জার্মান সৈন্যরা তাদের ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং যুদ্ধের ময়দানে পরিখা অতিক্রম করে একে অন্যের সাথে শুভেচ্ছা, খাবার এবং উপহার বিনিময় করে। এই দিনটিতে এমনকি বন্দি বিনিময়, একইসাথে বড়দিনের ক্যারল-সঙ্গীত গাওয়া এবং যৌথ উদ্যোগে উভয়পক্ষের মৃত সৈন্যদের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়। এই দিনটির সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতিটি ছিল, যুদ্ধের ময়দানে উভয়পক্ষের সৈন্যদের ফুটবল খেলা। যদিও যুদ্ধবিরতির এই চিত্র যুদ্ধের বাকি ময়দানগুলোতে একইরকম ছিল না। অনেক সেক্টরে সেই দিনেও যুদ্ধ হয়েছিল। তথাপি অন্য অনেক সেক্টরে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি না করলেও সেই দিনে উভয় পক্ষের সৈনিকদের মৃতদেহ সংগ্রহে একটি সম্মিলিত উদ্যোগ গৃহীত হয়েছিল।
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ-এর অংশ | |
তারিখ | ২৪ - ২৬ শে ডিসেম্বর ১৯১৪ |
---|---|
অবস্থান | ইউরোপ |
অংশগ্রহণকারী | অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি তৃতীয় ফরাসী প্রজাতন্ত্র জার্মান সাম্রাজ্য রাশিয়ান সাম্রাজ্য যুক্তরাজ্যের সৈন্যসমূহ |
এর পরবর্তী বছরের বড়দিনেও যুদ্ধবিরতি আয়োজন করা হয়েছিলো, কিন্তু ঊর্ধ্বতনদের কড়া আদেশ থাকায় সেই যুদ্ধবিরতি ১৯১৪ সালের বড়দিনের যুদ্ধবিরতির মতো আড়ম্বর সর্বস্ব ছিল না। কিন্তু ১৯১৬ সালের বড়দিনে সৈনিকরা আর কোন যুদ্ধবিরতির আয়োজন করে নি। কেননা সোম এবং ভেরডানের যুদ্ধে ও সেই যুদ্ধসমূহে রাসায়নিক গ্যাসের প্রয়োগ সৈনিকদের মধ্যে তিক্ততা এনে দিয়েছিলো।
সেক্টরভেদে বড়দিনের যুদ্ধবিরতির চিত্রে ভিন্নতা দেখা গেলেও এটি সর্বোপরি যুদ্ধের আক্রমণাত্মক আচরণ কমিয়ে এনে শত্রুপক্ষের সৈনিকদের একে অন্যের সাথে কথোপকথন, সিগেরেট বিনিময়ের মতো ক্রমবর্ধমান সৌভ্রাত্র মনোভাব এনে দিয়েছিলো। এমনকি যুদ্ধের অনেক সেক্টরে সেইদিনে সৈন্যরা যুদ্ধের সীমারেখার মাঝপথে গিয়ে আহত সৈন্যদের চিকিৎসা প্রদান এবং মৃত সৈনিকদের দেহ নিয়ে আসলেও, যুদ্ধের অপর প্রান্তের সৈন্যরা কোন গুলি চালায় নি এবং উভয়পক্ষের মধ্যে সৈনিকদের মধ্যে সেই দিনে এক ধরনের অব্যক্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে দেখা গিয়েছিলো। এই যুদ্ধবিরতির সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো দিনের আলোতে যুদ্ধরত উভয় শত্রপক্ষের সৈনিকদের একে অন্যের সাথে মিলিত হওয়া - যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো হিংসাত্মক সশস্ত্র লড়াইয়ের সময় শান্তি ও মানবিকতার উদাহরণ হিসেবে মানব ইতিহাসে টিকে আছে।