শিয়া ইসলামের ইতিহাস
ইতিহাসের বিভিন্ন দিক / From Wikipedia, the free encyclopedia
শিয়া ইসলাম বা শিয়াবাদ (আরবি: شيعة, প্রতিবর্ণীকৃত: Shīʿah) হল ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা। শিয়ারা নবী মুহাম্মাদের শিক্ষা এবং তাঁর পরিবার (যাদের আহলে বাইত বলা হয়) বা বংশধরদের (শিয়া ইমামগণ) ধর্মীয় নির্দেশনা মেনে চলে। মুহাম্মাদের বংশধারা শুধু তাঁর মেয়ে ফাতিমা ও চাচাতো ভাই আলীর মাধ্যমে অব্যাহত রয়েছে। এই দম্পতি এবং তাঁদের দুই পুত্র হাসান ও হোসেন হলেন আহলে বাইত ও আহলে কিসার অন্তর্ভুক্ত। এতদনুসারে শিয়া মুসলমানরা মুহম্মদের শিক্ষার পাশাপাশি তাঁর বংশধরদেরও হেদায়তের প্রকৃত উৎস বিবেচনা করে। সুন্নি ইসলামের মতো শিয়া ইসলামও নানান সময় নানান শাখায় বিভক্ত হয়েছে; তথাপি বর্তমানে এদের মধ্যে মাত্র তিনটিরই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী বিদ্যমান এবং প্রত্যেকটির পৃথক গতিপথ রয়েছে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিয়াদের ইতিহাস বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়টি ছিল শিয়াদের উত্থান, যা ৬৩২ সালে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর শুরু হয় এবং ৬৮০ সালে কারবালার যুদ্ধ অবধি অব্যহত থাকে। এই অংশটি আলী, হাসান ও হোসেনের ইমামতের সঙ্গে সমাপতিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায়টি হল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শিয়াদের একটি আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে পৃথকীভবন ও বিভেদ এবং সুন্নি খলিফাদের বিরোধিতা। এই অংশটি কারবালার যুদ্ধের পর থেকে শুরু হয় এবং প্রায় ৯০০ সালের দিকে শিয়া রাষ্ট্রগুলো গঠনের আগ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এই অংশে শিয়া মতবাদ বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৃতীয় পর্যায়টি হল শিয়া রাষ্ট্রগুলোর সময়কাল। প্রথম শিয়া রাষ্ট্র ছিল মাগরেবের ইদ্রিসীয় রাজবংশ (৭৮০–৯৭৪)। পরবর্তীতে ইরানের উত্তরাঞ্চলে মজান্দারনে (তাবারিস্তান) আলবীয় রাজবংশ (৮৬৪–৯২৮) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই রাজবংশগুলো ছিল স্থানীয়, তবে এদের পর দুটি মহান ও শক্তিশালী রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯০৯ সালে ইফ্রিকিয়াতে ফাতিমীয় রাজবংশ গঠিত হয়েছিল এবং ১১৭১ সাল পর্যন্ত মাগরেব, মিশর ও লেভান্তের বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করেছিল। ৯৩০ সালে ইরানের উত্তরে দেলমানে বুঈ রাজবংশের আবির্ভাব ঘটেছিল যারা ১০৪৮ সাল পর্যন্ত ইরান ও ইরাকের মধ্য ও পশ্চিম অংশ শাসন করেছিল। ফলস্বরূপ, ১০ম শতকের মাঝামাঝি থেকে ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়কালকে প্রায়শই ইসলামের “শিয়া শতাব্দী” বলা হয়। ইয়েমেনে সাধারণত জায়েদি শাখার বিভিন্ন রাজবংশের ইমামেরা একটি দিব্যতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ৮৯৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। ইরান, একটি প্রাক্তন সুন্নিগরিষ্ঠ অঞ্চল, ১৬শ ও ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে সফবীয় রাজবংশের অধীনে জোরপূর্বক শিয়া ইসলামে ধর্মান্তরকরণের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। এই প্রক্রিয়াটি আজকের দিনে শিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে জায়েদি ও ইসমাইলি শাখার উপর ইসনা আশারিয়া শাখার আধিপত্যও নিশ্চিত করেছে।[2][3][4][5]