Loading AI tools
চীনা দার্শনিক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
টেমপ্লেট:কনফুসীয় মতবাদ
মেনসিয়াস 孟子 | |
---|---|
জন্ম | জৌ রাজ্য, ঝৌ রাজত্বকাল (বর্তমান জৌচেং, শাংডং) |
যুগ | প্রাচীন দর্শন |
অঞ্চল | চৈনিক দর্শন |
প্রধান আগ্রহ | নৈতিকতা, সামাজিক দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন |
ভাবশিষ্য
|
মেনসিয়াস | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
চীনা | 孟子 | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
হান-ইউ ফিনিন | Mèngzǐ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | "পণ্ডিত মেং" | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
পূর্ব পৌরষিক নাম: | জি (চীনা: 姬; ফিনিন: Jī) |
গোষ্ঠীর নাম: | মেং (孟; Mèng)[lower-alpha 1] |
প্রদত্ত নাম: | কে (সরলীকৃত চীনা: 轲; প্রথাগত চীনা: 軻; ফিনিন: Kē) |
সম্মানসূচক নাম: | অজানা[lower-alpha 2] |
মরণোত্তর নাম: | পণ্ডিত মেং[lower-alpha 3] (সরলীকৃত চীনা: 亚圣孟子; প্রথাগত চীনা: 亞聖孟子; ফিনিন: Yàshèng Mèngzǐ)। |
শৈলীগত: | পণ্ডিত মেং (孟子; Mèngzǐ) |
মেনসিয়াস (/ˈmɛnʃiəs/ MEN-shee-əs)[1] বা মেংজি (372–289 BC or 385–303 or 302 BC) ছিলেন একজন চৈনিক কনফুসীয় দার্শনিক, প্রায়শই তাকে দ্বিতীয় ঋষি বলে বর্ণনা করা হয়, যেখানে প্রথমজন হলেন কনফুসিয়াস নিজেই।[2][3] যুদ্ধকালীন পর্বে তিনি চীন পরিভ্রমণ করেন শাসকদের সংস্কারের উপদেশ দিয়ে। মেনসিয়াস গ্রন্থানুসারে, রাজাদের সাথে তার আলাপকে পরবর্তীকালে বিশুদ্ধ কনফুসিয়ান মতবাদ বলে আখ্যা দেয়া হয়।
তার প্রধান বিশ্বাস ছিল সহজাতভাবেই মানুষরা উৎকর্ষিত, কিন্তু তার এই গুণ চর্চার প্রয়োজন এবং তা প্রকাশ করার জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজন। তিনি শাসকদের প্রজাদের উদ্দেশ্যে জনহিতকর কাজ করে তাদের অবস্থানকে সুসংহত করার নির্দেশ দেন। এই ক্ষেত্রে তারা জনগণের আজ্ঞাবহ।
মেনসিয়াস জৌ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানটি বর্তমানে গ্রাম্য-শহর জৌচেং (আসলে জোক্সিয়ান) এর সীমানায় শাংডং প্রদেশে অবস্থিত। কনফুসিয়াসের জন্মস্থান কিউফুর মাত্র ৩০ কিলোমিটার (১৮ মাইল) দক্ষিণে জায়গাটি অবস্থিত। তিনি জন্মনাম মেং কি (孟軻) তেও পরিচিত।
তিনি একজন পরিব্রাজক চীনা দার্শনিক এবং ঋষি। তিনি কনফুসীয়বাদের অগ্রগণ্য ব্যাখ্যাকারক ছিলেন। কনফুসিয়াসের এক নাতি জিসি তার ছাত্র ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, কনফুসিয়াসের মতো তিনিও চল্লিশ বছর ধরে চীন পরিভ্রমণ করেন শাসকদের সংস্কারের উপদেশ দিয়ে।[4]
