ভারতের ভাষা
From Wikipedia, the free encyclopedia
ভারতে কথিত বিভিন্ন ভাষা বেশ কয়েকটি ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। এর মধ্যে ৭৮.০৫% ভারতীয়ের মধ্যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাসমূহ এবং ১৯.৬৪% ভারতীয়দের মধ্যে দ্রাবিড় ভাষাসমূহ প্রচলিত।[5][6] উভয় ভাষা পরিবার একসঙ্গে কখনও কখনও ভারতীয় ভাষা হিসাবে পরিচিত।[7][8][9] অবশিষ্ট ২.৩১% জনসংখ্যার দ্বারা কথিত ভাষাসমূহ অস্ট্রো-এশীয়, চীন-তিব্বতি, তাই-কাদাই এবং আরও কয়েকটি ছোটখাটো ভাষা পরিবার ও বিচ্ছিন্ন ভাষার অন্তর্গত।[10]:২৮৩ নাইজেরিয়া (৫২৪ টি), ইন্দোনেশিয়া (৭১০ টি) ও পাপুয়া নিউ গিনির (৮৪০ টি) পরে, ভারতে বিশ্বের চতুর্থ সর্বোচ্চ সংখ্যক ভাষা (৪৪৭ টি) রয়েছে।[11] ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক কথ্য ভাষা, হিন্দি-উর্দু; ষষ্ঠ সর্বাধিক কথ্য ভাষ, বাংলা; ত্রয়োদশ সর্বাধিক কথ্য ভাষা, পাঞ্জাবি; এবং সপ্তদশ সর্বাধিক কথ্য ভাষা, তামিলের ধাত্রী ভূমি।[11]
ভারতের ভাষা | |
---|---|
দাপ্তরিক | |
সাংকেতিক |
|
কিবোর্ড বিন্যাস |
ভারতের সংবিধানের ৩৪৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যে সংঘের সরকারি ভাষা হল দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হিন্দি ভাষা, এবং ১৯৪৭ থেকে ১৫ বছর ধরে ইংরেজির সরকারি ব্যবহার অব্যাহত থাকবে। পরবর্তীতে, ভারত সরকার সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬৩ অনুসারে হিন্দির পাশাপাশি ইংরেজিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চালু রাখার অনুমতি অর্জন করে, যতক্ষণ না আইন প্রণয়ন এটি পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়।[2] সংঘের সরকারি কাজে ব্যবহার করা সংখ্যার রূপ হল "ভারতীয় সংখ্যাসমূহের আন্তর্জাতিক রূপ",[12][13] যা বেশিরভাগ ইংরেজিভাষী দেশে আরবি সংখ্যা হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[1] ভারতের কোন জাতীয় ভাষা নেই; ভারতের সংবিধান কোনো ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা প্রদান করে না।[14][15]
ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে ২২টি ভাষার তালিকা রয়েছে,[16] যেগুলিকে তফসিলি ভাষা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং স্বীকৃতি, মর্যাদা ও সরকারি উত্সাহ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, ভারত সরকার কন্নড়, মালয়ালম, ওড়িয়া, সংস্কৃত, তামিল ও তেলুগুকে ধ্রুপদী ভাষার বিশিষ্টতা প্রদান করেছে। ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা সেই ভাষাগুলিকে দেওয়া হয়, যেগুলির সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র প্রকৃতি রয়েছে।
২০০১ ভারতের জনগণনা অনুসারে, ভারতে ১২২টি প্রধান ভাষা ও ১৫৯৯ টি অন্যান্য ভাষা রয়েছে। যাইহোক, অন্যান্য উৎস থেকে পরিসংখ্যান পরিবর্তিত হয়, প্রাথমিকভাবে "ভাষা" ও "উপভাষা" শব্দের সংজ্ঞার পার্থক্যের কারণে। ২০০১ সালের জনগণনায় ১০ লাখ বা তার বেশি সংখ্যক মাতৃভাষাভাষী সহ ৩০ টি ভাষা এবং কমপক্ষে ১০ হাজার লোকের কথ্য ভাষা হিসাবে আরও ১২২টি ভাষা নথিভুক্ত হয়।[17] এই ভাষাগুলির বাইরেও ভারতবর্ষের ইতিহাসে ফার্সি ও ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দুটি যোগাযোগের ভাষা ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে: ফার্সি[18] ও ইংরেজি।[19] ভারতে মুঘল আমলে ফার্সি আদালতের ভাষা ছিল। এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের যুগ পর্যন্ত কয়েক শতাব্দী ধরে প্রশাসনিক ভাষা হিসাবে রাজত্ব করেছিল।[20]
ইংরেজি ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসাবে অব্যহত রয়েছে। এটি উচ্চশিক্ষায় ও ভারত সরকারের কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। হিন্দি, যার বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক প্রথম-ভাষাভাষী রয়েছে,[21] উত্তর ও মধ্য ভারতের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে যোগাযোগের ভাষা হিসেবে কাজ করে। যাইহোক, দক্ষিণ ভারতে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ উত্থাপিত হয়েছে, বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও কর্ণাটক রাজ্যে।[22][23] পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, আসাম, পাঞ্জাব ও অন্যান্য অ-হিন্দি অঞ্চলসমূহও হিন্দি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছে।[24] বাংলা হল পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাষাভাষী সহ রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ও বোধগম্য ভাষা। মারাঠি হল দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভাষাভাষী সহ রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বাধিক কথ্য ও বোধগম্য ভাষা।[25]
২০১১ ভারতের জনগণনা অনুযায়ী হিন্দি ভারতের সবচেয়ে দ্রুত ক্রমবর্ধমান ভাষা, যার পরে দ্বিতীয় স্থানে আসছে কাশ্মীরি, তৃতীয় স্থানে মৈতৈ মণিপুরী ও গুজরাটি এবং চতুর্থ স্থানে বাংলা।[26][27][28][29]
এথনোলগের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে ১৪৮টি চীনা-তিব্বতি ভাষা, ১৪০টি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা, ৮৪টি দ্রাবিড় ভাষা, ৩২টি অস্ট্রো-এশীয় ভাষা, ১৪টি আন্দামানি ভাষা ও ৫টি তাই-কাদাই ভাষা প্রচলিত।[30]