মহাবৃত্ত
গোলকের পৃষ্ঠে অঙ্কিত সর্ববৃহৎ বৃত্ত / From Wikipedia, the free encyclopedia
একটি গোলকের কেন্দ্রগামী যে কোন সমতল এবং গোলক-পৃষ্ঠের ছেদ রেখাই মহাবৃত্ত বা গুরুবৃত্ত বা বৃহৎ বৃত্ত যাকে ইংরেজিতে great cicle বা orthodrome বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, কোন গোলকের পৃষ্ঠে যে সর্ব বৃহৎ বৃত্ত আঁকা সম্ভব সেটাই মহাবৃত্ত। আবার, একটি গোলককে তার কেন্দ্রগামী যে কোন অক্ষের লম্বদিকে সমান পুরুত্বের অসংখ্য পাতলা গোলাকার চাকতিতে কর্তন করা হলে যে চাকতিটির ব্যাসার্ধ অন্য সব চাকতির চেয়ে বড় হবে অর্থাৎ যে চাকতিটির কেন্দ্র গোলকটির কেন্দ্র হবে সেই চাকতিটির প্রান্ত রেখাই (পরিধি) মহাবৃত্ত। একটি গোলকের পৃষ্ঠে অসীম সংখ্যক মহাবৃত্ত আঁকা সম্ভব। গোলকের কেন্দ্র ও ব্যাসার্ধই গোলকটির যে কোন মহাবৃত্তের কেন্দ্র ও ব্যাসার্ধ। ইউক্লিডীয় ত্রিমাত্রিক স্থানে প্রতিটি বৃত্তই কোন না কোন গোলকের মহাবৃত্ত। মহাবৃত্তের শর্ত দুটি রয়েছে। যথা: এটি গোলককে সমান দুটি গোলার্ধে বিভক্ত করে এবং বিভাজক তল অবশ্যই গোলকের কেন্দ্রগামী।
কোন গোলকের পৃষ্ঠের একটি বিন্দু থেকে সরল রেখা বরাবর যাত্রা শুরু করে এর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে গমন করলে সরল রেখাটি গোলকের অপর পৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে ছেদ করে তাই পূর্বোক্ত বিন্দুর বিপরীত-পৃষ্ঠ বিন্দু বা প্রতিপাদ বিন্দু বা antipodal point। যেমন— ভৌগোলিক উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পরস্পরের বিপরীত-পৃষ্ঠ বিন্দু। কোন গোলকের পৃষ্ঠস্থ দুটি বিন্দু পরস্পরের বিপরীত-পৃষ্ঠ বিন্দু বা প্রতিপাদ বিন্দু না হলে এ দুটি বিন্দু দিয়ে কেবল একটি মহাবৃত্ত অতিক্রম করবে, অপরদিকে ঐ বিন্দুদ্বয় পরস্পরের বিপরীত-পৃষ্ঠ বিন্দু হলে এই বিন্দুদুটিকে ছেদ করে এমন অসংখ্য মহাবৃত্ত পাওয়া যাবে। যেমন— পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অতিক্রমকারী অসংখ্য মহাবৃত্ত পাওয়া যাবে। গোলক পৃষ্ঠের যে কোন দুটি বিন্দু দিয়ে অতিক্রমকারী মহাবৃত্তের বৃত্তচাপ হল ঐ বিন্দুদ্বয়ের অন্তর্গত ক্ষুদ্রতম বৃত্তচাপ এবং এই বৃত্তচাপ উক্ত বিন্দুদ্বয়ের ক্ষুদ্রতম দূরত্বকে নির্দেশ করে। একারণে এক স্থান থেকে কোন গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজ ও বিমানগুলো তাদের চলার পথে ঐ স্থান দুটি দিয়ে কল্পিত মহাবৃত্তকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে। কারণ এতে জ্বালানি ও সময় দুটিরই সাশ্রয় হয়। তবে স্থলপথের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার (যেমন— পাহাড়) কারণে মহাবৃত্ত রেখাকে অনুসরণ অসুবিধাজনক। উল্লেখিত ক্ষুদ্রতম বৃত্তচাপ ইউক্লিডীয় জ্যামিতির সরল রেখার ধারণার অনুরূপ। রেইম্যানীয় জ্যামিতিতে গোলীয় পৃষ্ঠের এ ধরনের (ক্ষুদ্রতম বৃত্তচাপ) দূরত্বকেই বিবেচনা করা হয় এবং রেইম্যানীয় বৃত্ত আদতে মহাবৃত্ত। এই মহাবৃত্তগুলোকে বা তাদের বৃত্তচাপকেই গোলকের জিওডেসিক বলা হয়।
উচ্চতর মাত্রার ক্ষেত্রে, n-গোলক ও Rn + 1 ইউক্লিডীয় স্থানে উৎসগামী দ্বি-সমতলের ছেদরেখাই n-গোলকের মহাবৃত্ত।
যে কোন গোলকের ন্যায় পৃথিবীর ক্ষেত্রেও অসীম সংখ্যক মহাবৃত্ত বিদ্যমান। পৃথিবীর নিরক্ষ রেখা বা বিষুব রেখা একটি মহাবৃত্ত যা পূর্ব-পশ্চিম দিক বরাবর পৃথিবীকে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দূরত্বে দুটি সমান গোলার্ধে বিভক্ত করে। তবে নিরক্ষ রেখার সমান্তরাল অন্যান্য অক্ষরেখাগুলো মহাবৃত্ত নয়। এছাড়াও চৌম্বক নিরক্ষরেখা, তাপীয় নিরক্ষরেখাও (২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর) মহাবৃত্ত। 0° দ্রাঘিমা রেখা ও 180° দ্রাঘিমা রেখার সমন্বয়ে যে বৃত্ত পাওয়া যায় তা একটি মহাবৃত্ত। অনুরূপভাবে, 145° পূর্ব এবং 35° পশ্চিম দ্রাঘিমা রেখার সমন্বয়ে কল্পিত বৃত্তও মহাবৃত্ত।[1]