Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হিমালয় পর্বতমালার কোলে শায়িত ভুটান তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে নিজেকে বাইরের সাংস্কৃতিক প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পেরেছে। ভুটান একটি জনবিরল দেশ, এটির দক্ষিণে ভারত সীমান্ত এবং উত্তরে গণচীনের সীমান্ত। দেশটি তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্বাধীনতা রক্ষার লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে কঠোর বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি অনুসরণ করে। শুধুমাত্র বিংশ শতাব্দির শেষ শতক থেকে সীমিত সংখ্যক বিদেশীদেরকে ভুটান ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়। এই পদ্ধতির ফলে ভুটান সফলভাবে তাদের সংস্কৃতির অনেক দিক রক্ষা করতে সক্ষম হয়, যা মধ্য-সপ্তদশ শতাব্দির সংস্কৃতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত।
ভুটানের আধুনিক সংস্কৃতি তাদের প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে আহরিত। এই সংস্কৃতি দেশটির প্রাথমিক ক্রমবিকাশকে প্রভাবান্বিত করে। জংখা ভাষা এবং শারচপ ভাষা ভুটানের প্রধান ভাষা, এ দুটো ভাষা তিব্বতি ভাষার সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কিত। ভুটানি ভিক্ষুরা তিব্বতি ভাষার একটা ভিন্ন সংস্করণ লেখা পড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, যেটি চকি নামে পরিচিত। ভুটানিরা দৈহিক দিক থেকে তিব্বতিদের অনুরূপ, কিন্তু তারা কখন হিমালয় অতিক্রম করে দক্ষিণের উপত্যকায় বসতি স্থাপন করে, তা ইতিহাসে উল্লেখ নেই। তিব্বতি এবং ভুটানি, উভয় জাতিই তান্ত্রিক গুরু পদ্মসম্ভবকে শ্রদ্ধা করে, যিনি অষ্টম শতাব্দিতে হিমালয়ান বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।
ভুটানের সমাজ বৌদ্ধ ধর্মের চর্চাকে কেন্দ্র করে একত্রিত হয়, যা ভুটানের প্রধান ধর্ম। ধর্মীয় বিশ্বাস ভুটানিদের জীবনের সব ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়। প্রার্থনার পতাকা পাহাড়ে ওড়ানো হয়, তা দ্বারা বোঝানো হয় আশে পাশের সকল জীবের উপকারের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। স্থানীয় দেবতার প্রার্থনা করার নিদর্শন হিসাবে ঘরের ছাদে ছোট সাদা পতাকা ওড়ানো হয়। প্রতিটি উপত্যকায় অথবা জেলায় একচি বড় জং বা উচু দেয়ালে ঘেরা দুর্গ আছে, যা ঐ এলাকার প্রাশাসনিক এবং ধর্মীয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ২৩% হিন্দু। মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২% মুসলিম। মোট জনসংখ্যার ৭৫% বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এবং ০.৪% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
প্রতি বছর একবার জং বা গুরুত্বপূর্ণ গ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, যা সেচু নামে পরিচিত। আশে পাশের এলাকার মানুষেরাওেএই ধর্মীয় অনুষ্ঠিানে অংশগ্রহণের জন্য কয়েক দিনের জন্য ঐ এলাকায় চলে আসেন। এই অনুষ্ঠানের প্রধান কার্যক্রম হলো এক ধরনের বিশেষ ধর্মীয় নৃত্য, যা চাম নামে পরিচিত এবং একটি বড় আঙ্গিনায় এটি পরিবেশিত হয়।
প্রতিটি পৃথক নৃত্য সম্পূর্ণ হতে কয়েক ঘণ্টা লাগে এবং পুরো অনুষ্ঠান শেষ হতে চার দিন লাগে। নাচের দর্শকরা সরাসরি আশীর্বাদ লাভ করেন এবং তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি গ্রামবাসীদের নিকট তুলে ধরে।
ভুটানি সঙ্গীতের ঐতিহ্যবাহী রীতিগুলোর মধ্যে আছে ঝুংধ্রা, বএদ্রা ইত্যাদি এবং আধুনিক রীতি রিগসার নামে পরিচিত।
পুরুষ ও মহিলারা এক সাথে মাঠে কাজ করে, এবং তাদের উভয়েরই ছোট দোকান বা ব্যবসা থাকতে পারে। পুরুষেরা গৃহস্থালী কর্মকান্ডে, এমনকি রান্না বান্নার কাজেও পুরোপুরি অংশ গ্রহণ করে। পুরুষরা ঐতিহ্যগতভাবে পোশাক প্রস্তুত ও সেলাই করে (তবে ফেব্রিক বয়ন করে না)। শহরাঞ্চলে পশ্চিমা রীতির পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করছে, যে সব পরিবারে স্বামী উপার্জন করে এবং স্ত্রী গৃহস্থালী কাজ করে। উভয় লিঙের মানুষই ভিক্ষু হতে পারে, যদিও বাস্তবে নারীরা তুলনামুলক কম ভিক্ষু হয়।