যুদ্ধকালীন পর্বে (৪০৩-২২১ খ্রিঃপূঃ), ৩১৯ থেকে ৩১২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তিনি কি রাজ্যে (১০৪৬-২২১ খ্রিঃপূঃ) জিক্সিয়া একাডেমিতে কর্মকর্তা এবং পণ্ডিত হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। মায়ের মৃত্যুতে শোক পালনের জন্যে কি-এর সরকারি কাজ থেকে তিন বছরের অনুপস্থিতির ছুটি নিয়ে তিনি অন্তিম শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। সমকালীন পৃথিবীতে পরিবর্তন সৃষ্টির ব্যর্থতার হতাশায় তিনি প্রকাশ্য জীবন থেকে অপসৃত হন।[5]
জৌচেং এর কেন্দ্রীয় শহরাঞ্চল থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ‘মেনসিয়াস সমাধিক্ষেত্রে’ তাকে সমাহিত করা হয়। সমাধিক্ষেত্রটি ‘মেংজি লিন’ (孟子林) কিংবা ‘ইয়াশেং লিন’ (亞聖林)নামেও পরিচিত। ড্রাগন মুকুটধারী এক বৃহদাকার পাথুরে কচ্ছপ়় নির্মিত কেন্দ্রস্তম্ভ তার কবরের সামনে রয়েছে।[6]
মেনসিয়াসের মাকে চীনা সংস্কৃতিতে প্রায়ই আদর্শ নারী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়। অন্যতম বিখ্যাত চীনা চার অক্ষরের বাগধারা হল - 孟母三遷 (ফিনিন: মেংমু সাঙ্কিয়ান; আক্ষরিক: "মেনসিয়াসের মা তিনগুন চলে")। শিশুর সঠিক লালন-পালনের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত তিনবার মেনসিয়াসের মা সব বাসা ঘুরতেন – বাগধারাটি দ্বারা এই চীনা কিংবদন্তিকে নির্দেশ করা হয়। অভিব্যক্তি অনুসারে, বাগধারাটি সন্তানের লালন-পালনের জন্য সঠিক পরিবেশের প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করে।
মেনসিয়াসের অল্প বয়সে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। তার মা ঝ্যাং Zhǎng (仉) একাই সন্তানের লালন-পালন করেন। তারা খুব দরিদ্র ছিলেন। প্রথমে তারা গোরস্থানের পাশে বাস করতেন। শ্রীঘ্রই তার মা লক্ষ্য করলেন যে, মেনসিয়াস অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মিছিলে অর্থের বিনিময়ে শোকার্তকারীদের অনুকরণ করা শুরু করেছেন। তাই তিনি স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তী বাসাটি শহরে এক বাজারের নিকটে ছিল। তখন বালক দোকানিদের চিৎকারকে নকল করা শুরু করলেন (প্রাচীন চীনে দোকানিদেরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হত)। অবশেষে তার মা এক বিদ্যালয়ের পাশে বাসা নিলেন। পণ্ডিত এবং শিষ্যদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে মেনসিয়াস পড়াশোনা শুরু করলেন। তার মা এবার থিতু হলেন এবং মেনসিয়াস একজন পণ্ডিত হয়েছিলেন।
