ভারতে বাল্যবিবাহ
From Wikipedia, the free encyclopedia
ভারতে বাল্যবিবাহ হল ভারতীয় আইন মোতাবেক ১৮ বছরের নিচে মেয়ে এবং ২১ বছরের নিচে পুরুষের বিয়ে। বেশির ভাগ কমবয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহ দুর্বল আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।
ভারতে বাল্যবিবাহের বহুল প্রভাব। বাল্যবিবাহের বহর এমন যে, গণনা করার মধ্যে ফারাক পড়ে যায়। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রিসার্চ অন উওমেন--ইউনিসেফ প্রকাশনা অনুযায়ী সামান্য নমুনা সমীক্ষায় ভারতের বাল্যবিবাহ ৪৭ শতাংশের মতো, যেখানে ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘের বয়ানে ৩০ শতাংশ বলা হয়। ভারতীয় জনগণনা আয়োগ গণনা ও সংবাদ দেয় যে, ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ের হার প্রতি দশ জনগণনার বছরে নিম্নমুখি। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনানুযায়ী, ভারতে দশ বছরের নিচে বালিকা বিয়ে হয়নি, দশ থেকে চোদ্দো বছরের মেয়েদের ৫ কোটি ৯২ লক্ষের মধ্যে ১৪ লক্ষ বিবাহিত, পনেরো থেকে উনিশ বছরের মেয়েদের ৪ কোটি ৬৩ লক্ষের মধ্যে ১ কোটি ১৩ লক্ষ বিবাহিত। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাল্যবিবাহের হার পড়তে থাকে আরো ৪৬ শতাংশে, যেটা সাকুল্যে জাতীয়ভাবে গড় ৭ শতাংশে দাঁড়ায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে। ঝাড়খণ্ড হল ভারতের সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের রাজ্য (১৪.১ শতাংশ), অন্যদিকে কেরালা হল একমাত্র রাজ্য যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাল্যবিবাহের হার কমেছে। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে গ্রাম্য বাল্যবিবাহের হার শহরের চেয়ে তিন গুণ বেশি ছিল।
১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় আইনে বাল্যবিবাহকে আইনবিরুদ্ধ করা হয়। যাই হোক, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক জমানায়, মেয়েদের আইনগত বিয়ের বয়স ১৫ এবং ছেলেদের ১৮ করা হয়। অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে মুসলমান সংস্থাসমূহের প্রতিবাদে, ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি ব্যক্তিগত বিধি শরিয়ত আইনসিদ্ধ হয়, যেখানে মেয়ের অভিভাবকের অনুমতিসাপেক্ষে বাল্যবিবাহতে সায় দেওয়া হোত। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হলে বাল্যবিবাহ আইনে নানা সংশোধন হয়। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আইনসিদ্ধ বয়স মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ এবং ছেলেদের ২১ করা হয়। বাল্যবিবাহ বিরোধী আইনগুলি ভারতীয় আদালতসমূহে চ্যালেঞ্জ করা হয়, সঙ্গে কিছু ভারতীয় মুসলমান সংস্থা চাইছে নিম্নতম বয়স না-রেখে সেটা তাদের ব্যক্তিগত আইনে ছেড়ে দেওয়া হোক। বাল্যবিবাহ হল একটি সক্রিয় রাজনৈতিক বিষয় তথা ভারতের উচ্চতর ন্যায়ালয়সমূহে চলতি মামলাগুলির অধীনে সমীক্ষারত বিষয়ও বটে।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য দেরি করে বিয়েতে উৎসাহদান চালু করে। উদাহরণস্বরূপ, হরিয়ানা রাজ্য ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে চালু করে তথাকথিত অপনি বেটি, অপনা ধন প্রকল্প, যেটার বাংলা অনুবাদ হল : 'আমার মেয়ে, আমার সম্পত্তি'। এটা হল দেরিতে যুবতী বিয়েতে উৎসর্গিত একটা শর্ত সাপেক্ষে নগদ হস্তান্তর প্রকল্প, যাতে সরকার কর্তৃক মেয়ের নামে মাবাবাকে ২৫,০০০ টাকা মূল্যের বন্ড অর্থ প্রদান; মেয়ের অষ্টাদশ জন্মদিনে যদি অবিবাহিত থাকে।