শাক্তধর্ম
হিন্দুধর্মের দেবী-কেন্দ্রিক সম্প্রদায় / From Wikipedia, the free encyclopedia
শাক্তধর্ম বা শাক্ত (সংস্কৃত: शाक्तं) হলো হিন্দুধর্মের একটি শাখা। শাক্তধর্মে দিব্য মাতৃকা শক্তি বা দেবী হলেন পরম ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর। হিন্দুধর্মের প্রধান চারটি শাখার অন্যতম শাক্তধর্ম। অন্য তিনটি শাখা হল বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম ও স্মার্তধর্ম।
শাক্তধর্মমতে, দেবী হলেন পরব্রহ্ম। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। অন্য সকল দেব ও দেবী তার রূপভেদমাত্র। দর্শন ও ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে শাক্তধর্মের সঙ্গে শৈবধর্মের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। যদিও শাক্তরা কেবলমাত্র ব্রহ্মের শক্তিস্বরূপিণী নারীমূর্তিরই পূজা করে থাকেন। এই ধর্মে ব্রহ্মের পুরুষ রূপটি হল শিব। তবে তার স্থান শক্তির পরে এবং তার পূজা সাধারণত সহায়ক অনুষ্ঠান রূপে পালিত হয়ে থাকে।[3]
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ভারতে শক্তিপূজা প্রচলিত। ১৬০০ বছরেরও আগে ভারতের প্যালিওলিথিক জনবসতিতে প্রথম দেবীপূজার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে সিন্ধু সভ্যতার যুগে এই সংস্কৃতি আরও উন্নত রূপে দেখা দেয়। বৈদিক যুগে শক্তিবাদ পূর্বমর্যাদা হারালেও পুনরায় ধ্রুপদী সংস্কৃত যুগে তার পুনরুজ্জীবন ও বিস্তার ঘটে। তাই মনে করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই "হিন্দু ঐতিহ্যের ইতিহাস নারী পুনর্জাগরণের ইতিহাস রূপে লক্ষিত হয়"।[4] বৈদিক যুগেও শক্তিপূজা প্রচলিত ছিল । ঋকবেদের দেবীসূক্ত এবং রাত্রিসুক্ত থেকে প্রমাণিত হয় এটি। ঋকবেদে বিশ্বদুর্গা,সিন্ধু দুর্গা, অগ্নি দুর্গা এবং অন্যান্য দেবীর উল্লেখ আছে। সংখ্যায়ন গৃহ্যসূত্রে "ভদ্রকালী" নামটি আছে।
শাক্তধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংস্কৃত সাহিত্য ও হিন্দু দর্শনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল শক্তিবাদ তথা তন্ত্র সাধনা। এমনকি আজও জনপ্রিয় হিন্দুধর্মের উপর এই মতবাদের প্রভাব অপরিসীম। ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার বাইরেও বহু অঞ্চলে তান্ত্রিক ও অতান্ত্রিক পদ্ধতি সহ একাধিক পন্থায় শাক্ত ধর্মানুশীলন চলে। যদিও এই ধর্মের বৃহত্তম ও সর্বাধিক প্রচলিত উপসম্প্রদায় হল দক্ষিণ ভারতের শ্রীকুল (ত্রিপুরসুন্দরী বা শ্রী আরাধক সম্প্রদায়) এবং উত্তর ও পূর্ব ভারতের, বিশেষত বঙ্গদেশের কালীকুল । হিন্দু তন্ত্রের মত বৌদ্ধতন্ত্রেও অসংখ্য গ্রন্থ আছে । মূল কল্পতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র নামক দুইখানি প্রাচীনতম বৌদ্ধতন্ত্র যথাক্রমে প্রথম ও তৃতীয় শতাব্দীতে রচিত হয়। চীনদেশীয় ত্রিপিটক এ চীনা ও তিব্বতীয় ভাষায় অনূদিত কয়েকটি গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । জাপানে এক বৌদ্ধ দেবী পূজিতা হন তার নাম সপ্তকোটি বুদ্ধমাতৃকা "কোটিশ্রী। বৌদ্ধ ধর্মের মারিচি দেবীও দশভূজা। তিব্বতি লামাগণ মারিচি দেবীকে উষাদেবীরূপে আবাহন করেন । বৌদ্ধ শাস্ত্র মহাবস্তু তে আছে বুদ্ধদেব যখন মায়ের সাথে কপিলাবস্তু তে আসেন তখন শাক্যবংশের শাক্য বর্ধন মন্দিরে অভয়াদেবীর পূজা করেন। চীনের ক্যান্টন শহরে অবস্থিত বৌদ্ধমন্দিরে একটি শতভুজা দেবী মূর্তি আছে [3]
জৈন ধর্মেও শক্তি বাদের প্রকাশ রয়েছে। রাজপুতানার আবু পাহাড়ে যে বিখ্যাত শ্বেতপ্রস্তর নির্মিত সুবৃহৎ জৈন মন্দির রয়েছে, তার শীর্ষে ষোলটি জৈন দেবদেবীর বিগ্রহ রয়েছে । কাথিয়াবাড়েৱ গিরনার পর্বতে পাষাণ নির্মিত সরস্বতী মূর্তি পাওয়া গেছে। "রত্ন সাগর" নামক জৈন ধর্মগ্রন্থে সরস্বতী দেবীকে "বিশ্বরূপিনী" বলা হয়েছে ।