আরেকটি গল্প পড়াশোনার উপরে মেনসিয়াসের মায়ের গুরুত্বারোপকে বর্ণনা করে। গল্পানুযায়ী, অল্প বয়সে মেনসিয়াস স্কুল পালাতেন। যে কাপড়টি বুনছিলেন তা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলে, তার মা তার এই আপাত অবজ্ঞার প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। কোনো কাজ যে মাঝপথে বন্ধ করা যায় না – এই দৃষ্টান্ত বোঝাতে তার মা ঐ কাজটি করেন। এবং মেনসিয়াস এতে অনুপ্রাণিত হয়ে শিক্ষার প্রতি অধ্যবসায়ী হন।
তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে আর একটি কিংবদন্তি আছে। গৃহে একাকী থাকা অবস্থায় মেনসিয়াসের স্ত্রী মেনসিয়াস কর্তৃক সঠিকভাবে না বসায় আবিস্কৃত হন। মেনসিয়াস ভাবলেন যে তার স্ত্রী ধর্মীয় আচার লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান। মেনসিয়াসের মা দাবি করেন যে, “ঘরে প্রবেশের পূর্বে অন্যদের প্রস্তুত হবার জন্য কোনো মানুষের উচ্চশব্দে তার উপস্থিতি ঘোষণা করা উচিত” – ধর্মীয় আচারের বইয়ে এটা উল্লেখ আছে। যেহেতু মেনসিয়াস এটা করেননি, তাই কোনো মানুষ যদি আচার লঙ্ঘন করে থাকে, সেটা তিনি নিজেই। ঘটনাক্রমে, মেনসিয়াস তার দোষ স্বীকার করেন।
লিউ জিয়াং কর্তৃক লিখিত ‘লিয়েনু ঝুয়ান’ (আদর্শ নারীদের জীবনী) গ্রন্থে যে ১২৫ জন নারীর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তিনি তার অন্যতম।
কিংফুর (慶父) মাধ্যমে লু-এর ডিউক হুয়ান-এর পুত্র, মেনসিয়াসের পূর্বপুরুষ ছিলেন। তিনি লু রাজ্য-এর (魯煬公) ডিউক ইয়াং এর বংশধর। ডিউক ইয়াং ঝৌ রাজবংশের ঝৌ এর ডিউক এর পুত্র বো কিন এর সন্তান। বংশতালিকাটি মেনসিয়াস পরিবার বৃক্ষ (孟子世家大宗世系) হতে পাওয়া। (孟子世家大宗世系).[7][8][9]
মেনসিয়াসের উত্তরসূরীরা জৌচেং-এ মেনসিয়াস পারিবারিক ম্যানসনে থাকতেন। এখানে মেনসিয়াস মন্দির এবং মেনসিয়াসের উত্তরসূরীদের জন্য সমাধিস্থল নির্মিত হয়।
তাং শাসনামলে মেনসিয়াসের জীবিত উত্তরসূরীরা ছিলেন মেং হাওরান এবং মেং জিয়াও।
মিং শাসনামলে সম্রাট হানলিন একাডেমিতে মেনসিয়াসের বংশধরদের বংশানুক্রমিক খেতাবের ব্যবস্থা করেন। তারা যে খেতাবটি ধারণ করেন তা ছিল ওউজিং বোশি (五經博士)। 五經博士; Wǔjīng Bóshì)।[10][11][12] ১৪৫২ সালে ৫৬তম প্রজন্মের মেংজি-মেং জিউয়েন (孟希文)[13][14][15][16][17] এবং ৫৯তম প্রজন্মের ইয়ান হুই-ইয়ান জিহুই (顔希惠) এর সন্তানাদির ওপর এ খেতাব অর্পণ করা হয়। ১৪৫৬-১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে এই খেতাব ১২তম প্রজন্মের ঝৌ দুনয়ি-ঝৌ মিয়ান (週冕) এর সন্তানাদি, ১৭তম প্রজন্মের চেং ভ্রাতৃদ্বয় চেং হাও- চেং ই চেন কেরেন (程克), ৯ম প্রজন্মের ঝু জি- ঝু তিং (朱梴) এর ওপরেও অর্পণ করা হয়। ১৫৩৯ সালে একই খেতাব জেং ক্যান এর সন্তান ৬০তম প্রজন্মের জেং ঝিকুই (曾質粹), ১৬২২ সালে ঝ্যাং জাই-এর সন্তানাদি এবং ১৬৩০ সালে শাও ইয়ং এর সন্তানাদি-এর ওপর অর্পণ করা হয়।[18]
