Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ব্ল্যাক মেটাল হেভি মেটাল মিউজিকের একটি চরমপন্থী উপশাখা। আশির দশকের শেষার্ধে এবং নব্বই দশকের শুরুর দিকে মূলত আন্ডারগ্রাউন্ডে সঙ্গীতের এই ধারা জনপ্রিয়তা লাভ করে। বিভিন্ন অসামাজিক এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্ল্যাক মেটাল গণমাধ্যমে আলোচিত হয়। মূলত নরওয়েতে এখন যাকে “যথার্থ” ব্ল্যাক মেটাল বলা হয় তার জন্ম হলেও, এই ধারা দ্রুত পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।
ব্ল্যাক মেটাল | |
---|---|
শৈলীগত বূৎপত্তি | স্পীড মেটাল, থ্রাশ মেটাল, হার্ডকোর পাঙ্ক |
সাংস্কৃতিক বূৎপত্তি | প্রথম স্রোতঃ ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ও মাঝামাঝিতে, ইউরোপ-এ দ্বিতীয় স্রোতঃ ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে , স্ক্যান্ডিনাভিয়া |
প্রথাগত বাদ্যযন্ত্র | ভোকাল - ইলেকট্রিক গিটার - বেজ গিটার - ড্রামস |
উপধারা | |
সিম্ফোনিক ব্ল্যাক মেটাল - ভাইকিং মেটাল | |
সম্মিলিত ধারা | |
ব্ল্যাকেন্ড ডেথ মেটাল - গথিক মেটাল |
ব্রিটিশ ব্যান্ড ভেনমের ১৯৮১ সালে বের হওয়া “ওয়েলকাম টু হেল” (Welcome to Hell — নরকে স্বাগতম) এবং ১৯৮২ সালে বের হওয়া “ব্ল্যাক মেটাল” (Black Metal) অ্যালবাম দু’টিতে তৎকালীন প্রচলিত মেটাল মিউজিকের ধারার বাইরে গিয়ে কিছু করার প্রয়াস লক্ষণীয়। অ্যালবাম দু'টিতে শব্দধারণ প্রযুক্তি যেমন তুলনামূলক নিম্নমানের রাখা হয়, সেরকম গায়কী ও গিটারের কাজগুলি ছিল যথেষ্ট উগ্র। বিশেষ করে গানের কথায় শয়তান উপাসনা সংক্রান্ত ভাবধারার সরাসরি উল্লেখ করা হয় (যদিও সেটি মেটাল মিউজিকে নতুন কিছু নয়; হেভি মেটালের জনক ব্ল্যাক সাবাথ তাদের সূচনালগ্ন থেকেই “কাল্ট” আবহে গান করে আসছে। তবে ভেনমের উপস্থাপনা বহুগুণে প্রত্যক্ষ ও সরাসরি ছিলো)। ইউরোপ ও আমেরিকায় ভেনমের গানের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ১৯৮৫ সালের মধ্যেই মেটাল মিউজিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দু’টি “এক্সট্রিম” উপশাখা থ্র্যাশ মেটাল ও ডেথ মেটালের উদ্ভব হয়। ভেনমের দ্বিতীয় অ্যালবামটির নাম লক্ষণীয়। ব্ল্যাক মেটাল গানের ধারার নামকরণ হয়েছে এই অ্যালবামটির আলোকেই। তবে ভেনমের এতোটা প্রভাব সত্ত্বেও তাদের গানকে সরাসরি ব্ল্যাক মেটাল বলা যায় না। ১৯৮৪ সালে বাথোরি (Bathory) নামের সুইডেনের একটি ব্যান্ড তাদের অ্যালবাম বের করে যার নামও “বাথোরি” (হাঙ্গেরির কুখ্যাত কাউন্টেস বাথোরির নামানুসারে)। ভেনমের স্টাইলের সাথে বাথোরির স্টাইলের অনেক সাদৃশ্য থাকলেও, ব্যান্ডটির গায়ক কুয়োর্থনকে বলা হয় ব্ল্যাক মেটালের স্বকীয় গায়কীর উদ্ভাবক (লক্ষণীয় যে ব্ল্যাক মেটাল ধারাটিকে মেটাল মিউজিকের অন্যান্য ধারা থেকে যে-ক'টি ব্যাপার দিয়ে আলাদা করা, ভোকাল স্টাইলটা তাদের ভেতর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)। তার অমানুষিক গলা, নিম্নমানের রেকর্ডিং, গিটার সলোর অশ্রুতপূর্ব “ডিস্টর্শন” অনেকটাই ব্ল্যাক মেটালকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। এইসব