বৈষ্ণব সম্প্রদায়
হিন্দুধর্মের একটি সম্প্রদায় / From Wikipedia, the free encyclopedia
বৈষ্ণববাদ (সংস্কৃত: वैष्णवसम्प्रदायः) হিন্দুধর্মের শাখা সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ে বিষ্ণু বা তার অবতারগণ (মুখ্যত রাম ও কৃষ্ণ) আদি তথা সর্বোচ্চ ঈশ্বর রূপে পূজিত হন। বৈষ্ণব দর্শনে বিষ্ণুকে সমগ্র জগতের পালনকর্তা রূপে গণ্য করা হয়। বিশ্বাস ও ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে, বিশেষত ভক্তি ও ভক্তিযোগ প্রসঙ্গে, বৈষ্ণব দর্শনের প্রধান তাত্ত্বিক ভিত্তি উপনিষদ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য পৌরাণিক শাস্ত্র। যথা – শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, গরুড় পুরাণ ও পদ্মপুরাণ।[1][2][3]
বৈষ্ণব সম্প্রদায় অনুসারীদের বৈষ্ণব নামে অভিহিত করা হয়। বৈষ্ণব দর্শনের মূল কথা হল আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন এবং এই একাত্মতার জন্য যে পথ অবলম্বন করা হয় তা হলো, কেবলমাত্র প্রেম ও ভক্তি এবং সম্পূর্ণরূপে অহিংসা। বৈষ্ণব দর্শনে পরমাত্মার উপাসনার জন্য সকল প্রকার জাগতিক গুন বর্জন করে নির্গুণ হয়ে পরমাত্মার সাথে একাত্ম হওয়ার উপদেশ রয়েছে। প্রাচীন ভারতে গুপ্তযুগেও এই বৈষ্ণব দর্শনের প্রচলন ছিল। এই গুপ্তযুগেই বিখ্যাত বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থ "বিষ্ণুস্মৃতি" রচিত হয়। বৈষ্ণবরা মূলত নিরামিষ ভোজী। বৈষ্ণবরা হিন্দু সমাজের অন্যতম বৃহৎ অংশ।[4] এঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠের বাস ভারতে। দক্ষিণ ভারতে "অঙ্করভাট মন্দির", "তিরুপতি বালাজির মন্দির" ও "পদ্মনাভস্বামী মন্দির" বৈষ্ণব দর্শনের চর্চার জন্য বিখ্যাত। তবে ভারতবর্ষের বাইরে ইন্দোনেশিয়াতেও বিষ্ণু পূজার নিদর্শন রয়েছে। সাম্প্রতিককালে ধর্মসচেতনতা, স্বীকৃতি ও ধর্মপ্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বাইরে বৈষ্ণবদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে বৈষ্ণব দর্শনের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নিয়ে আসছে গৌড়ীয় বৈষ্ণব শাখাটি।[5] মুখ্যত, ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার অন্তর্গত নবদ্বীপ গ্রামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর হাত ধরেই এই গৌড়ীয় বৈষ্ণব শাখাটির প্রচলন। চৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবধারাকে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকন "হরে কৃষ্ণ" আন্দোলন জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে ভৌগোলিক প্রসার ঘটিয়ে সম্পাদন করছে। বহু বিদেশিও এই নবদ্বীপে এসে সমগ্র বিশ্বে বৈষ্ণব দর্শনের প্রচারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছেন। এছাড়াও অতি সম্প্রতি অন্যান্য বৈষ্ণব সংগঠনও পাশ্চাত্যে ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেছে।[6]