মেনসিয়াসের অন্যতম প্রত্যক্ষ বংশধর চায়না হাউসের প্রাক্তন পরিচালক ড.মেং ছিহ (ড. পল ছিহ মেং রূপে ইংরেজিকৃত) ১৯৪৪ সালে চায়না ইন্সটিটিউট এর পরিচালক ছিলেন। টাইম ম্যাগাজিন অনুযায়ী সে বছর তার বয়স ছিল ৪৪। মেং ১৯৯০ সালে ৯০ বছর বয়সে অ্যারিজোনায় মৃত্যুবরণ করেন।[19] উত্তর ক্যারলাইনার ডেভিডসন কলেজ ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষায়তন ছিল। কনফুসিয়াস এর উত্তরসূরী এইচ. এইচ. কাং এর সাথে তিনি একটি বক্তৃতায় যোগদান করেছিলেন। [20]
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে জেংজির উত্তরসূরী কর্তৃক অধিকৃত ‘স্যাক্রিফিসিয়াল অফিসিয়াল টু জেংজি’, ইয়ান হুই-এর উত্তরসূরী কর্তৃক অধিকৃত ‘স্যাক্রিফিসিয়াল অফিসিয়াল টু ইয়ান হুই’, কনফুসিয়াসের উত্তরসূরী কর্তৃক অধিকৃত ‘স্যাক্রিফিসিয়াল অফিসিয়াল টু কনফুসিয়াস’ এর মতো মেনসিয়াসের উত্তরসূরী কর্তৃক অধিকৃত একটি ‘স্যাক্রিফিসিয়াল অফিসিয়াল টু মেনসিয়াস’-ও আছে। [21][22][23]
অন্য চার ঋষি (四氏) (কনফুসিয়াস, জেংজি, ইয়ান হুই)দের সাথে মেনসিয়াসের বংশধরেরা নামের জন্য মিং এবং কিং সম্রাট প্রদত্ত তাদের প্রজন্ম কাব্য ব্যবহার করে।[24][25]
মেনসিয়াস উত্তরসূরীদের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থানগুলো হল – মেং পারিবারিক ম্যানসন (孟府), মেনসিয়াসের মন্দির (孟廟) এবং মেনসিয়াসের সমাধিক্ষেত্র (孟林)।
মেনসিয়াসের উত্তরসূরীদের একজন কোরিয়ায় চলে যান এবং সিনচ্যাং মায়েং গোষ্ঠীর সূচনা করেন।
যেখানে কনফুসিয়াস পর্যন্ত মানব চরিত্র নিয়ে বিশদ কিংবা স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি, সেখানে মেনসিয়াস মানুষের সহজাত উৎকর্ষ নিয়ে সোজাসুজি বলেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সমাজের প্রভাব, ইতিবাচক প্রভাবের অভাবে খারাপ নৈতিক চরিত্র জন্ম নেয়। তার মতে, “যে তার মনকে সর্বাধিক ব্যবহার করে, সে তার চরিত্র জানে” [26] এবং “পথভ্রষ্ট মনের সন্ধান লাভ করা ছাড়া শিক্ষা পদ্ধতি আর কিছুই নয়”।[27]
সহজাত উৎকর্ষর প্রমাণ দিতে মেনসিয়াস কূপে পতিত এক শিশুর উদাহরণ দেন। ঘটনা প্রত্যক্ষকারী সাথে সাথেই অনুভব করতেন,
“ | বিপদাশঙ্কা ও মর্মপীড়া, শিশুর পিতা-মাতার সখ্য লাভ না চাওয়া, তাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুর প্রশংসা না চাওয়া, তারা যে খ্যাতিকে অপছন্দ করবেন এজন্যে নয় বরং মনুষত্ব্যের অভাবে তারা যে শিশুটিকে উদ্ধার করেননি এজন্য.........
