মার্ক লিখিত গোপন সুসমাচার
From Wikipedia, the free encyclopedia
মার্ক লিখিত গোপন সুসমাচার বা মার্ক লিখিত মরমি সুসমাচার[1] (গ্রিক: τοῦ Μάρκου τὸ μυστικὸν εὐαγγέλιον, tou Markou to mystikon euangelion),[lower-alpha 1][3] হল অনুমোদিত সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারের একটি গোপন বা মরমি সংস্করণ। কথিত আছে, এটি মূল অনুমোদিত সুসমাচারটির তুলনায় আয়তনে দীর্ঘতর। তাই এটি মার্ক লিখিত দীর্ঘতর সুসমাচার নামেও পরিচিত।[4][5] মার সাবা পত্র নামে পরিচিত একটি প্রাচীন চিঠিতে স্বতন্ত্রভাবে এই সুসমাচারটির উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, চিঠিটি আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিমেন্টের লেখা। তবে নথিটির প্রামাণিকতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। চিঠিটি সংরক্ষিত রয়েছে শুধুমাত্র হাতে লেখা একটি গ্রিক প্রতিলিপির আলোকচিত্রেই। মনে করা হয়, উক্ত প্রতিলিপিটি সপ্তদশ শতাব্দীতে মুদ্রিত অ্যান্টিওকের ইগনেশিয়াসের রচনাবলির এন্ডপেপারে অষ্টাদশ শতাব্দীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।[lower-alpha 2][8][9][10]
১৯৫৮ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ইতিহাসের অধ্যাপক মর্টন স্মিথ জেরুসালেমের ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত মার সাবার একটি মঠে আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লিমেন্টের লেখা এবং ইতিপূর্বে অজ্ঞাত একটি চিঠি খুঁজে পান।[11] ১৯৬০ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেন[12] এবং ১৯৭৩ সালে নিজের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন।[10][13] মূল পাণ্ডুলিপিটি এর পরে জেরুসালেমে গ্রিক অর্থোডক্স চার্চের গ্রন্থাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৯০ সালের পর কোনও এক সময় সেটি হারিয়েও যায়।[14][15] আলোকচিত্র ও অনুলিপির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী গবেষণাকার্য সম্পাদিত হয়েছিল। এই আলোকচিত্র ও অনুলিপিগুলির মধ্যে স্মিথের গৃহীত আলোকচিত্র ও অনুলিপিও ছিল।[16]
চিঠিটি যাঁকে সম্বোধন করে লেখা সেই থিওডোরের (থিওডোরোস) পরিচয় ভিন্নভাবে জানা যায় না।[17][18] চিঠিতে ক্লিমেন্ট লিখেছেন, "পিটার যখন শহিদ হলেন, তখন মার্ক [অর্থাৎ, সুসমাচার-প্রচারক মার্ক] আলেকজান্দ্রিয়ায় আসেন। তিনি তাঁর নিজের এবং পিটারের লেখা বিবরণী সঙ্গে এনেছিলেন। সেগুলি থেকে যে তথ্যগুলি জ্ঞানের পথে উত্তরণের জন্য উপযুক্ত সেগুলি তিনি স্থানান্তরিত করেন তাঁর পূর্বতন গ্রন্থে [অর্থাৎ, সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারে]।"[19] তিনি আরও বলেন যে, অধুনা মার্ক লিখিত গোপন সুসমাচার নামে পরিচিত এই সম্প্রসারিত সংস্করণটি মার্ক রেখে যান "আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কাছে এবং সেখানে এটি আজও সর্বাধিক যত্নের সহিত রক্ষিত হচ্ছে এবং যাঁরা মহান রহস্যসমূহের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন শুধুমাত্র তাঁদের দ্বারাই পঠিত হচ্ছে।"[19][20][21] ক্লিমেন্ট সাধু মার্ক লিখিত এই গোপন সুসমাচার থেকে দু’টি অংশ উদ্ধৃত করেছিলেন। উদ্ধৃত দীর্ঘতর অংশটিতে কথিত হয়েছে যে, বেথানিতে যিশু মৃত এক ধনী যুবককে জীবন দান করেছিলেন।[22] এই কাহিনিটির সঙ্গে সাধু যোহন লিখিত সুসমাচারে বর্ণিত লাজারাসের জীবনদান উপাখ্যানের বহু মিল লক্ষিত হয়।[23][24][25]
চিঠিটি প্রকাশ হতেই এক সময়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু কিছুকাল পরেই এই প্রকাশনার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অপব্যাখ্যার অভিযোগ আনীত হয়।[26] অধিকাংশ প্যাট্রিস্টিক ক্লিমেন্ট বিশেষজ্ঞ এই চিঠিটিকে অকৃত্রিম মনে করলেও,[27][28] বাইবেল বিশেষজ্ঞরা এই চিঠিটির প্রামাণিকতা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি এবং এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত জ্ঞাপন করেন।[29][30][31] গ্রন্থটির দু’টি অংশ মাত্র পাওয়া গিয়েছিল। গবেষকদের মতে, এই দুই অংশের দু’টিই অপ্রামাণিক হতে পারে আবার দু’টিই প্রামাণিক হতে পারে অথবা এমনও হতে পারে যে একটি অংশ প্রামাণিক এবং অপরটি অপ্রামাণিক।[32] যাঁরা চিঠিটিকে জালিয়াতি মনে করেন, তাঁদের অধিকাংশের মতেই এটি আধুনিক কালের জালিয়াতি এবং অধিকাংশ স্থলেই এটির আবিষ্কর্তা মর্টন স্মিথকেই এই ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।[32] চিঠিটি জালিয়াতি হলে সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারের খণ্ডাংশগুলিও জালিয়াতি।[32] কেউ কেউ চিঠিটিকে প্রামাণিক মনে করলেও ক্লিমেন্টের বিবরণে বিশ্বাস স্থাপন করেন না। বরং তাঁরা সুসমাচারটিকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত একটি (জ্ঞানবাদী) প্যাস্টিক মনে করেন।[33][34] অন্যেরা মনে করেন যে, ক্লিমেন্টের দেওয়া তথ্যগুলি সঠিক এবং এই গোপন সুসমাচারটি স্বয়ং মার্ক কর্তৃক সম্প্রসারিত সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারের একটি দ্বিতীয় সংস্করণ।[35] অন্য এক দল বিশেষজ্ঞ আবার মনে করেন যে, মার্ক লিখিত গোপন সুসমাচারটিই মূল সুসমাচার এবং সেটি অনুমোদিত সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারের পূর্বে রচিত হয়েছিল।[36][37] তাঁরা মনে করেন, ক্লিমেন্ট কর্তৃক উদ্ধৃত গোপন সুসমাচারের অংশগুলির ফলশ্রুতি হল অনুমোদিত সুসমাচারটি। শেষোক্ত সুসমাচারের অন্যান্য অংশগুলি হয় মার্ক নিজে অথবা পরবর্তী পর্যায়ে অন্য কেউ বাদ দিয়েছিলেন।[38][39][39]
মার সাবা পত্রের প্রামাণিকতা নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনও ঘটেনি।[40] গবেষক মহল এটির প্রামাণিকতার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। মার্ক লিখিত গোপন সুসমাচার-সংক্রান্ত বিতর্কেও তাই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।[41][32][26] যদিও এই বিষয়ে বিতর্ক অব্যাহতই রয়েছে।[42]