ব্যান্ড, এবং আরও কয়েকটির (যেমন হেলহ্যামার — পরবর্তীতে সেল্টিক ফ্রস্ট, ক্রিয়েটর, সোডম, ডেস্ট্রাকশন[1]) থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে, ১৯৮৬ সালে নরওয়ের মেয়হেম (Mayhem) ব্যান্ড একটি ডিমো অ্যালবাম বের করে। এতে সাংগীতিক উপাদান ন্যূনতম হওয়া সত্ত্বেও মোটামুটি আধুনিক ব্ল্যাক মেটালের (যাকে বলা হয় “Second Wave”—দ্বিতীয় জোয়ার) সূচনাবিন্দু হিসেবে এই ডিমো অ্যালবামকে নির্দেশ করা সম্ভব। সামগ্রিক ব্ল্যাক মেটাল ইতিহাসের উপর মেয়হেম ব্যান্ডের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই প্রসঙ্গে আসার আগে আরও কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। আশির দশকের তথাকথিত “ব্ল্যাক মেটাল”—ভেনমের অনুপ্রেরণায় শয়তান সংক্রান্ত লিরিক্সে গান করা ব্যান্ডদের মোটামুটি ঢালাওভাবে ব্ল্যাক মেটাল আখ্যা দেন তৎকালীন কিছু সমালোচক। নব্বইয়ের দশক শুরু হওয়ার আগেই এই ঢালাও ব্ল্যাক মেটাল অনেকটাই প্রেক্ষাপটের আড়ালে চলে যায়। ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হতে থাকা থ্র্যাশ মেটাল, ডেথ মেটাল ও এদের অন্যান্য উপ-উপশাখা বাজার দখল করতে শুরু করে।
এরকম সময়ে, মেয়হেম ব্যান্ড “ডেথক্রাশ” নামে তাদের দ্বিতীয় ডিমো বের করে (১৯৮৭)। আগের রেকর্ডিঙের চাইতে এতে কারিগরি দক্ষতা যেমন অনেক-গুণে বেশি, তেমনি “Second Wave of Norwegian Black Metal” এর আকৃতি এখানে আরও অনেক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে বলে রাখা ভালো মেয়হেম কিংবা নরওয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমসাময়িক ব্যান্ড থর্নস (Thorns) এই সময়ে প্রচারমাধ্যমগুলিতে তেমন মনোযোগ পায় নি। মূলত আন্ডারগ্রাউন্ডে কাল্ট সদস্যদের হাতে হাতে ব্ল্যাক মেটাল ব্যান্ডগুলির রেকর্ডিং ছড়িয়ে পড়তে থাকে। দ্রুত মেয়হেম ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও দলপতি ইউরোনিমোস (প্রকৃত নাম Öystein Aarseth—ভেনম থেকে শুরু করে ব্ল্যাক মেটাল শিল্পীদের ছদ্মনাম গ্রহণের প্রবণতা লক্ষণীয়) নেতৃত্বে একটি “ব্ল্যাক মেটাল চক্র”[2] গড়ে ওঠে। ডেথ মেটাল হিসেবে পথ চলা শুরু করা কিছু ব্যান্ড দ্রুত ব্ল্যাক মেটাল গানের চর্চা শুরু করে। এরকম দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যান্ড হল এম্পেরর (Emperor) এবং ডার্কথ্রোন (Darkthrone)। ইউরোনিমোসের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও নেতৃত্বে ব্ল্যাক মেটাল আন্ডারগ্রাউন্ড ’৯২ নাগাদ যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মেয়হেম ব্যান্ডের লাইভ-শো গুলি এরই মধ্যে কুখ্যাতির শীর্ষে উঠে আসে। ডেথক্রাশ বের হওয়ার পর-পরই মেয়হেম ব্যান্ডে যোগ দেয় সুইডেনের ভোকালিস্ট “ডেড” (আসল নাম Per Yngve Ohlin)। লাইভ-শো গুলিতে যথাযথ আবহ আনতে ডেড কনসার্টের সময় ছুরি ও ভাঙ্গা কাচ বোতল দিয়ে নিজের দেহ ক্ষতবিক্ষত করতেন। শুয়োরের মাথা শূলবিদ্ধ করে মঞ্চের সামনে রাখা হতো। কনসার্টের এক পর্যায়ে শ্রোতাদের দিকে পচা মাংস কিংবা হাড়গোড় ছুঁড়ে দেওয়া হতো। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, যাতে করে “ফালতু লোকজন বিদায় হয়ে প্রকৃত ভক্তরাই শুধু কনসার্টে থেকে যায়।” ব্ল্যাক মেটাল সংগীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ লাশের মতন মুখে সাদা-কালো রঙ ও দেহে রক্ত লাগিয়ে (corpse-paint) কনসার্ট করা ব্যাপারটি সমসাময়িক ব্যন্ডগুলির মধ্যে ডেড ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেন। ডেড থাকাকালীন সময়ে মেয়হেম ব্যান্ডের গানে এবং সামগ্রিক ব্ল্যাক মেটালে একটা বড় প্রভাব পড়ে। ডেথ মেটাল থেকে ব্ল্যাক মেটাল শাখা দু'টি এই সময়ে স্পষ্টতঃ পৃথক হয়ে যায়। “ট্রিমোলো পিকিং”, “ব্লাস্ট বীট” ইত্যাদি ব্ল্যাক মেটালের স্বরূপনির্ধারক উপকরণ নরওয়ে, ফিনল্যান্ড (ফিনল্যান্ডের একটি ব্যান্ড বেহেরিট এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যান্ড, যদিও নরওয়ে-কেন্দ্রিক ব্ল্যাক মেটাল প্রেক্ষাপটে তাদের নজরে আসতে সময় লেগেছে), চেকোস্লোভাকিয়ায় (মাস্টার’স হ্যামার) ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে ডেড আত্মহত্যা করে। অনেকেই এই ঘটনাকে ব্ল্যাক মেটাল প্রেক্ষাপটের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনাবিন্দু হিসেবে অভিহিত করেছেন। ব্ল্যাক মেটাল ভক্তের দল বিভিন্ন গির্জায় অগ্নিসংযোগ করতে শুরু করে। এতে একটা পর্যায়ে ব্যান্ড সদস্যরাও জড়িয়ে পড়েন। কোনও সুস্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ যদিও আনা যায় নি, এইসব অগ্নিসংযোগের পেছনে বুরজুম (Burzum) ব্যান্ডের ভার্গ ভিকারণিসের নেতৃত্ব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদিকে ডেডের মৃত্যুর পর মেয়হেম ব্যান্ডের বেইজ গিটারিস্ট নেক্রোবুচার দল ছেড়ে চলে যান। যে অ্যালবামের জন্যে প্রায় পাঁচ বছর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো, ডেড সেটিকে অসম্পূর্ণ রেখেই আত্মহত্যা করেছেন। মাত্র দুইজন সত্যিকার সদস্য আর দুইজন বাইরের সদস্য নিয়ে ইউরোনিমোস ডি মিস্টেরিস ডম সাথানাস (De Mysterris Dom Sathanas—শয়তান উপাসনার গোপনীয় অনুষ্ঠানাদি) অ্যালবামের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। গায়ক হিসেবে আনা হয় হাঙ্গেরির Attila Csihar এবং বেইজ গিটারিস্টের অভাব পূরণ করতে দলে সাময়িকভাবে যোগ দেন ভার্গ ভিকারণিস। ১৯৯৩ সালের ১০ আগস্ট ভার্গ ভিকারণিস ইউরোনিমোসকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। খুনের পেছনে কারণটি এখনও অনুমান সাপেক্ষ। নেক্রোবুচার আর হেলহ্যামারের সহায়তায় যখন অ্যালবামটি বের হয়, তখন নরওয়েজিয়ান ব্ল্যাক মেটাল-এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কারাগারে। অবশ্য এতে করে ব্ল্যাক মেটাল যে বিলুপ্ত হয়ে যায় তা নয়। কারপেথিয়ান ফরেস্ট, ডিমু বর্জিয়ার, 1349, স্যাটিরিকন আর উলভার-এর মতন নরওয়ের দল, ইংল্যান্ডের ক্রেডল অভ ফিল্দ্, জেরুজালেমের মেলেখেশ, ইতালির অ্যাবোরিম সহ বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন গানের দল এখনও ব্ল্যাক মেটাল গান করে থাকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.