অনুকম্পার অনুভূতিটা মানবতার সূচনা, লজ্জা এবং ঘৃণার অনুভূতি ন্যায়পরায়ণতার সূচনা, সশ্রদ্ধ বাধ্যতা এবং অনুবর্তিতার অনুভূতি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের সূচনা আর ভালো এবং খারাপের অনুভূতি হল জ্ঞানের সূচনা। চার অঙ্গের মতো মানুষের এই চার ধরনের সূচনাও রয়েছে। এই চার ধরনের সূচনা লাভ করার পরে যদি বলা হয় যে তারা বিকাশ লাভ করে নি, তার মানে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছে।”[[28] |
” |
মানবচরিত্রের সৎগুণের প্রতি একধরনের সহজাত প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু নৈতিক যথার্থতাকে অন্তিম পুঙ্খানুপুঙ্খতা পর্যন্ত দিকনির্দেশ করা সম্ভব হয় না। এজন্য উন্নয়নশীল সমাজে নিছক বহিঃস্থ নিয়ন্ত্রণ সর্বদাই ব্যর্থ হয়। অনুকূল পরিবেশে শিক্ষাবিষয়ক উন্নতি থেকেই বাস্তব উন্নতিসাধন সম্ভব। একইভাবে প্রতিকূল পরিবেশ মানব ইচ্ছাশক্তিকে নীতিভ্রষ্ট করে। এটা সহজাত অশুভের প্রমাণ হতে পারেনা। কারণ, পরিষ্কার চিন্তাসম্পন্ন মানুষ অন্যের ক্ষতি পরিহার করে চলবে। মেনসিয়াসের এই অবস্থান তাকে কনফুসিয়াস এবং ঝুনজি কিংবা তাও এর মাঝামাঝি ফেলে। ঝুনজির মতে মানুষ সহজাতভাবেই মন্দ। আবার তাও এর মতে, মানুষের চর্চার দরকার নেই। তাদের শুধু সহজাত, স্বাভাবিক এবং অনায়াস সদ্গুণকে গ্রহণ করতে হবে। এই চার সূচনা বা নবোদ্গম উদ্গত এবং বিকশিত হতে পারে, আবার তারা ব্যর্থও হতে পারে। এভাবেই মেনসিয়াস সম্পূর্ণ তাওবাদকে কনফুসীয় মতবাদের সাথে সংশ্লেষিত করেন। নিজেকে সুসভ্য করে গড়ে তুলতে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন আছে। কিন্তু শুরু করার জন্য কারো স্বাভাবিক প্রবণতাই উত্তম। শিক্ষার উদ্দেশ্য হল পরার্থপরতার চর্চা, যাকে রেনও বলা হয়।
মেনসিয়াসের মতে, শিক্ষাকে অবশ্যই মানব মনের সহজাত সুপ্ত গুণাবলিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তিনি মুখস্তবিদ্যার নিন্দা করতেন এবং পাঠের সক্রিয় জিজ্ঞাসনকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, “যে একটি বইয়ের সবকিছুই বিশ্বাস করে, তার বই ছাড়াই থাকা ভালো” (盡信書,則不如無書, 孟子.盡心下 থেকে)। প্রত্যেকের অংশ বিবেচনা করে অভ্যন্তরীণ দৃঢ়তা পরীক্ষা করা উচিত। আর অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করে বাস্তবিক ঘটনার সম্ভাবনায় তর্ক করা উচিত। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