ভুটানি সমাজে বিয়ে উভয় পক্ষের মতানুসারে হয়ে থাকে, এবং বিবাহ বিচ্ছেদও খুব অস্বাভাবিক নয়। বিবাহ অনুষ্ঠানে সাদা স্কার্ফ বদল করা হয় এবং একটি কাপে উভয়ে শেয়ার করে। ছয় মাসের বেশি এক সাথে বসবাস করার পর অফিসিয়ালি বিবাহ নিবন্ধন করা যায়। প্রথাগতভাবে বরেরা কনের পারিবারিক ঘরে স্থানান্তরিত হয়, তবে নববিবাহিত দম্পতি যে কোন পরিবারের সাথে বসবাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে তাদের।
রাজ পরিবারের সদস্য ছাড়া সাধারণ ভুটানিদের নামের সাথে কোন পারিবারিক নাম থাকে না। জন্মের সময় দুটো প্রথাগত নাম স্থানীয় লামা অথবা পিতা-মাতা কিংবা দাদা-দাদী শিশুর নাম নির্ধারণ করেন। পুরুষ না নারী, তা প্রথম নাম থেকে চেনা যায় না, তবে নামের শেষাংশ দিয়ে তা চেনা যায়।
যেহেতু সীমিত সংখ্যক গ্রহণযোগ্য নামের সমষ্টি থেকে নাম বাছােই করতে হয়, তাই অনিবার্যভাবেই অনেকের প্রথম এবং শেষ নাম একই রকম হয়ে যায়। এই অস্পষ্টতা দূর করার জন্যে অনানুষ্ঠানিক উপনাম পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় লোকটি কোন এলাকার। উদাহরণস্বরুপ যদি কারো নাম হয় “চং কিনলি” এবং তার বাড়ি হয় পারো উপত্যকার চজম গ্রামে, তাহলে সে যখন পারো উপত্যকার বাইরে যাবে তখন সে “পারো কিনলি” নামে পরিচিত হবে। আর পারো উপত্যকায় সে তার গ্রামের নামে পরিচিত হবে, তখন তার নাম হবে “চং কিনলি চজম”। মাঝে মধ্যে ছোট একটি গ্রামের কয়েকটি ঘরের মধ্যেও একই রকম নামের অনেক শিশু থাকতে পারে, যা স্থানীয় লামার উৎসাহে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সে তার ঘরের নামে পরিচিত হবে, যেমন “চেমসারপ কিনলি”।
১৯৬০ এর দশকের প্রথম দিতে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে প্রথম ত্রিশ মিনিটের জন্য বেতার সম্প্রচার হয়। টেলিভিশন সম্প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৯ সালে, যদিও মাত্র কয়েকটি ধনী পরিবার তখন স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা কিনতে সক্ষ ছিল। ২০০ সালে ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।
ভুটানের প্রধান খাবার হলো লাল চাল (বাদামী চালের মতো, কিন্তু এতে বাদামী স্বাদ থাকে, ধানের একমাত্র প্রকার যেটি উচু এলাকায় জন্মায়।), বাজরা, ভুট্টা ইত্যাদি। পাহাড়াঞ্চলের খাবারের তালিকায় আছে মোরগ, চরমি গাইয়ের মাংস, শুকনো গরুর মাংস, শুকরের মাংস এবং চর্বি এবং মেষশাবক ইত্যাদি। স্যুপ এবং সিদ্ধ মাংস, চাল, ফার্ন, মসুর ডাল, এবং শুকনো সবজি, লাল মরিচ এবং পনিরের সাথে মশলা ইত্যাদি ভুটানে শীতকালের প্রিয় খাবার। .
দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে গরু এবং চরমি গাইয়ের দুধের তৈরি মাখন এবং পনির অত্যন্ত জনপ্রিয়, প্রকৃতপক্ষেবেশির ভাগ দুধ দিয়েই মাখন এবং পনির বানানো হয়। জনপ্রিয় পানীয়র মধ্যে আছে: মাখন চা, কালো চা, স্থানীয় ভাবে প্রস্তুতকৃত আরা (ভাতের ওয়াইন) এবং বিয়ার। জনপ্রিয় মশলার মধ্যে আছে: এলাচ, আদা, থিংগে (সিচুয়ান মরিচ), রসুন, হলুদ, এবং কেওড়া।
যখর কেউ খাবারের জন্য অনুরোধ করে, তখন বলে মেশু মেশু, এবং ভুটানের ভদ্রতা অনুযায়ী অপরজন বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করে, তখন দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার অনুরোধ করা হয়।
তীর নিক্ষেপ ভুটানের জাতীয় খেলা, ভুটানের বেশির ভাগ গ্রামে নিয়মিত তীর নিক্ষে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ভুটানে এই খেলার পদ্ধতি অলিম্পিক মান পদ্ধতির সাথে ভিন্ন। দলের প্রত্যেক সদস্য এক রাউন্ডে দুইবার তীর নিক্ষেপের সুযোগ পায়।
ভুটানে ঐতিহ্যবাহী তীর নিক্ষেপ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, এবং এই প্রতিযোগিতা দুটি গ্রাম, শহর এবং অপেশাদার খেলোয়াড় দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিযোগিতায় সাধারণত প্রচুর খাদ্য-পানীয় এবং নাচ গানের ব্যবস্থা থাকে। ডার্ট (কুরু) সমান জনপ্রিয় আরেকটি জনপ্রিয় খেলা।
আরেকটি ঐতিহ্যবাহী খেলা হলো দিগর, যেটি শট পুট এবং ঘোড়ার নাল ছোড়া খেলার অনুরূপ।.
ফুটবল ভুটানের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ভুটানে ক্রিকেটও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, বিশেষত ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.