নিয়তির জোরে সমাজে মানুষের প্রভাব নির্ধারিত হয় – মেনসিয়াস এই বিশ্বাস করতেন। নিয়তিতে যা লেখা মানব বুদ্ধিমত্তা কিংবা দূরদর্শন দ্বারা তার বিপরীত কার্যসাধন সম্ভব নয়। যখন কোনো অপ্রত্যাশিত এবং আনুমানিক পথ উদ্ভূত হয়, তখনই কেবল নিয়তি দৃষ্টিগোচর হয়। নিয়তিকে ভাগ্যের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। কর্মনির্বিশেষে স্বর্গ যে মানুষকে রক্ষা করবে – মেনসিয়াস এটা অস্বীকার করতেন। তিনি বলতেন, “যে নিয়তি বোঝে, সে কখনো ভগ্নপ্রায় দেয়ালের নিচে দাঁড়াবে না”। স্বাভাবিক এবং সহজাত পথটিই সঠিক পথ। অবশ্যই এ পথকে সর্বদা ব্যবহার করতে হবে। কারণ, “অব্যবহৃত পথ আগাছা দ্বারা ঢাকা পড়ে যায়”। যে নিয়তিকে অনুসরণ করে সে দীর্ঘ এবং সফল জীবনযাপন করবে। যে নিয়তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, সে তার সময়ের আগেই মৃত্যুবরণ করবে।
মেনসিয়াস রাজ্যের সাধারণ জনগণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কনফুসীয় মতবাদ যেখানে শাসকদের পক্ষে কথা বলে, সেখানে মেনসিয়াস বলেন, যদি শাসক নিষ্ঠুর হন এবং জনগণের প্রয়োজনকে উপেক্ষা করেন তাহলে জনগণের দ্বারা শাসকের পতন, এমনকি মৃত্যুও গ্রহণযোগ্য। কারণ যে শাসক ন্যায়পরায়ণতার সাথে শাসন করে না, সে আর প্রকৃত শাসক থাকে না। শাং এর অত্যাচারী শাসক ঝৌ এর পতনের বিষয়ে মেনসিয়াস বলেন, “আমি কেবল এক দুরাত্মা ঝৌ এর মৃত্যুর খবর শুনেছি, কিন্তু কোনো শাসকের মৃত্যুর কথা তো শুনিনি”।[29]
তার এই বক্তব্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উৎপীড়নের উসকানি হিসেবে না নিয়ে সমাজে কনফুসীয় দর্শনের প্রয়োগ হিসেবে নেয়া উচিত। যে কোনো প্রদত্ত সম্পর্কে যা সাধারণত আশা করা যায়, তা সম্পর্কে কনফুসীয় মতবাদে স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। সকল সম্পর্কই কল্যাণকর, কিন্তু প্রত্যেক সম্পর্কেরই নিজস্ব নীতি কিংবা আভ্যন্তরীণ যুক্তি আছে। জনগণের কাছে অনুরূপ প্রতিদান আশা করার আগে সকল শাসকেরই হিতকর কাজ করে তার ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা উচিত। এই দৃষ্টিকোণে, রাজা আসলে একজন গোমস্তার মতো। যদিও কনফুসিয়াস ব্যাপক গুণপনায় রাজাদের প্রশংসা করেছিলেন, মেনসিয়াস মানব সমাজের সঠিক শ্রেণিবিভাগ পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন। যদিও সাধারণের চাইতে রাজার সম্ভবত উচ্চ পদমর্যাদা আছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি জনসাধারণ এবং সমাজের সম্পত্তির আজ্ঞাবহ। অন্যথায়, ভবিষ্যতে মানবসমাজের শক্তির উহ্য তাচ্ছিল্য ঘটবে। প্রত্যেক মানুষ তার প্রদেয়-এর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, তার গ্রহণীয়-এর জন্য নয়।
মেনসিয়াস ঊর্ধ্বতন এবং অধস্তন মানুষের মধ্যে প্রভেদ করে দেন। যারা ন্যায়পরায়ণতা এবং পরার্থপরতা সদ্গুণ এবং অন্তর্নিহিত শক্তিকে বোঝে এবং অনুসরণ করে তারা উচ্চতর, ঊর্ধ্বতন। আর যারা করে না তারা অধস্তন। উচ্চতর মানুষেরা সবসময় ন্যায়পরায়ণতাকে দেখে, ব্যক্তিগত লাভকে নয়। সাধারণ নশ্বরতাকে তুলে ধরতে এটা স্থায়ী বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।[30] অনগ্রসর এবং প্রবীণদের সুবিধাকে নিশ্চিত করতে তিনি অবাধে বিনা মাশুলে বাণিজ্য, নিম্ন কর হার এবং করের বোঝার সমভাগ গ্রহণ – এগুলো সুপারিশ করেন। [31]
তার কথিত বছর তাকে ঝুন জি, ঝুয়াংজি, গাওজি এবং প্লেটোর সমসাময়িক বলে বর্ণিত করে।
জুন ঝি একজন কনফুসীয়ান ছিলেন। তিনি মনে করতেন মানব চরিত্র স্বার্থ এবং লোভ। নৈতিক চর্চার প্রধান উদ্দেশ্য হলো আমাদের চরিত্রকে সদ্গুণে বিকশিত করা। এই জিনিসটা তাকে মেনসিয়াসের সাথে পৃথক করে। পরবর্তীকালে, চিন্তাবিদ ঝু জি, মেনসিয়াসের অবস্থানকে সমর্থন না করে জিন ঝির মতবাদকে গোঁড়ামিমুক্ত বলে ঘোষণা করেন।
অন্যায্য শাসকের পতন ঘটানো সম্পর্কিত মেনসিয়াসের মতবাদ প্লেটোর রিপাবলিক-এর প্রথম খণ্ডে সক্রেটিস-এর মতবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
মেনসিয়াস কর্তৃক কনফুসিয়াসের মতবাদের ব্যাখ্যাকে পরবর্তীকালের চীনা দার্শনিকরা (বিশেষভাবে সং শাসনামল-এর নব্য-কনফুসীয় দার্শনিকরা) সাধারণত গোঁড়ামিমুক্ত বলে ধরে নিয়েছেন। মেনসিয়াসের শিষ্যদের মধ্যে বিশাল সংখ্যক সামন্ত প্রভুও ছিলেন। কনফুসিয়াসের তুলনায় তাকে বেশি প্রভাবশালী বলে গণ্য করা হয়।[32]
ঝু জি যে চারটি বইকে গোঁড়ামিমুক্ত নব-কনফুসীয় মতবাদের কেন্দ্র বলে গোষ্ঠীভুক্ত করেন তার মধ্যে দ্য “মেনসিয়াস” (মেংজি বা মেংজুও বানান করা হয়) বইটিও আছে। এই বইটি ঐ সময়ের রাজাদের সাথে তার কথোপকথনকে কেন্দ্র করে লেখা। কনফুসিয়াসের স্বল্প এবং চাপা বাণীর তুলনায়, দ্য মেনসিয়াস-এ দীর্ঘ কথোপকথন, যুক্তিতর্কসহ বিস্তৃত গদ্যও রয়েছে। জেসুইট মিশনারি যারা প্রথম কনফুসিয়াসের বক্তব্যকে ল্যাটিনসহ অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় ভাষান্তর করেন তারা সাধারণত বইটিকে অবজ্ঞা করতেন। তারা ধারণা করতেন যে নব্য-কনফুসীয় মতবাদ প্রধানত কনফুসীয় মতবাদ-এর বৌদ্ধ এবং তাওবাদী কলুষে গঠিত। মাত্তেও রিক্কিও বিশেষভাবে মেনসিয়াসের কৌমার্যের দৃঢ় ভর্ৎসনাকে অসন্তানোচিত বলে অপছন্দ করতেন। ফ্রাঙ্কোইস নোয়েল, যিনি ঝুর ধারণাকে কনফুসিয়াসের মতবাদের এক স্বাভাবিক এবং সহজাত বা দেশজ বিকাশ বলে মনে করতেন, তিনিই প্রথম ১৭১১ সালে প্রাগে দ্য মেনসিয়াসের সম্পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশ করেন।[33] যেহেতু চীনা শেষকৃত্য বিতর্ক সম্প্রতি জেসুইটদের বিপক্ষে গিয়েছিল, তার সংস্করণ মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপের বাইরে স্বল্প প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়।
১৯৭৮ সালে, ইতিহাসে প্রভাব সৃষ্টিকারী ১০০ ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা এক বইয়ে তার অবস্থান ৯২তম ছিল।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.